ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডিজিটাল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৮:৪১, ৩ মার্চ ২০২০

ডিজিটাল বাংলাদেশ

বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে যথার্থ অর্থে একটি আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ইতোমধ্যে এই পথে অনেকটা এগিয়েছে দেশ। বিশেষ করে ব্যাংক-বীমাসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লেনদেনসহ বিল পরিশোধ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে। অন্যদিকে দেশব্যাপী ইন্টারনেট সেবা সম্প্রসারিত হওয়ায় সরকারী কার্যক্রমেও গতি এসেছে যথেষ্ট। প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক অথবা স্থানীয়ভাবে উদ্ভূত কোন সমস্যার সমাধানে সরকারী পর্যায়েও পরিলক্ষিত হয়ে থাকে ডিজিটাল তৎপরতা। সিডর-আইলা-বুলবুলের সময়ে বিস্তীর্ণ উপকূলবাসীর প্রয়োজনীয় সুরক্ষাসহ ত্রাণ তৎপরতা, পাহাড়ী বন্যা ও ঢলে হাওড়বাসীদের নিরাপত্তা সহায়তা সর্বোপরি পার্বত্য অঞ্চলের দুর্গম স্থানে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিলে সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ত্বরিত পদক্ষেপ গ্রহণের একাধিক উদাহরণ মেলে। অধুনা টেলিমেডিসিনও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায়ও ব্যবহৃত হচ্ছে ইন্টারনেটসহ মাল্টিমিডিয়া। দেশব্যাপী ই-টেন্ডার কার্যক্রমও শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকেই। এ সবই ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথ প্রশস্ত করে তুলেছে। অধুনা সচিবালয়সহ সারাদেশে সরকারী আদেশ-নির্দেশ জারি ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শুরু হতে যাচ্ছে ই-ফাইলিং কার্যক্রম। এর অর্থ ব্রিটিশ আমলের নথি সংরক্ষণ ও ফাইল চালাচালির অবসানকল্পে প্রায় সর্বত্রই কাজকর্ম চলবে প্রধানত কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে। সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নÑ একেবারে ওপর থেকে নিচ এবং নিচ থেকে ওপরেÑ সবই পরিচালিত হবে সর্বাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে। ফলে বহুকথিত লালফিতার দৌরাত্ম্যসহ ঘুষ-দুর্নীতি-ভোগান্তির অবসান হবে। সর্বপ্রথম এই কার্যক্রম চালু হচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। ২০২১-এর মধ্যে সকল ক্ষেত্রে দেশের সর্বত্র। এর পাশাপাশি ব্যাংক-বীমার সেবার ক্ষেত্রেও সহজলভ্য হচ্ছে ডিজিটাল সেবা। রাজধানীসহ দেশের অন্তত ২০টি স্থানে ‘ডিজিটাল ব্যাংকিং’ মেলায় এরই প্রতিফলন ঘটেছে। এখন সরকার চাচ্ছে ই-গবর্নমেন্ট চালু করতে জরুরী ভিত্তিতে। অর্থাৎ সরকারী অফিস-আদালতে চিঠি চালাচালি, কাগজপত্র ও নথি সংরক্ষণ, নোট আদান-প্রদান, ওপর-নিচে ফাইল পাঠানো ইত্যাদি কিছুই থাকবে না। লিখিত কাগজপত্র বা চিঠিপত্রের কোন বালাই নেই। বরং সব কার্যক্রমই চলবে ই-ফাইলিং ও ই-প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে। ফলে কমে আসবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, অযথা সময়ক্ষেপণ, তদুপরি ঘুষ-দুর্নীতি, অনিয়ম-অব্যবস্থাÑ দীর্ঘসূত্রতা। এতে স্বভাবতই সরকার ও প্রশাসন হবে আরও গতিশীল, আরও উন্নত, তদুপরি আধুনিক ও যুগোপযোগী। বহির্বিশ্ব বিশেষ করে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগও অপেক্ষাকৃত সহজসাধ্য হবে। তবে এ কথাও ঠিক যে, হয়ত এ মুহূর্তে সব সরকারী অফিস-আদালতেই ই-গবর্নমেন্ট চালু করা সম্ভব হবে না। কেননা, এর জন্য চাই দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল। সিনিয়র ও মধ্যম শ্রেণীর অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী এর উপযোগী নন। তাদের জন্য দ্রুত শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টারে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরি প্রস্তুত করতে হবে সর্বস্তরের জনসাধারণকেও ই-সেবা গ্রহণে। জাতীয় সংসদে পরিবেশিত এক তথ্যে জানা যায়, ২০২১ সাল নাগাদ দেশে আইসিটি সেক্টরে ২০ লাখ তরুণ-তরুণী কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো, দেশে একটি তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলা। এর জন্য তথ্যপ্রযুক্তি-জ্ঞান-বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক বিশ্বে হাত গুটিয়ে বসে থাকার অবকাশ নেই। ডিজিটাল বাংলাদেশ যথার্থ অর্থে গড়ে তুলতে হলে আইসিটি সেক্টরের ব্যাপক উন্নয়ন ও বিকাশ ছাড়া গত্যন্তর নেই।
×