ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হারানো অস্তিত্ব ফিরে পাচ্ছে ‘সোনাদীঘি’

প্রকাশিত: ০৭:৪৬, ২৫ জানুয়ারি ২০২০

 হারানো অস্তিত্ব ফিরে  পাচ্ছে ‘সোনাদীঘি’

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ ‘সোনাদীঘি’ রাজশাহী নগরীর প্রাণকেন্দ্রে ঐতিহ্যবাহী একটি দীঘি। প্রায় এক শ’ বছর আগে ১৯২১ সালে রাজশাহীর মানুষের সুপেয় পানির সংস্থানের জন্য খনন করা হয়েছিল এটি। শতবর্ষী এই দীঘিটি রাজশাহীর ইতিহাস ঐতিহ্যকে লালন করে। এ দীঘিকে ঘিরেই সম্প্রসারিত রাজশাহী। তবে দিনে দিনে এটি আর সেই অবস্থায় নেই। এককালের স্বচ্ছ পানির দীঘি এখন পরিণত হয়েছে আবর্জনার স্তুপে। সঙ্গে দখল প্রক্রিয়া। তবে দীর্ঘদিন হলেও এবার এই সোনাদীঘির অস্তিত্ব রক্ষার কাজ শুরু করেছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক)। ইতোমধ্যে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে সোনাদিঘীর পাশ ঘেঁষে গড়ে উঠা মার্কেট। অপসারণ করা হয়েছে অবৈধ স্থাপনাও। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, সোনাদীঘিকে এখন অন্তত তিনদিক থেকে দেখা যাবে। দীঘিকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হবে পায়ে হাঁটার পথসহ মসজিদ, এমফি থিয়েটার (উন্মুক্ত মঞ্চ) ও তথ্যপ্রযুক্তি পাঠাগার। চলতি বছরই এই কাজ শুরু হওয়ার কথা। রাসিকের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক জানান, বুলডোজার দিয়ে ইতোমধ্যে দীঘির পাড়ের দোকানপাট ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। চলতি বছরেই সোনাদীঘি সংস্কারের কাজ শুরু হবে। সংস্কার শেষ হলে আগের মতোই রূপ নিবে বিনোদন কেন্দ্রে। প্রবীণ সাংবাদিক সফিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, একটা সময় ছিল বিকেলটা কেটেছে সোনাদীঘির পাড়ের বেঞ্চে বসে। এটিই ছিল নগরের একটি বিনোদনকেন্দ্র। দীঘির পানি ছিল স্বচ্ছ- টলটলে। আশপাশের মানুষেরা এই পুকুরের পানিতে দৈনন্দিন কাজও সেরেছেন। এর পাশ দিয়ে ছিল পামগাছ ও বসার জন্য বেঞ্চ। ২০০৯ সালে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন ‘এনা প্রপার্টিজ’ নামের একটি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পুরোনো নগর ভবনের জায়গায় ১৬ তলাবিশিষ্ট ‘সিটি সেন্টার’ নির্মাণের চুক্তি করে। সেই চুক্তির আওতায় দীঘিকে নতুন করে সাজানোর কথা ছিল। তিন বছরে এই কাজ শেষ করার কথা থাকলেও বাস্তবায়ন হয়নি। অবশেষে ১০ বছর পর দীঘির চারপাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু হয়েছে। এখন এ দীঘি হয়ে উঠবে নগরীর আরেক বিনোদন কেন্দ্রে। রাজশাহীর প্রবীণরা জানান, একটা সময় এই সোনাদীঘি পাড় ছিল মানুষের বসে আড্ডা দেবার মতো একটি স্থান। কিন্তু ১৯৯০ সালের পর থেকেই এর চিত্রপট পাল্টাতে থাকে। চারপাশ ঘিরে গড়ে উঠতে শুরু করে স্থাপনা। এক পর্যায়ে ঢাকা পড়ে যায় ঐতিহ্যবাহী সোনাদীঘির কোলাহল। সোনাদীঘিটি শুধু নামেই থাকে। তবে ২০০৮ সালে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন মেয়র হওয়ার পর সোনাদীঘিকে দৃশ্যমান করার উদ্যোগ নেন। যার অংশ হিসেবে গড়ে উঠছে সিটি সেন্টার। আর দীঘির চারপাশ আরও মোহনীয় করার জন্য তৈরি হয়েছে পরিকল্পনা। সোনাদীঘির অস্তিত্ব রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করছে রাজশাহীর বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। সোনাদীঘির অস্তিত্ব রক্ষার দাবিতে সেচ্চার ছিলেন তারা। একই দাবিতে সোচ্চার হন নগরবাসীও। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও রাজশাহীর ঐতিহ্য রক্ষায় একাত্মতা প্রকাশ করে মাঠে নামেন। অবশেষে রাসিকের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের উদ্যোগে হারানো রূপের চেয়ে আরও আধুনিক হতে চলেছে সোনাদীঘি। জানা গেছে, ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) মেয়র হিসেবে প্রথমবার দায়িত্ব নিয়ে নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত সোনাদীঘি সংস্কারের উদ্যোগ নেন মেয়র এইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। সোনাদীঘিকে ঘিরে অত্যাধুনিক কিছু পরিকল্পনার ঘোষণাও করা হয়। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এবার সোনাদীঘির অস্তিত্ব উদ্ধারে কাজ শুরু করেছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন। রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী সোনাদীঘি রক্ষা ও দখল মুক্ত করতে হবে। এককালের সোনাদীঘি এখন নোংরা আবর্জনা ও বালু ভরাট করে হত্যা করা হয়েছে। জামাত খান বলেন, সোনাদীঘি রক্ষার জন্য রাজশাহীর মানুষ দীর্ঘদিন ধরে অনেক সোচ্চার। এটি মানুষের প্রাণের দাবি। তিনি অবিলম্বে সোনাদীঘিকে তার আসল রূপ ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান। রাসিক সূত্র জানায়, সোনাদীঘি ঘিরে রাসিকের যে পরিকল্পনা তা শুধু দীঘিটিকেই না, পুরো বাজার এলাকার চিত্রই পাল্টে দেবে। দর্শনার্থীদের পাশাপাশি পুরো বাজার এলাকার ব্যবসায়ীরাও এর সুফল ভোগ করবেন। এই দীঘির চারপার্শে পর্যাপ্ত বসার জায়গা রাখা হবে। পরিবার নিয়ে মানুষ সেখানে বসবে। উপভোগ করবে স্বচ্ছ পানির জলাধার। রাতে আলোকায়ন থাকবে। থাকবে ফোয়ারা। পুরো দীঘিটি হবে বিনোদন কেন্দ্র। দীঘির পূর্বের রাস্তাটি হবে যানজট মুক্ত; শুধুমাত্র পায়ে হাটা রাস্তা হবে সেটি। দীঘি সংলগ্ন এলাকাটি যেহেতু রাজশাহীর প্রধান বাজার হিসেবে পরিচিত, সে কারণে বাজারে আসা মানুষ যেমন বাজারের পাশাপাশি এই স্থানটি উপভোগ করতে পারবেন। ঠিক তেমনি দীঘিতে ঘুরতে আসা মানুষ বাজারের কাজও একসঙ্গে সেরে বাড়ি ফিরতে পারবেন।
×