ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

নেতিবাচক মন্তব্য করছেন নেতারা

সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে আন্দোলনের ক্ষেত্র তৈরি করছে বিএনপি!

প্রকাশিত: ১১:০৬, ১৮ জানুয়ারি ২০২০

  সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে আন্দোলনের ক্ষেত্র তৈরি করছে বিএনপি!

শরীফুল ইসলাম ॥ ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্র তৈরি করছে বিএনপি। তারা হারলেও আন্দোলন করবে, জিতলেও করবে। আর এ কারণেই এ নির্বাচন সামনে রেখে সরকার ও নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে যতরকম নেতিবাচক মন্তব্য আছে তা করে যাচ্ছেন দলটির সিনিয়র নেতারা। সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার পর থেকে দুই বছর শত চেষ্টা করেও রাজপথে আন্দোলন শুরু করতে পারেনি। তাই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর তারা আন্দোলনকে টার্গেট করে এ নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আর এ কারণেই বিএনপি মহাসচিবসহ দলের সিনিয়র নেতারা কথায় কথায় বলছে তাদের দল আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরও বিএনপি রাজপথে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু সর্বস্তরের দলের নেতাকর্মীরা আন্দোলনে সায় না দেয়ায় তখন তারা ব্যর্থ হয়। তবে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর যেন আন্দোলন শুরু করা যায় সে জন্য আগে থেকেই দলের নেতাকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। আর আন্দোলন করতে হলে এ নির্বাচনকে ইস্যু করতে হবে মনে করে ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বিএনপি। সূত্র মতে, আন্দোলনের টার্গেট নিয়ে নির্বাচনের অনেক আগেই সুষ্ঠু ভোট হবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে সরকার, নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনেছে বিএনপি। এ ছাড়া দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে কোন এলাকায় কি কি অনিয়ম হচ্ছে তা জানার জন্য ঢাকা মহানগরের প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড নেতাদের সবকিছু নোট রেখে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে লিখিত রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে। আবার কেন্দ্র থেকেও দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে গঠিত একটি টিম সবকিছু মনিটর করছে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিলেও দলের বর্তমান নাজুক পরিস্থিতিতে এ নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারবে বলে মনে করছে না বিএনপি। আর এ জন্যই দলটির সিনিয়র নেতারা বলছে আন্দোলন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে তারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। এ নির্বাচনে ভোট কারচুপির আগাম অভিযোগও করছে তারা। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রতিদিনই কোন না কোন অভিযোগ করছে। বিশেষ করে ইভিএমে ভোট হলে ব্যাপক কারচুপি হবে বলেও তারা আগাম অভিযোগ করছে। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি সমমনা দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করার পাশাপাশি তাদের নতুন করে কাছে টানার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়কসহ বেশ ক’টি দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। নির্বাচনী প্রচার এক সঙ্গে করার পাশাপাশি ভোট কারচুপি হলে যেন দ্রুত একসঙ্গে আন্দোলন কর্মসূচী পালন করা যায় সে প্রস্তুতিও নিয়ে রাখছে তারা। এ ছাড়া বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় করছে। মতবিনিময়ের সময় দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করার আহ্বানের পাশাপাশি নির্বাচনের পর আন্দোলনের বিষয়টিকেও আলোচনায় আনা হচ্ছে। সিটি নির্বাচনের পর কি ধরনের আন্দোলন কর্মসূচী দেয়া যেতে পারে এ নিয়েও ভেতরে ভেতরে বিএনপি নেতাদের মধ্যে আলোচনা চলছে। জানা যায়, এ নির্বাচনে বিএনপি জিতলে এক ধরনের এবং হারলে আরেক ধরনের আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ বিষয়ে বিএনপির কিছু নেতা দলীয় হাইকমান্ডকে জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজপথে আন্দোলন কর্মসূচী পালন করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম হলে এবং এর প্রতিবাদে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচী দিলে দলের নেতাকর্মীরা এতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেবে এবং সাধারণ মানুষও এ আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকবে। তাই