ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

বদলে যাচ্ছে ব্যাংকিং সেবা, সহজ হচ্ছে ব্যক্তিগত লেনদেন

প্রকাশিত: ১১:১৬, ১ মার্চ ২০২০

বদলে যাচ্ছে ব্যাংকিং সেবা, সহজ হচ্ছে ব্যক্তিগত লেনদেন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ইন্টারনেট ব্যাংকিং, কার্ড সেবা ও মোবাইল ব্যাংকিং এ তিন মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে যে কোন ব্যাংকে টাকা পাঠানো, পরিষেবা মাসুল, টিকেট কেনা, স্কুল বেতন, প্রতি মাসের কিস্তির টাকা দেয়াসহ সব ধরনের ব্যক্তিগত লেনদেন করা যাচ্ছে। আর কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকিং তো রয়েছেই যে কোন সময়ের নগদ টাকার চাহিদা মেটাতে। এসব সেবার নিরাপত্তা বাড়াতে দিনে দিনে যুক্ত হয়েছে আঙ্গুল ও চোখের মাধ্যমে গ্রাহক যাচাই, কিউআর কোড, ব্লক চেইনসহ নানা প্রযুক্তি। শনিবার পাঁচটি ইসলামী ব্যাংকের আয়োজনে ‘ডিজিটাল ব্যাংকিং’ মেলায় এসব দিক তুলে ধরা হয়। কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশে (আইডিইবি) মেলার উদ্বোধন করেন ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ নাজমুল হাসান। এছাড়া দেশের ২০টি স্থানে একযোগে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজক ব্যাংকগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক। জানা গেছে, শুধু ইন্টারনেট বা ই-ব্যাংকিং সেবায় গত ডিসেম্বরে গ্রাহক ছিল ২৬ লাখ ৪০ হাজার। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যাংকগুলো গ্রাহককে নিজের সুবিধামতো এক এ্যাকাউন্ট থেকে অন্য এ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তরের সুযোগ করে দিয়েছে। ইএফটিএনের মাধ্যমেও ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন গ্রাহক। ডেসকো, ওয়াসা, ডিপিডিসির মতো সংস্থার বিল ঘরে বসেই পরিশোধ করা যায়। মোবাইলে টকটাইম ও ইন্টারনেট প্যাকেজ কেনা যায়। বিভিন্ন ব্যাংক তাদের কিছু সেবা নিয়ে মোবাইল এ্যাপ চালু করেছে। অনলাইন কেনাকাটায় ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকিয়ের ব্যবহার বাড়ছে। বছরজুড়ে নানা রকম ছাড় ও অফারের কারণে ডিজিটাল এই পেমেন্ট ব্যবস্থায় ঝুঁকছে মানুষ। তবে বর্তমানে কেনাকাটার ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে ক্রেডিট কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকিং। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, বর্তমানে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক প্রায় এক কোটি ৮৬ লাখ। এর মধ্যে ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক সাড়ে ১৪ লাখ। আর মোবাইল ব্যাংকিয়ের গ্রাহক সাত কোটি ৮৫ লাখ। বেসরকারী খাতের ব্যাংকগুলো এসব সেবায় এগিয়ে রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, কেনাকাটাকে সহজ ও নিরাপদ করতে ডেবিট- ক্রেডিট কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কোন বিকল্প নেই। কারণ নগদ অর্থ বহন করা গ্রাহকের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। নগদ লেনদেনের মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের ঝুঁকিও বেশি। এসব কারণে কার্ডভিত্তিক লেনদেন বাড়াতে চাইছে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে কার্ড ব্যবসায় জোর দিচ্ছে ব্যাংকগুলোও। প্লাস্টিক মানির লেনদেন বাড়াতে ডেবিট কার্ডের পাশাপাশি গ্রাহকদের জন্য ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়। এই ক্রেডিট কার্ডের কল্যাণে মানুষ এখন টাকা না থাকলেও তার পছন্দের জিনিসটি কিনতে পারছে। গ্রাহক আকর্ষণ করতে এ কার্ডে বছরজুড়ে নানা রকম মূল্য ছাড় ও ক্যাশব্যাক