ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

দায়সারাভাবে ঘাঘট নদী খনন ॥ হুমকির মুখে সেতু

প্রকাশিত: ০৯:২৩, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯

 দায়সারাভাবে ঘাঘট নদী খনন ॥ হুমকির মুখে সেতু

নিজস্ব সংবাদদাতা, ২২ ডিসেম্বর, গাইবান্ধা ॥ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষা করে নদী খননের নামে শ্যালো মেশিন দিয়ে ভূ-গর্ভস্থ বালু উত্তোলন করে দায়সারা নদী পুনর্খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও রংপুরের মিঠাপুকুরের মধ্যবর্তী সিমানা দিয়ে বয়ে চলা ঘাঘট নদী এভাবেই খনন করছে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। দরপত্রে ড্রেজার ব্যবহারের কথা থাকলেও তার কোন ব্যবহার নেই খনন কাজে। ফলে নদীর ওপর নির্মিত চরকাবাড়ি ব্রিজ, এলজিইডির সড়ক ও আশপাশের গ্রাম হুমকির মুখে পড়েছে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ ও রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার মধ্যবর্তী সিমানা দিয়ে প্রবাহমান ঘাঘট নদীর চরকাবাড়ি ব্রিজের উজানে ও ভাটিতে ২ হাজার মিটার পুনর্খনন কাজ শুরু করেছে রংপুর পাউবো। প্রায় ২ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে মোঃ ইউনুস এ্যান্ড ব্রাদার্স নামক চট্টগ্রামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু দরপত্র অনুযায়ী ড্রেজার ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও তা না মেনেই শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে খনন করছে প্রতিষ্ঠানটি। নক্সা অনুযায়ী নদীর দু’ধারে ১৫ মিটার পাড় নির্মাণ, ৩০ মিটার করে সেøাভ নির্মাণ ও ২০ মিটার নদীর তলদেশ খনন করা হবে। তবে প্রকল্পটিতে ড্রেজিং কাজের জন্য ড্রেজার মেশিন দিয়ে খনন কাজ বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক হলেও তা করা হচ্ছে না। শ্যালো মেশিন দিয়ে ভূ-গর্ভস্থ অবৈধ বালু উত্তোলনের কাজ করা হচ্ছে। এমনকি আধা কিলোমিটারের মধ্যে ছয়টি শ্যালো মেশিন লাগিয়ে ভূ-গর্ভস্থ বালু উত্তোলন করে দায়সারা নদী খনন কাজ করছে পাউবো ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। আর খনন করা পলিমাটি ও বালুগুলো ফেলা হচ্ছে নদীর কাছেই। বর্ষা মৌসুম আসলে এসব মাটি বৃষ্টির ঢলে আবারও নদী নেমে গিয়ে ভরাট হবে। এতে একদিকে যেমন সরকারের কোটি টাকা নদীর পানিতে ভেসে যাবে, অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আশপাশের ফসলি জমি, ব্রিজ, রাস্তা-ঘাট ও পার্শ্ববর্তী গ্রাম। নদী নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো বলছে, শ্যালো মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করলে তা হবে অপরিকল্পিত নদী খনন। যা নদীর নাব্য ফেরার পরিবর্তে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে। ফলে চারপাশ থেকে বালুর স্তর ভেঙ্গে এসে তলদেশ ভরাট হয়ে যাবে। এমনকি বন্যার সময় নদীর স্রোত বেঁকে গিয়ে অন্যদিকে ভাঙ্গন সৃষ্টি করতে পারে বলেও ধারণা তাদের। বিপর্যয় রোধে প্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগ করে নদীর পুনর্খনন কাজ বাস্তবায়ন করার দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী। নদী বাঁচাও দেশ বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক সাদেকুল ইসলাম দুলাল বলেন, নদী পুনর্খনন কাজে সরকারী যে নির্দেশনা দেয়া আছে তা মানতে হবে। অন্যথায় শ্যালো মেশিন দিয়ে নদী ড্রেজিং কাজ করলে তা পরবর্তীতে ক্ষতির কারণ হবে। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী তবিবুর রহমান বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য হলে নদী খনন করা তা ড্রেজার হোক বা শ্যালো মেশিন। ড্রেজার ব্যবহার না করে শ্যালো মেশিন ব্যবহার করা নিয়ম বহির্ভূত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘাঘট নদীতে ড্রেজার মেশিন প্রবেশ করার কোন উপায় না থাকায় শ্যালো মেশিন দিয়েই খনন কাজ করা হচ্ছে।
×