এ ধরনের আন্দোলনে রাজনৈতিকভাবে বিএনপি লাভবান হবে। আর বিএনপি নির্বাচনে জিতলে এ নির্বাচনের ত্রুটিগুলোকে সামনে এনে ভবিষ্যতে যেন সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা হয় সে জন্য এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলন কর্মসূচী পালন করবে। সিটি নির্বাচনে জিতলেও আন্দোলনের কথা যেসব বিএনপি নেতারা বলছেন, তাদের যুক্তি হচ্ছে, দলের অবস্থা ভাল না থাকায় এখন অনেকেই আন্দোলনে শরিক হতে চায় না। তবে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী হলে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা হবে। তাই তারা আন্দোলনে অংশ নিতেও সাহস পাবে। এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। এ নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা দেখতে চাই জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় কি না। এ নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই। এ নির্বাচনে ভোট কারচুপি হলে সর্বস্তরের জনতাকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর আন্দোলন হবে। জানা যায়, আসন্ন দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের পর রাজপথে আন্দোলন শুরু করার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতাদের ওপর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রবল চাপ রয়েছে। তাই তার নির্দেশমতে এ নির্বাচনে হেরে গেলেও আন্দোলন করতে হবে এবং বিজয়ী হলেও আন্দোলন করতে হবে। নির্বাচনে কোন অনিয়ম হলে তাকে ইস্যু করে এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন করার জন্য তারেক রহমান ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এদিকে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর যাতে রাজধানীসহ সারাদেশে রাজপথের আন্দোলন জোরদার করা যায় সে জন্য তারেক রহমান লন্ডন থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে দলের সর্বস্তরের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। বিশেষ করে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবকদলসহ বিএনপির ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে লন্ডন থেকে তারেক রহমান নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যে কোন মূল্যে রাজপথে আন্দোলন চাঙ্গা করে বিএনপিকে নির্বাচনে বিজয়ের জন্য প্রস্তুত করতে চায় দলের হাইকমান্ড। আর আগেভাগে শুরু করতে না পারলে শেষ দিকে গিয়ে আর সুবিধা করা যাবে না সেটা ভেবেই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর থেকেই আন্দোলন শুরু করতে চায় তারা। এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেয়া হচ্ছে। এবার আন্দোলন শুরু হলে যাতে বিএনপিকে নেতিবাচক পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে না হয় সে জন্য দল সমর্থিত বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গেও কথা বলছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে পেশাজীবীদের নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন বিএনপি মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতারা। এ সময় লন্ডন থেকে স্কাইপিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও পেশাজীবীদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে এ সময় পেশাজীবীরা তারেক রহমানকে জানান, আন্দোলন করতে হলে আগে দলের নেতাদের ঠিক করতে হবে। আন্দোলনকালে ত্যাগী নেতাকর্মীদের রাজপথে বিপদের মুখে রেখে দলের সিনিয়র নেতারা যাতে নিজেদের রক্ষা করতে ঘরে বসে না থাকে সে নিশ্চয়তা আগে দিতে হবে। তা না হলে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যেভাবে আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছিল সে অবস্থার পুনরাবৃত্তি হবে। তাই বিএনপিকে আগে আটঘাট বেঁধে আন্দোলনে নামতে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা জনকণ্ঠকে বলেন, বিএনপি এখন থেকেই আন্দোলনমুখী হতে চায়। আর এ জন্যই আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে ইস্যু করে রাজপথের আন্দোলন এগিয়ে নিতে চায় দলীয় হাইকমান্ড। তবে দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট কারচুপি করে বিএনপিকে হারিয়ে দিলে এক ধরনের আন্দোলন, আর সুষ্ঠু নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হলে আরেক ধরনের আন্দোলন হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলকে শক্তিশালী অবস্থানে নিতে চাইলে এখন থেকেই আন্দোলন শুরু করতে হবে। এ জন্য সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আন্দোলন শুরুর পর আস্তে আস্তে বেগবান করা হবে।
×