সুবিধা দেয়া হয়। কেনাকাটা থেকে শুরু করে বিমানভাড়া, হোটেল বুকিং ও রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়ায় সবকিছুতেই মেলে নানা ছাড় ও পয়েন্ট জেতার সুযোগ। তবে ডেবিট কার্ডের গ্রাহকদের তুলনায় ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহকরাই এসব সুবিধা বেশি পান। বর্তমানে দেশের ২১টি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম করার অনুমোদন পেয়েছে। এর মধ্যে ১৯টি ব্যাংক মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। এসব ব্যাংকের ছয় হাজার ১৩ জন এজেন্ট সারাদেশে আট হাজার ৬৭১ এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট পরিচালনা করছে। এছাড়া দেশে রীতিমতো মোবাইল ব্যাংকিং বিপ্লব ঘটে গেছে। শনিবার পাঁচটি ইসলামী ব্যাংকের আয়োজনে ‘ডিজিটাল ব্যাংকিং’ মেলায় গ্রাহক ও দর্শনার্থীদের সামনে বিভিন্ন ব্যাংকের প্রোডাক্টস ও সেবা সম্পর্কে বিস্তারিত এসব তথ্য তুলে ধরেন কর্মকর্তারা। তাৎক্ষণিকভাবে ডিজিটাল ব্যাংকিং-এর বিভিন্ন এ্যাপে রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করা হয়। ডিজিটাল ব্যাংকিং মেলার অন্য ভেন্যুগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকার খিলগাঁও গার্লস হাইস্কুল, মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়াম, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গুলশান, ক্ষুদে প-িতের পাঠশালা, ওয়ারী, টিএ্যান্ডটি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, মতিঝিল ও মাহবুব ইনস্টিটিউট, শাহজাহানপুর। এছাড়া চট্টগ্রামের চিটাগং ক্লাব, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন ভবন, খুলনা পাবলিক হল, বরিশাল বিএম কলেজ, রংপুর টাউন হল, কুমিল্লা টাউন হল, বগুড়া শহীদ তিতু অডিটোরিয়াম, কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরি মাঠ, মুন্সীগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমি, যশোরের হোটেল ওরিয়ন ইন্টারন্যাশনাল, সিলেট মোহাম্মদ আলী জিমনেসিয়াম, নোয়াখালী জিলা স্কুল মাঠ এবং ময়মনসিংহ ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারে এ মেলার আয়োজন করা হয়। প্রধান অতিথির বক্তব্যে নাজমুল হাসান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ব্যাংকিং খাতকে ডিজিটাল করার জন্য ইসলামী ব্যাংকগুলোর রয়েছে অগ্রণী ভূমিকা। আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কাজের এ ধারাকে আরও ত্বরান্বিত করতে এ ডিজিটাল ব্যাংকিং মেলা আয়োজন করা হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের সকল মানুষের কাছে প্রযুক্তিভিত্তিক আধুনিক ব্যাংকিং সেবা পৌঁছানোর জন্য নিরলস কাজ করতে তিনি ব্যাংক কর্মকর্তাদের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, সময়ের চাহিদা পূরণে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রাহকদের জন্য নতুন নতুন প্রোডাক্ট ও সার্ভিস চালু করেছে ইসলামী ব্যাংকগুলো। ডিজিটাল প্রযুক্তি সমৃদ্ধ উন্নত ব্যাংকিং সেবা গ্রহণের জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান। ইসলামী ব্যাংকের এডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর মুহাম্মদ কায়সার আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক ডাঃ তানভীর আহমেদ, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের এডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর কাজী তাওহীদুল আলম ও এনআরবি গ্øোবাল ব্যাংকের এডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী। স্বাগত বক্তব্য দেন ইসলামী ব্যংকের ঢাকা সেন্ট্রাল জোন প্রধান মোঃ আলতাফ হুসাইন।
×