ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়ান টাইম প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ হাইকোর্টের

প্রকাশিত: ১১:৫৭, ৭ জানুয়ারি ২০২০

ওয়ান টাইম প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ হাইকোর্টের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের সকল উপকূলীয় অঞ্চল ও হোটেল- মোটেল-রেস্টুরেন্টে আগামী এক বছরের মধ্যে ওয়ানটাইম (একবার ব্যবহারযোগ্য) প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে পলিথিন ও পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে বিদ্যমান আইনী নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে কার্যকরের জন্য সরকারকে বাজার তদারকি, পলিথিন উৎপাদনকারী যন্ত্রপাতি জব্দ ও কারখানা বন্ধেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ সোমবার রুলসহ এ আদেশ প্রদান করে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও সাঈদ আহমদ কবির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ। হাইকোর্টের এ আদেশের পর এ্যাডভোকেট রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে পলিথিন ব্যাগ ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সামগ্রীর দৌরাত্ম্য মারাত্মকভাবে বেড়ে চলেছে। এগুলো আমাদের ভূমির উর্বরতা কমাচ্ছে, বায়ূ দূষণ ঘটাচ্ছে এবং সমুদ্রের জলজ উদ্ভিদ ও প্রতিবেশকে মারাত্মক হুমকির মধ্যে ফেলছে। ফলে প্লাস্টিকের উৎপাদন এবং ব্যবহার কমাতে হবে। পরিবেশ সচিব, শিল্প সচিব, বাণিজ্য সচিব, পানিসম্পদ সচিব, বেসামরিক ও পর্যটন সচিব, বস্ত্র ও পাট সচিব, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদক ও রফতানিকারক এ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদালত দেশব্যাপী নিয়মিত বাজার পর্যবেক্ষণ, কারখানা বন্ধ এবং যন্ত্রপাতি জব্দকরণের মাধ্যমে পলিথিন/প্লাস্টিক ব্যাগের ওপর বিদ্যমান আইনী নিষেধাজ্ঞা পূর্ণ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে। আদালত আগামী এক বছরের মধ্যে দেশের সকল হোটেল, মোটেল এবং রেস্তরাঁয় একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে ও সকল উপকূলীয় অঞ্চলে পলিথিন/প্লাস্টিকের ব্যাগ বহন, বিক্রয়, ব্যবহার, বিপণন এবং আগামী এক বছরের মধ্যে নিষিদ্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ আগামী ৫ জানুয়ারি, ২০২১ সালের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতিসহ (বেলা) মোট ১১টি সমমনা সংস্থা কর্তৃক দায়েরকৃত এক জনস্বার্থমূলক মামলার (নং-১৪৯৪১/২০১৯) প্রাথমিক শুনানি অন্তে এ রুল ও অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ জারি করে আদালত। রিট আবেদনকারীগণ শুনানিতে উল্লেখ করেন যে পরিবেশ অধিদফতরের জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি বছর ১০,৯৫,০০০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এনভায়রনমেন্ট এ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) জরিপ অনুযায়ী বার্ষিক ৮৭,০০০ টন একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বাংলাদেশে ব্যবহৃত হয়। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক-এর গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী পদ্মা নদীর মাধ্যমে প্রায় ৩০০ ধরনের প্লাস্টিক পণ্য বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচীর প্রতিবেদন অনুযায়ী পদ্মা, মেঘনা এবং যমুনা নদীর মাধ্যমে প্রায় ৭৩,০০০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় বঙ্গোপসাগরে মাছের পেটে এবং লবণের মধ্যে ক্ষুদ্র প্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে যা প্রাণিকুল ছাড়াও মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক সামগ্রী নিয়ন্ত্রণ ও রোধে বিভিন্ন আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও বাংলাদেশ এ বিষয়ে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। সে প্রেক্ষিতেই রিট মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলার বিবাদীগণ- সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়; শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়; পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়; বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়; বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়; মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদফতর; চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ প্লাস্টিকদ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক এ্যাসোসিয়েশন। মামলার বাদীগণ- বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), ঢাকা; এনভায়রনমেন্ট এ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো), ঢাকা; পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), ঢাকা; ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়ুথ), কক্সবাজার; সেভ দ্য কোস্টাল পিপলস্ (স্কোপ), বরিশাল; রিচ টু আন রিচ (রান), বরিশাল; বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (বেডস), খুলনা; ইনিশিয়েটিভ ফর রাইটভিউ (আইআরভি), বরিশাল; এ্যাসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট (এসিডি), রাজশাহী; সেল্ফ হেল্প এ্যান্ড এডভান্সড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (শ্যাডো), রংপুর; সিলেট ও সেবা ফাউন্ডেশন, ময়মনসিংহ।
×