ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাবির ছাত্রী লাঞ্ছিত

প্রকাশিত: ০৯:২১, ৯ জানুয়ারি ২০২০

ঢাবির ছাত্রী লাঞ্ছিত

নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধির আশঙ্কা আজ দৃষ্টিকটুভাবে দৃশ্যমান। নির্যাতনের সংখ্যা বাড়ার তথ্য-উপাত্তও উঠে এসেছে সংবাদ মাধ্যমে। প্রতিনিয়তই উন্মত্ত পাশবিকতার নির্মম যাঁতাকলে পিষ্ট অর্ধাংশ নারী গোষ্ঠী আতঙ্কিতই শুধু নয়, নিরাপত্তাহীনতায়ও আবর্তিত হচ্ছে। ২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত নারী নির্যাতনের পরিসংখ্যান যাই আসুক না কেন বিচারিক ব্যবস্থায় তেমন অগ্রগতি আজও দৃশ্যমান নয়। রূপা হত্যা ও ধর্ষণ মামলার আসামিদের সর্বোচ্চ শান্তির রায় আদালতের পক্ষ থেকে দেয়া হলেও তার কার্যকারিতা এখন অবধি সুদূরপরাহত। ২০১৮ সালে নূসরাত হত্যা মামলার অভিযুক্তদেরও মৃত্যুদ- দেয়া হয়। তারপরে বিচার বিভাগের দীর্ঘসূত্রতা ও জটিলতায় আসামিরা কবে যে প্রাপ্ত দণ্ডভোগ করবে, তেমন নিশ্চয়তা সময়ের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। আর তনু, মিতু হত্যার বিচার তো আজ অবধি আদালত পর্যন্ত গড়ায়নি। তারও আগের গণমাধ্যম দম্পতি সাগর-রুনির মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের আসামিরা আজ পর্যন্ত লোকচক্ষুর অন্তরালে। বিচারহীনতা ও দীর্ঘসূত্রতার এমন অপসংস্কৃতি অপরাধীদের কতখানি উস্কে দেয় তাও সবার জানা। আর আইন-আদালত দিয়ে ক্ষমার অযোগ্য এসব অপরাধের বিচার সম্পন্ন করা গেলেও শুধু তা দিয়ে হত্যা, খুন, জখম এবং ধর্ষণের মতো জঘন্য অন্যায়কে প্রতিরোধ করা কতখানি সম্ভব, তাও বিবেচনা সাপেক্ষ। মানুষের প্রতি মর্যাদা আর সম্মানবোধ ভেতরে থেকে উৎসারিত না হলে অন্যায় ও অপরাধকে ঠেকানো সত্যিই অসম্ভব। ৫ নবেম্বর রবিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী বাসে করে কুর্মিটোলা হাসপাতালের সামনে নামার পরপরই কতিপয় দুর্বৃত্তের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার খবর সারাদেশকে আবারও প্রতিবাদ-প্রতিরোধে উত্তাল করে তুলেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আন্দোলনে, বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে। উপাচার্য ছাত্রীকে ঢাকা মেডিক্যালে দেখতে গিয়ে আশ্বস্ত করেন, আমরা সবাই তার সঙ্গে আছি। কোন সান্ত¡নাই মেয়েটি ও তার অভিভাবদের জন্য যথেষ্ট নয়। বলা হচ্ছে অপরাধীরা যতই প্রভাব-প্রতিপত্তিশালী হোক না কেন বিচারিক আদালতে সামান্যতম ছাড়ও তাদের দেয়া হবে না। সব ধরনের ইতিবাচক বক্তব্যকে আমলে নিয়েও কি বলা যাবেÑ মেয়েটি ভবিষ্যতে কোন এক সময় দুর্বিপাক থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে? নারীকে অপমান আর অসম্মান করার যে অমানবিক মনোবিকার সেখান থেকে সুস্থ, স্বাভাবিক মানবিক বিকাশের যথার্থ সম্ভাবনা কি আদৌ আছে? তা না হলে বার বার ঘটে যাওয়া এমন সব অশুভ ন্যক্কারজনক কর্মকা- নতুন করে কিভাবে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে? সারাদেশের ছাত্রী, তরুণীসহ অসংখ্য নারীর আর্তনাদÑআর কতজনকে এভাবে নৃশংসতার বলি হতে হবে? কিংবা পরের জনই বা কে? অসহায় এবং আকুল আর্তচিৎকারে মেয়েরা আর কত নিজেদের অনিরাপত্তার বলয়ে আবদ্ধ রাখবে? এমন প্রশ্নের উত্তর কারও পক্ষেই দেয়া সম্ভব নয়। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা জোর তদন্তে নেমেছে অপরাধীদের শনাক্ত করতে। দু’একজন ধরাও পড়েছে। কুর্মিটোলার যে স্থানটি থেকে মেয়েটিকে মুখ বেঁধে তুলে নেয়া হয় সেটা নাকি অপরাধের অভয়ারণ্য। মোটরবাইক চুরি হওয়া থেকে শুরু করে হরেক রকম অপরাধের জায়গা এটি। তারপরেও আশপাশে কোন নিরাপত্তা বলয় ছিল না। পুলিশী কার্যক্রমও প্রায় অনুপস্থিত। মেয়ে মানেই তো সমাজের অসহায়, দুর্বল একটি অংশ। আর তাদের জন্য তো এমন পরিস্থিতি প্রায় সর্বক্ষণ ওঁৎ পেতে থাকে। জানি না মানুষের মধ্যে কখন মানবিক মূল্যবোধ জাগবে, যাতে তারা হিংস্র হায়েনার রূপ নিতে ব্যর্থ হবে!
×