স্টাফ রিপোর্টার ॥ এখনও নির্বাচনী প্রচার শুরু হয়নি। প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়নি। এর আগেই রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে একে অন্যের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের লিখিত অভিযোগ দায়ের শুরু করেছেন প্রার্থীরা। শনিবার ঢাকা উত্তরের আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মোঃ আতিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বিএনপির তাবিথ আউয়াল। তার অভিযোগ গুলশান এক নম্বর পার্কে মঞ্চ করে সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তার দলের কাউন্সিলর প্রার্থীদের হুমকি, গ্রেফতার ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের চাপ এবং হয়রানির বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা এই হুমকি ও চাপ প্রয়োগ করছেন। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা এই অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।
শনিবার বিকেলে ঢাকা উত্তর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাশেমের কাছে তাবিথ এম আউয়াল লিখিত অভিযোগ জানান। তার পক্ষে এই অভিযোগটি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দাখিল করেন, জুলহাস উদ্দিন নামের একজন। এতে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোঃ আতিকুলের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনেন।
লিখিত অভিযোগে তাবিথ আউয়াল বলেন, শনিবার সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আতিকুল ইসলাম গুলশান পার্কে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে একটি নির্বাচনী মঞ্চ করে, মাইক এবং সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করে নিজের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেন। কর্মীদের ভোটারের কাছে যাওয়ার জন্য দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। যা সিটি কর্পোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ এর স্পষ্ট লঙ্ঘন ও গর্হিত অপরাধ। নির্বাচন কমিশন আমাদের আশ্বাস দিয়েছিল যে নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড বিদ্যমান থাকবে এবং নির্বাচন আচরণবিধি সকল প্রার্থীর জন্য সমভাবে প্রয়োগ করা হবে এবং তা তদারকির জন্য মাঠ পর্যায়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন থাকবে।
চিঠিতে তিনি আরও বলেন, আইন ভঙ্গ করলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা কোন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এই বিধিমালা লঙ্ঘনকারী প্রার্থীকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টাও করেননি। তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা না নিলে এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন কখনই জনগণের আস্থা অর্জন করবে না।
অভিযোগ দাখিলের পর জুলহাস উদ্দিন পরে সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আতিকুল ইসলাম শনিবার সকালে গুলশান-১ পার্কে নির্বাচনী মঞ্চ করে মাইক এবং সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। এ বিষয়ে বিএনপি প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের পক্ষ থেকে আমরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমরা অভিযোগের সপক্ষে কিছু স্থিরচিত্র সংযোজন করেছি।
অভিযোগ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাশেম বলেন, আমরা কিছুক্ষণ আগে বিএনপি প্রার্থীর পক্ষ থেকে অভিযোগটি পেয়েছি। ওই এলাকায় ম্যাজিস্ট্রেট যিনি আছেন আমি তার কাছে এটি পাঠাব, সেটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলব। প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে শনিবার দুপুরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল বাতেনের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। সেখানে তিনি বলেন, প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার সহায়তায় বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা চাপ দিচ্ছেন। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) যুগ্মসচিব ও রিটার্নিং অফিসার আবদুল বাতেন বিএনপির মেয়রপ্রার্থীর লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করেন। অভিযোগের বিষয়ে ইশরাক হোসেন রিটার্নিং অফিসারকে বলেন, আমাদের কাউন্সিলর প্রার্থীরা হুমকি, গ্রেফতার এবং নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এজন্য আপনার কাছে আমরা লিখিত অভিযোগ জানাতে এসেছি। উত্তরে রিটার্নিং অফিসার আবদুল বাতেন বলেন, আপনাদের অভিযোগ আমরা গ্রহণ করলাম এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব। তিনি পুরোনো মামলায় কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নতুন করে ব্যবস্থা না নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানান। বলেন, অনেক আগের মামলা পুনরুজ্জীবিত করে এখন কোন আদেশ বা ব্যবস্থা নেয়া হলে তা অনাকাক্সিক্ষত হবে। তবে ফৌজদারি মামলা হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাবে।
ইশরাক হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার সহায়তায় বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের চাপ দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা। এ বিষয়ে রিটার্নিং অফিসারকে লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছি। তবে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও কে বা কারা হুমকি দিয়েছে তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেননি মেয়র প্রার্থী ইশরাক।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: