ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রন্থমেলার হিসাব-নিকাশ

প্রকাশিত: ০৮:৪১, ৩ মার্চ ২০২০

গ্রন্থমেলার হিসাব-নিকাশ

২০২০ সালের একুশে গ্রন্থমেলা ২৯ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়। শুরুটা হয়েছিল ২ ফেব্রুয়ারি। ১ তারিখ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের কারণে অমর একুশে গ্রন্থমেলাও ১ দিন পিছিয়ে যায়। ফেব্রুয়ারির বইমেলা মানেই লেখক, প্রকাশক ও পাঠকের এক অনবদ্য মিলনমেলা। লেখকরা যেমন কোন ভাল বই উপহার দিতে সারা বছর নিজেদের ব্যস্ত রাখেন, পাশাপাশি প্রকাশকরা বই বের করার কর্মযোগে নিয়োজিত থাকেন। আর উৎসুক পাঠক অপেক্ষায় থাকে উন্নত মানের পাঠযোগ্য গ্রন্থ হাতের নাগালে পাওয়ার প্রত্যাশায়। সেই বহু কাক্সিক্ষত গ্রন্থমেলা যখন আগমনের বার্তা দেয়, তেমন প্রত্যাশিত সময়টুকু হয় অনেক আনন্দ-আবেগ আর বিনোদনের নানামাত্রিক সম্ভার। লেখক, প্রকাশক আর পাঠক শুধু বই উপহার দেয়া কিংবা পড়ার আনন্দেই তুষ্ট থাকে না, সঙ্গে অর্থনৈতিক যে কর্মযোগ তাও কোনভাবেই হাল্কা করে দেখার সুযোগ নেই। ক্রেতা-বিক্রেতা আর রচয়িতার উপচে পড়া ভিড়ে আর্থিক লেনদেনও এক বিরাট তাৎপর্য বহন করে। একাডেমি জানাচ্ছে, ২৮ দিন গ্রন্থমেলা চলাকালীন বই বিক্রি হয়েছে প্রায়ই ৮২ কোটি টাকার। যা গত বছর ৩০ দিনে হয়েছিল ৮০ কোটি টাকা। অর্থাৎ, এবারের গ্রন্থমেলায় বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে। তবে বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা এ ব্যাপারে ভিন্নমতও পোষণ করেছে। কিছু প্রকাশকদের বই বিক্রির ওপর সন্তোষ প্রকাশ করতেও দেখা যায়। বাজারে এবার নতুন বই এসেছে ৪ হাজার ৯১৯টি। তবে মানসম্পন্ন বইয়ের সংখ্যা মাত্র ৭৫১টি। প্রকাশের দিক থেকে কবিতার বই-ই শীর্ষে, উপন্যাস দ্বিতীয় স্থানে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে জাতির পিতার নিজের লেখা বই ছাড়াও তার ওপর অন্যান্য লেখকের গ্রন্থ ছিল মেলার অন্যতম আকর্ষণ। তবে বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, গ্রন্থমেলায় নতুন বই আসায় পাঠকের যে আগ্রহ আর আনন্দ, তাতে মনে হয় তথ্যপ্রযুক্তির সমৃদ্ধ যুগেও গ্রন্থ পড়ার আবেদন মোটেও কমেনি। গ্রন্থমেলার সম্প্রসারিত পরিধি থেকে শৈল্পিক বলয় তার সঙ্গে অবিচ্ছিন্নভাবে নান্দনিকতার যে চমৎকার আবহÑসবই যেন এক অভিন্ন শিল্পদ্যোতনার মিলন তীর্থ। তার চেয়েও দৃষ্টিনন্দন ছিল বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করা পুরো আয়োজনের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা। বঙ্গবন্ধুর ‘আমার দেখা নয়া চীন’ বইটি পুরো মেলার এক আলোকিত গ্রন্থসম্পদ। বিশিষ্টজনেরা তাকে নিয়ে লিখেছেন ২৬টি বই। ‘আমার দেখা নয়া চীন’ ভ্রমণ কাহিনীমূলক গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত এই বইটির বিক্রিও হয় অনেক বেশি। মেলার ১০ দিনের মধ্যেই প্রথম মুদ্রিত ২০ হাজার কপি শেষ হয়ে যায়। দ্বিতীয়বার আরও দশ হাজার কপিও শেষের পথে। এর বাইরে মানসম্মত বইয়ের সংখ্যার অপ্রতুলতা লক্ষ্য করা যায়। অনেক বেশি সচেতন ও দায়বদ্ধতার প্রয়োজন আছে। নিত্যনতুন জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত হচ্ছে। পাশাপাশি পাঠকের মানও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকছে। সমৃদ্ধ বই বাজারে এলে তার আন্তর্জাতিক মানও সুনিশ্চিত হবে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এই ভাষা দিবসের বইমেলাও বিশ্ব পরিসরের অপার সম্ভাবনাকেও বিবেচনায় রাখবে- এমন প্রত্যাশা জ্ঞানপিপাসু পাঠকের। আগামীতে বহু কাক্সিক্ষত এই আবেদনের অপেক্ষায় উৎসুক থাকবে পাঠক।
×