ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মসংস্থানে গুরুত্ব

প্রকাশিত: ০৯:২৫, ১৬ জানুয়ারি ২০২০

কর্মসংস্থানে গুরুত্ব

রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়ন এবং মুজিবর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে সরকার আসন্ন বাজেটের আকার-আয়তন বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর জন্য ২৪ জানুয়ারির মধ্যে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নিজ নিজ বাজেট প্রস্তুত করে তা বাজেট অনুবিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৮৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রাক্কলন করা হয়েছে, যা চলতি বছরের চেয়ে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বেশি। প্রাক্কলিত বাজেটে সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা হবে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের ওপর। এর জন্য ঋণের বিপরীতে সিঙ্গেল ডিজিট সুদহারও বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার। এর বাইরে রেমিটেন্সের টাকা বিনিয়োগের লক্ষ্যে গৃহীত হতে পারে বিশেষ পলিসি। ২০৩০ সালের মধ্যে তিন কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। উল্লেখ্য, কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে চলতি বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা, যা ব্যবহৃত হচ্ছে নানাবিধ কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ সৃষ্টিতে। বর্তমান সরকার কয়েক বছর ধরেই দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সরকারী বিনিয়োগের পাশাপাশি বেসরকারী বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে ছাড়া হয়েছে বাংলা বন্ড। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং দিল্লী ইকোনমিক সামিট, জাতিসংঘসহ বিশ্বের যেখানে যখনই রাষ্ট্রীয় সফরে যাচ্ছেন, একদল ব্যবসায়ী তথা বিনিয়োগকারীকে সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে বিদেশে সফরকালীন স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাশাপাশি বিদেশী চেম্বার সদস্যদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। তবু বাস্তবতা এই যে, সরকারের বহুমুখী আন্তরিক প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ সত্ত্বেও কাক্সিক্ষত মাত্রায় বিদেশী বিনিয়োগ আসছে না। দেশীয় বিনিয়োগও হচ্ছে না তেমন। দেশে বিনিয়োগের বাধা তথা অন্তরায় হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে বেশ কয়েকটি বিষয়। ব্যবসায়ের খরচ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ ব্যাংক ঋণের উচ্চসুদের হার। শিল্প ঋণে সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার বাস্তবায়িত হলে বিনিয়োগ বাড়তে পারে। পাশাপাশি সহজে ব্যবসা করার সূচক বর্তমানের ১৬৮তম অবস্থান থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ১০০তম করতে ইচ্ছুক সরকার। দেশে তাহলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আসবে, শিল্প কারখানা স্থাপনসহ কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি কমে আসবে ঋণ খেলাপীর সংখ্যাও। সরকার এটি বাস্তবায়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ। বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিনিয়োগ মুনাফা বা ঋণের সুদ সিঙ্গেল ডিজিট বা এক অঙ্কে নামিয়ে আনলে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। নতুন উদ্যোক্তা তৈরির পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, শিল্পঋণের বিপরীতে উদ্যোক্তাদের বর্তমানে সুদ গুনতে হচ্ছে ১৪ থেকে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত। এ ছাড়া ঋণ নেয়ার সময় প্রক্রিয়াকরণ ফিসসহ আরও যেসব ফি নেয়া হয়, তাতে এ হার ২০-২২ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে। কোন কোন ব্যাংকের বিরুদ্ধে আরও বেশি সুদ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণের বিপরীতে সুদ বা বিনিয়োগের মুনাফার হার নমনীয়-সহনীয় হওয়া মানেই তা হবে ব্যবসাবান্ধব। এসব সমস্যার সমাধান করতে পারলে ব্যাংক ঋণের ওপর সুদের হার কমানো সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের পক্ষেই সম্ভব হবে। পাশাপাশি বিনিয়োগে নিয়ে আসতে হবে প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ। দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়ায় বৈধ চ্যানেলে রেমিটেন্সের পরিমাণ বেড়েছে ইতোমধ্যে। সবিশেষ জোর দিতে হবে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত মানব সম্পদ সৃষ্টির ওপর।
×