ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফজলে হাসান আবেদ

প্রকাশিত: ০৯:০৬, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯

 ফজলে হাসান আবেদ

ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও ইমেরিটাস চেয়ার স্যার ফজলে হাসান আবেদ শুক্রবার রাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান। বাংলাদেশের ব্র্যাককে সারা বিশ্বে পরিচিত, সবচেয়ে বড় ও সম্মানিত এনজিও হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের তৃণমূলের মানুষের সেবা করতে গিয়ে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা করেন ফজলে হাসান আবেদ। মাত্র এক লাখ কর্মী নিয়ে শুধু বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর ১১টি দেশের ১২০ মিলিয়ন মানুষকে বিভিন্ন সেবা দিয়ে চলেছে ব্র্যাক। তিনি মানুষ হিসেবে ছিলেন উদ্যমী, দারুণ সফল ও স্বপ্নদ্রষ্টা। স্যার ফজলে হাসান আবেদের প্রস্থান সত্যিকারার্থে দেশের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। এই ক্ষতি বড় বেদনার মতো বেজে চলেছে গরিব-দুঃখী সাধারণ মানুষের মনে। তিনি মনে করতেন, নারী-পুরুষের সমতা ছাড়া এগোনো সম্ভব নয়। সামাজিক ক্ষমতায়নের জন্য সাধারণ মানুষকে জেন্ডার সমতা, নারী ও শিশুদের অধিকার- এসব বিষয়ে সচেতন করে তুলতে কাজ করেছে ব্র্যাক। তাদের সামর্থ্য ও দক্ষতা বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। সামাজিক কর্মকা-গুলোতে যাতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়িয়ে তোলা যায় তার ওপর বিশেষ জোর দিয়ে কাজ করেছেন তিনি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রাখায় স্যার ফজলে হাসান আবেদ আন্তর্জাতিক অসংখ্য পুরস্কার ও স্বীকৃতিতে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৮০ সালে সম্মানজনক ম্যাগসেসে পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। ২০১০ সালে ব্রিটেনের রানী প্রদত্ত নাইটহুড মর্যাদা লাভ করেন। একই বছর তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব কর্তৃক স্বল্পোন্নত দেশসমূহের উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রখ্যাত ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত পরামর্শদাতা দলের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। শিক্ষা উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ পুরস্কার ‘ইদান প্রাইজ’ অর্জন করেন তিনি। আধুনিক মনমানসিকতা ও প্রযুক্তিবান্ধব ব্যক্তি হিসেবে অগ্রগণ্য ছিলেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। তিনি বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে প্রযুক্তির সমন্বয় করার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখেছেন সব সময়। জীবনে লক্ষ্য অর্জনে অটল থাকতে পারলে এবং কঠোর পরিশ্রম করলে সফলতা আসে। তারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তিনি। ২০১৫ সালে দারিদ্র্য বিমোচনে অবদান রাখায় ওয়ার্ল্ড ফুড পুরস্কার পান তিনি। ওই সময় তিনি নিজের লক্ষ্য পরিষ্কার করে বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা যা করেছি তা একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থেকেই করেছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে দারিদ্র্যসীমার মধ্যে থেকে বের করে আনা। কারণ আমরা অনুভব করি যে, দারিদ্র্য অমানবিক রূপ নেয়। অতিদরিদ্র অবস্থা থেকে মানুষকে বের করা সম্ভব। এ জন্য বিশ্বের প্রতিটি দেশের অঙ্গীকার প্রয়োজন। তাঁর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তাঁর স্মৃতির প্রতি জানাই আমাদের গভীর ভালবাসা ও শ্রদ্ধা। তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি রইল আন্তরিক সমবেদনা ও সহমর্মিতা।
×