ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

পাসের হার ৮৭ দশমিক ৯০ শতাংশ, ৭৮ হাজার ৪২৯ জন জিপিএ-৫

জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার ফলে আবার সাফল্য

প্রকাশিত: ১১:০৪, ১ জানুয়ারি ২০২০

জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার ফলে আবার সাফল্য

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পাসের হার ও সর্বোচ্চ স্কোর জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধিসহ ফলের সব সূচকেই এবার সাফল্য দেখিয়েছে অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা। চতুর্থ বিষয়ের নম্বর বাদ দিয়ে নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতি কার্যকরে গত বছর হঠাৎ করে ফল খারাপ হলেও এবার অষ্টম শ্রেণীর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা আবার সাফল্য দেখিয়েছে। গত বছর পাসের হার ছিল ৮৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ, এবার ৮৭ দশমিক ৯০ শতাংশ। জিপিএ-৫ গত বছর ছিল ৬৮ হাজার ৯৫ জন, এবার ১০ হাজার ৩৩৪ জন বেড়ে হয়েছে ৭৮ হ্জাার ৪২৯ জন। কমেছে শূন্য পাস করা করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা, আর বেড়েছে শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষামন্ত্রী ডাক্তার দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী মঙ্গলবার সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফলের পরিসংখ্যান তুলে দেন। পরে দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী পরীক্ষার বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইন, আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুঃ জিয়াউল হক ও অন্য শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান। সংবাদ সম্মেলনের পরই সারাদেশের শিক্ষার্থী নিজ নিজ কেন্দ্র ও স্কুল থেকে ফল জানতে পারে। ফল জানা যায়, ইমেল, ওয়েবসাইট, মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়েও। শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট (যঃঃঢ়://িি.িবফঁপধঃরড়হনড়ধৎফৎবংঁষঃং.মড়া.নফ) এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকেও জেএসসি ও জেডিসির ফল জানা যায়। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ই-মেলেও জেএসসি ও জেডিসির ফলের সফটকপি পাঠায় শিক্ষা বোর্ড। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা বোর্ডের পাঠানো ট্রান্সক্রিপ্ট নিতে পারবে শিক্ষার্থীরা। জেএসসিতে পাসের হারে শীর্ষে এবারও বরিশাল, জিপিএতে ঢাকা ॥ জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় (জেএসসি) নয় বোর্ডে গত বছরের মতো এবারও পাসের হার সবচেয়ে বেশি বরিশালে। সবচেয়ে বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছে ঢাকা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। বরিশাল বোর্ডে সবচেয়ে বেশি ৯৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ, ঢাকা বোর্ডে সবচেয়ে কম ৮২ দশমিক ৭২ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। তবে মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে জেডিসিতে এবার ৮৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। শত ভাগ পাস শত ভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠান ॥ এবার শত ভাগ পাস করেছে দেশের পাঁচ হাজার ২৪৩টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। গত বছর ছিল চার হাজার ৭৬৯টি। শত ভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এক হাজার ৮৪৩টিই মাদ্রাসা। সাধারণ ৯ বোর্ডে শত ভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠান তিন হাজার ৪০০টি। গত বছর ছিল তিন হাজার ৪২টি। অন্যদিকে শত ভাগ ফেল করা মোট প্রতিষ্ঠান ৩৩টি। গত বছর ছিল ৪৩টি। ৯ বোর্ডে শত ভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠান ১৪টি। গত বছর ছিল ২০টি। এবার মাদ্রাসায় শত ভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠান ১৯টি। গত বছর ছিল ২৩টি। জিপিএ-৫ মাথা থেকে বের করা উচিত ॥ পাবলিক পরীক্ষাসহ সমাপনী পরীক্ষাগুলোর ফলে জিপিএ-৫ প্রাপ্তি নিয়ে মাতামাতি না করে শিক্ষার্থীদের প্রতিভা বিকশিত করতে সরকারকে সহযোগিতা করা উচিত বলে মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। আগামী বছর থেকে অষ্টমের সমাপনী পরীক্ষার ফল ৫ ভিত্তিক জিপিএর বদলে ৪ ভিত্তিক জিপিএতে দেয়া শুরু করা যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। বলেন, আমরা বলেছিলাম এ বছর কার্যকর করতে পারি কি না, কিন্তু মনে হল এবার করতে গেলে অনেক বেশি তাড়াহুড়ো হবে, তাড়াহুড়ো করে একটা জিনিস পরিবর্তন করা- এটা বোধহয় সমীচীন হবে না। আমরা পুরোটাই বিশ্লেষণ করে দেখে আগামী বছর থেকে শুরু করব বলে আশা করছি। পাবলিক পরীক্ষা ছাড়া সমাপনী পরীক্ষাগুলোতে পুরো গ্রেডিং সিস্টেমটা তুলে দিয়ে কীভাবে মূল্যায়ন করতে পারি সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীও দিক নির্দেশনা দিয়েছেন, সেটি নিয়ে আমরা কাজ করছি। সংবাদ সম্মেলনে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে দীপু মনি বলেন, আমার মনে হয় আমরা যত কম জিপিএ-৫ নিয়ে কথা বলি তত আমাদের শিক্ষার্থী ও শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য ভাল। আমাদের জিপিএ-৫ এর উন্মাদনা এটি দিয়ে আমরা আমাদের শিশুদের, শিক্ষার্থীদের পুরো শিক্ষা জীবনটাকে একেবারে নিরানন্দময় তো করছিই, তার সঙ্গে বিষিয়ে দিচ্ছি প্রায়। তাদের ওপর যে অবিশ্বাস্য রকমের চাপ, পরিবারের দিক থেকে, বন্ধু-বান্ধবের দিক থেকে, জিপিএ-৫ই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হতে পারে না। দীপু মনি আরও বলেন, জিপিএ-৫ জিনিসটা আসলে আমাদের মাথা থেকে বের করে দেয়া উচিত। শিক্ষার্থীরা আনন্দের সঙ্গে শিখছে কি না, তাদের নিজেদের যে প্রতিভা আছে সেটি বিকশিত করার ক্ষেত্রে আমরা তাদের সহযোগিতা করতে পারছি কি না, এই বিষয়গুলোই এখন মুখ্য হওয়া উচিত। পরীক্ষার বিষয় কমানোর প্রসঙ্গ তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা কিছু বিষয় এখন ধারাবাহিক মূল্যায়নে নিয়ে এসেছি। এক সময় ধারাবাহিক মুল্যায়নে বাচ্চারা সে কাজগুলো না করেই নম্বর যুক্ত হয়ে যেত, এ রকমই বলা হত। এখন আর তার কোন সুযোগ থাকছে না। ফল পুনর্নিরীক্ষার আবেদন যেভাবে ॥ আজ ১ জানুয়ারি থেকে ৭ জানুয়ারির মধ্যে খাতা পুনর্নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করতে হবে। শুধু টেলিটক প্রি-পেইড মোবাইল ফোন থেকে এ আবেদন করা যাবে। মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস বিষয় কোড লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসে আবেদন বাবদ কত টাকা কেটে নেয়া হবে তা জানিয়ে একটি পিন নম্বর দেয়া হবে। পিন কোড নম্বরটি সংগ্রহ করতে হবে। আবেদনে সম্মত থাকলে আবারও মেসেজ অপশনে গিয়ে # লিখে স্পেস ণবং লিখে স্পেস দিয়ে পিন নম্বর দিয়ে স্পেস মোবাইল নম্বর (যে কোন অপারেটর) লিখে আবার ১৬২২২ তে পাঠাতে হবে। প্রতি পত্রের জন্য ১২৫ টাকা চার্জ ধরা হয়েছে। একটি এসএমএস দিয়ে একাধিক বিষয়ে আবেদন করা যাবে। সেক্ষেত্রে বিষয় কোডের পর কমা (,) ব্যবহার করতে হবে। তবে যেসব বিষয়ের দু’টি পত্র (বাংলা ও ইংরেজী) রয়েছে সেসব বিষয়ে একটি বিষয় কোড বাংলার জন্য (১০১) ও ইংরেজীর জন্য (১০৭) এর বিপরীতে দু’টি পত্রের জন্য আবেদন গণ্য হবে এবং আবেদন ফি হবে ২৫০ টাকা।
×