ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

মাহবুব তালুকদার ব্যর্থতার কথা বলে আত্মপ্রবঞ্চনা করেছেন ॥ তথ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১১:১৩, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯

মাহবুব তালুকদার ব্যর্থতার কথা বলে আত্মপ্রবঞ্চনা করেছেন ॥ তথ্যমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার যে কথাগুলো বলেছেন, আমি মনে করি একথাগুলো বলার আগে তার পদত্যাগ করা প্রয়োজন ছিল। কারণ তিনি তার যে সমস্ত ব্যর্থতার কথা বলেছেন, এগুলো স্বপদে থেকে বললে আত্মপ্রবঞ্চনা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীতে সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত মতবিনিময়কালে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী একথা বলেন। হাছান বলেন, মাহবুব তালুকদারের উচিত ছিল কমিশন থেকে পদত্যাগ করে তারপর ওই কথাগুলো বলা। কারণ তিনি তার ব্যর্থতার কথা বা যেসব কথা বলেছেন, এগুলো পদে থেকে বললে আত্মপ্রবঞ্চনা হয়। এগুলো পদত্যাগ করে বললেই বরং সমীচীন হয়। সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন হলেও নির্বাচনী প্রক্রিয়ার কারণে ইসি অনেকটাই অসহায় বলে মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন মাহবুব তালুকদার। বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া সংস্কারের পক্ষে মত দিয়ে তিনি বলেন, কেন নির্বাচন নিরপেক্ষ, শুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য হয় না? এ প্রশ্নের উত্তর আত্মজিজ্ঞাসার কারণেই আমাকে খুঁজতে হয়েছে। আমার নিজের অভিজ্ঞতা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন আইনত স্বাধীন, কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে সেই স্বাধীনতা নির্বাচন প্রক্রিয়ার কাছে বন্দী। এজন্য নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার প্রয়োজন। এ বিষয়ে হাছান মাহমুদের ভাষ্য, আওয়ামী লীগের দাবির প্রেক্ষিতে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার এবং নির্বাচন কমিশনের অনেক সংস্কার হয়েছে। ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার দাবি ছিল, সেই দাবির প্রেক্ষিতেই ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা হয়েছে। নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, সেটি যুগের প্রয়োজনে, সময়ের প্রয়োজনে যে কোন সময় হতে পারে। মাহবুব তালুকদার নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন বৈঠকে দ্বিমত পোষণ করলেও তাতে কমিশনের স্বাভাবিক অবস্থা নষ্ট হয় না বলেই মনে করে হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, তিনি (মাহবুব তালুকদার) বিভিন্ন সময় এ ধরনের কথা বলে আলোচনায় থেকেছেন, এ ধরনের দ্বিমত পোষণ করে আলোচনায় থাকার চেষ্টা করেছেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, এক সময় আমাদের দেশে হাত তুলে ভোট দেয়া হতো। পরে সেই ভোট ব্যালটের মাধ্যমে এবং সেই সঙ্গে এখন ইভিএম মেশিনে দেয়া হচ্ছে। এগুলো নির্বাচন প্রক্রিয়া সংস্কারের একটি চলমান প্রক্রিয়া। মাহবুব তালুকদারের বক্তব্যে কমিশনের স্বাভাবিক অবস্থান নষ্ট হবে কিনা- সে প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান বলেন, আমি মনেকরি না এতে কমিশনের স্বাভাবিক অবস্থা নষ্ট হয়। কারণ মাহবুব তালুকদার সাহেব বিভিন্ন সময় এ ধরনের কথা বলে আলোচনায় থেকেছেন, তিনি এ ধরনের দ্বিমত পোষণ করে আলোচনা থাকার চেষ্টা করেছেন, সেটিই প্রতীয়মান হয়। বিএনপির অভিযোগ গৎবাঁধা নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না জেনেও বিএনপি প্রার্থিতা ঘোষণা করবে- বিএনপি মহাসচিবের এ বক্তব্যের প্রতি সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রথমত বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণার জন্য তাদের স্বাগত জানাই। আমরা সরকার গঠন করার পর বাংলাদেশে অতীতে যে সমস্ত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হয়েছে, সবই সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে। সেগুলো যদি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ না হতো তাহলে আমরা কয়েকটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে পরাজিত হতাম না এবং বিএনপি অনেক ক্ষেত্রে জয়ী হতো না। এই নির্বাচনও সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে বলে আমার বিশ্বাস। নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত নিরপেক্ষভাবে এবং স্বাধীনভাবে কাজ করছে। সেই কারণে দেখা গেছে যে, অনেক নির্বাচনে আমরা পরাজিত হয়েছি। সুতরাং বিএনপির অভিযোগগুলো গৎবাঁধা ও বরাবরের অভিযোগ। ঐক্যফ্রন্টের বক্তব্য নিজের সঙ্গে প্রতারণা ‘ঐক্যফ্রন্ট ৩০ তারিখে কালো দিবস পালন করবে এবং সরকারের পদত্যাগ ও জাতীয় সরকার গঠনের দাবিতে দৃশ্যমান কর্মসূচী নেবে’- এ বিষয়ের প্রতি মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্ট জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল এবং অনেকেই বিজয়ী হয়েছেন, এমপি হিসেবে শপথ গ্রহণও করেছেন, সমস্ত সুযোগ-সুবিধাও তারা পাচ্ছেন। সুতরাং যে নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করে অনেক ক্ষেত্রে জয়লাভ করেছেন, সেই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসলে নিজের বিবেকের সঙ্গেই তারা প্রতারণা করছেন বলে প্রতীয়মান হয়। বাংলাদেশে যদি গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন না হতো, অনেকেই যেটি চেয়েছিল, তাহলে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকত না। বরং ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের যাত্রাকে সংঘত করেছে, অব্যাহত রেখেছে। বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুললে মন্ত্রী বলেন, তারা তো গত নির্বাচনের আগে থেকেই আন্দোলনের মধ্যে আছে। বেগম খালেদা জিয়া ২০১৫ সালে যে অবরোধ ডেকেছিলেন, সেই অবরোধ কিন্তু এখনও প্রত্যাহার করেননি। তারা আন্দোলনের মধ্যেই আছেন। তাদের আন্দোলনের নমুুনা আমরা দেখেছি। তাদের পূর্ণশক্তি-সমর্থন সম্পর্কে জনগণ জানে। তারা এ ধরনের ফাঁকা আওয়াজ সব সময় করে আসছে। এটিও ফাঁকা আওয়াজ ছাড়া অন্য কিছু নয়।
×