স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে দেশীয় ভাল আবাসন ব্যবসায়ীদের ইমারত নির্মাণের কাজ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। দেশের আবাসন প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিলে তাদের দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা যাবে। সবাই মিলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যেই এসব পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে যিনি সততার সঙ্গে ভাল কাজ করবেন, তার জন্য সবকিছু করা হবে ও দুর্নীতি ও অনিয়মের ন্যূনতম স্পর্শ যার সঙ্গে থাকবে তার প্রতি কোন প্রকার সহানুভূতি দেখানো হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রিহ্যাব আয়োজিত শীতকালীন আবাসন মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গৃহায়নমন্ত্রী এসব কথা বলেন। রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সহ-সভাপতি প্রকৌশলী সোহেল রানা ও লিয়াকত আলী ভূঁইয়া। অনুষ্ঠানশেষে মন্ত্রী পাঁচ দিনব্যাপী এই শীতকালীন আবাসন মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন ও বিভিন্ন স্টলের কি কি সুবিধা দেয়া হচ্ছে তার খোঁজখবর নেন।
গৃহায়নমন্ত্রী বলেন, সরকার সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করতে চায়। সরকারী প্রকল্পে বিদেশী বিনিয়োগের পাশাপাশি ভাল দেশী আবাসন ব্যবসায়ীদের ইমারত নির্মাণের কাজ দেয়ার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। কারণ দেশের আবাসন প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিলে তাদের দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা থাকবে। ঢাকার তুরাগ পাড় ও কেরানীগঞ্জে স্যাটেলাইট সিটি ‘ঝিলমিল’ সম্প্রসারণ, পূর্বাচল এবং উত্তরা তৃতীয় পর্ব প্রকল্পে ফ্ল্যাট নির্মাণের ক্ষেত্রে দেশের ব্যবসায়ীরা যাতে বিনিয়োগ করতে পারেন, আমরা তার ব্যবস্থা করব।
মন্ত্রী বলেন, ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত জাতির পিতার নেতৃত্বের বাংলাদেশে জনগণ ভোগান্তির শিকার হবেন, আর ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিরা লুটে-পুটে খাবে, এটা শেখ হাসিনা সরকার হতে দেবে না। মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পরিষ্কার নির্দেশ সেবাকে সহজীকরণ করতে হবে। দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় টেবিলে টেবিলে অনাকাক্সিক্ষত চাহিদা মেটানোর প্রবণতা দূর করার জন্য আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। নক্সা অনুমোদনে ১৬ স্তরে যেতে হতো। সেবা সহজীকরণের জন্য, রিহ্যাব, স্থাপত্য বিভাগ, নগর বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সভা করে বারো স্তর বাদ দিয়ে এখন মাত্র চার স্তর রেখেছি। এই চার স্তরেও হয়রানির অভিযোগ দূর করতে অটোমেশন পদ্ধতি চালু করেছি। ভূমির ছাড়পত্রের জন্য আগে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতো, ভোগান্তির শিকার হতে হতো, উৎকোচ দিতে হতোÑ আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভূমির ছাড়পত্র, আমমোক্তারনামা ও নামজারির বিধান করে দিয়েছি। বলে দিয়েছি যার টেবিলে কাজ আটকে থাকবে তাকে কঠিন শাস্তির মুখে পড়তে হবে।
রিহ্যাব সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, অবকাঠামো উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় রিহ্যাবের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনাদের রেজিস্ট্রেশন সমস্যা থাকবে না। টেন্ডারে অংশগ্রহণের জটিলতা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিতে এনেছি। পিপিআর সংশোধন নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন কাজ করছে। এসব সমস্যা দূর হলে নতুন ব্যবসায়ীরা অংশ নিতে পারবেন। যারা সততার সঙ্গে আইন মেনে ব্যবসা করেন, অসাধু আবাসন ব্যবসায়ীরা তাদের সুনাম নষ্ট করছে। সাইবোর্ড ও বিজ্ঞাপনসর্বস্ব ব্যবসায়ীরা স্বল্প আয়ের মানুষ বা প্রবাসীদের কষ্টার্জিত আয়ের টাকা নিয়ে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। এরা রিহ্যাবের সৎ ব্যবসায়ীদের ভাবমূর্তি ধ্বংস করে দিচ্ছে। এদের বিষয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে রিহ্যাব মানুষকে সতর্ক করতে পারে। সরকারের একার পক্ষে সবকিছু দেখভাল করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে সম্মিলিতভাবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঈপ্সিত লক্ষ্যে আমরা পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। দুর্নীতি অনিয়ম স্বজনপ্রীতি সন্ত্রাস মাদক থেকে জাতিকে বের করে আনতে আমরা চেষ্টা করছি। বাংলাদেশে এখনও যদি অনিয়ম দুর্নীতি দূর করতে না পারি, তাহলে আমরা কবে এগিয়ে যাব। যদিও মাথাপিছু গড়আয়, গড়আয়ু, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, সামাজিক সূচক, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী অন্ন বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা চিকিৎসা প্রভৃতি ক্ষেত্রে পৃথিবী এখন বাংলাদেশকে বলছে উন্নয়নের রোল মডেল। পূর্তমন্ত্রী বলেন, অন্যায়ভাবে অপরের জায়গা দখলের প্রবণতা ভুলে যেতে হবে। জালিয়াতি করে টাকা নেয়ার প্রবণতা ভুলতে হবে। ঘুষ দুর্নীতি ও কাজে ফাঁকি দেবার প্রবণতা ভুলতে হবে। আসুন সবাই মিলে উন্নত সমৃদ্ধ ও আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের অগ্রযাত্রায় শামিল হই।
