ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

জারিফ এ আলম

প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা

প্রকাশিত: ০৯:২৫, ৯ জানুয়ারি ২০২০

প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা

মানুষের সহজাত প্রবৃত্তির মধ্যে একটি হলো স্বাধীনচেতা মনোভাব। এটা মানুষের স্বাধীনতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর এই মনোভাব কিংবা স্বাধীনতাকে বাস্তবে রূপ দিতে তাকে বিভিন্ন সময় এর জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। তার এই সত্তার মূল্য দিতে দেশে দেশে যুগে যুগে অনেক মনীষীর জন্ম হয়েছে। যাঁরা এসব মানুষের চিন্তা আদর্শ ত্যাগ স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে গেছেন গোটা জীবন। আর সেই আদর্শিক মানুষ হিসেবে চে গুয়েভারা, মার্টিন লুথার কিং ও নেলসন ম্যান্ডেলা এঁদের নাম করতে পারি। তেমনি বাঙালী জাতির স্বপ্নকে বাস্তবায়ন আর সেই স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করতে যিনি অগ্রণী হয়ে আছেন তিনি শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর চিন্তা আদর্শ আমাদের ভবিষ্যতের অনুপ্রেরণা। তিনি বাঙালী জাতিকে সামনে থেকে স্বাধীনতার জন্য নেতৃত্ব দিয়েছেন। এর জন্য তাঁকে নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। জেল-জুলুমও তাঁর পিছু ছাড়েনি। তবু তিনি বাঙালী জাতির মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করে গেছেন সারাটি জীবন। আর তাই তিনি জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু, রাজনীতির কবি (চড়বঃ ড়ভ ঢ়ড়ষরঃরপং) বিভিন্ন অভিধায় ভূষিত হয়েছেন। আর এসব স্বীকৃতি তাঁর কাজের পরিধি ও উচ্চতাকে বুঝতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শতবর্ষ পূর্তি হতে চলেছে এ বছর। সময় হিসাব করলে এক শতাব্দী প্রলম্বিত সময়ই বলা চলে। আর এই বৃহৎ সময়ে রাজনীতি অঙ্গনে ঘটে গেছে অনেক যুগান্তকারী বিপ্লব। ১৯৭১ সালে বাঙালী জাতি একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছে। প্রাণ দিয়েছে ৩০ লাখ মানুষ। সম্ভ্রম হারিয়েছে ২ লক্ষাধিক মা-বোন। এসবের বিনিময় হিসেবে একটি স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি আমরা। আর এই স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজ আমরা জাতি হিসেবে গর্বিত। আমাদের অর্জিত এই স্বাধীনতা স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে। নতুন উদ্যমে। নতুন লক্ষ্যে। আমাদের অপ্রাপ্তিগুলো যেন প্রাপ্তির খাতায় যোগ হয়। আর আমাদের প্রত্যাশা হোক চিন্তায় রুচিশীলতায় একটি আদর্শিক রাষ্ট্র। এমন প্রত্যাশা আধুনিক বাংলাদেশের স্বাভাবিক বিষয় এখন। বঙ্গবন্ধু দেশকে নিয়ে যে-রকম অসাম্প্রদায়িক ও ন্যায়ের শাসনের স্বপ্ন দেখেছিলেন সে-স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে কাজ করে যেতে হবে যার যার কর্মক্ষেত্রে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়েও অনেক অশুভ শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। সে অশুভ শক্তি দমনে ভূমিকা পালন করেছিল এ দেশেরই মানুষ। আর তাদের কল্যাণে তাদের নিরাপত্তা প্রদানে তাদের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনায় এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে। শুধু স্বপ্ন নয়, স্বপ্নকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিয়োজিত হবে, কাজ করতে হবে প্রত্যেককে। কোন মহান ব্যক্তির আদর্শকে টিকিয়ে রাখার মাধ্যমে সেই ব্যক্তিকে প্রকৃত সম্মান দেখানো হয়। যার ফলস্বরূপ ব্যক্তির চিন্তাচেতনা মানুষকে আলোর পথ দেখায়, আশার কথা শোনায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও ছিলেন তেমনি একজন মানুষ যাঁর জীবনদর্শন ছিল জাতির কল্যাণের স্বার্থে মঙ্গলের স্বার্থে। মুজিববর্ষ পালনের মধ্য দিয়ে যেন সব দায়-দায়িত্ব শেষ না হয়ে যায়; এ লক্ষ্যে সবাইকে কাজ করে যেতে হবে, তবেই সফলতার বীজ মহীরুহতে পরিণত হবে। স্বপ্ন-আকাক্সক্ষা-প্রাপ্তি-প্রত্যাশার ঝুলি ভরে উঠুক সফলতায়; মানুষের সামগ্রিক কল্যাণে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
×