ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

মাদক বিক্রি ছাড়তে চাওয়ায় পুলিশের সোর্সের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এক পরিবার

প্রকাশিত: ১১:১৯, ২২ ডিসেম্বর ২০১৯

মাদক বিক্রি ছাড়তে চাওয়ায় পুলিশের সোর্সের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এক পরিবার

নিজস্ব সংবাদদাতা, সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম, ২১ ডিসেম্বর ॥ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ৫নং বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের পূর্ব নড়ালিয়া গ্রামের দোস্ত মোহাম্মদের নতুন বাড়ির বাসিন্দা জানে আলম, তার স্ত্রী ও সন্তান পারভেজ দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল। তারা পুলিশের কতিপয় সোর্সের মাধ্যমে ইয়াবা কিনে তা খুচরা বিক্রি করত। এতে কিছুটা আর্থিক লাভবান হলেও সবসময় মানসিক টেনশনে থাকতে হতো তাদের। সোর্সের কাছ থেকে টাকা দিয়ে মাদক কিনলেও সেসব মাদক বিক্রি বাবদ তাদের দিতে হতো নিয়মিত টাকা। এছাড়া পুলিশের নাম ব্যবহারসহ নানারকম ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রায় ১০ হাজার কিংবা নানা অঙ্কের টাকা নিয়ে যেত। এদিকে মাদক ব্যবসার কারণে সমাজে মানসম্মান ক্ষুণ্ণ হতে থাকায় এবং পুলিশ সোর্সদের ক্রমাগত টাকার চাপে বিরক্ত হয়ে জানে আলমের পরিবারের সদস্যরা সকলেই মাদক ব্যবসা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। কিন্তু পুলিশ সোর্স জেবল হোসেন, সোহাগ, আলাউদ্দিন, আলতাফ, মানিক ও নুরুজ্জামান তাদের মাদক সরবরাহ করতে চায় এবং আগের মতো অর্থ দাবি করতে থাকে। এতে জানে আলমের ছেলে পারভেজ তাদের নিরুৎসাহিত করে তারা আর মাদক ব্যবসা করতে চান না বলে জানিয়ে দেন। এতে চরম ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে পুলিশ সোর্সরা। তাদের কথা মাদক ব্যবসা কর আর না কর নিয়মিত টাকা দিতে হবে! আর তাদের কথামতো না চললে পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে হাড্ডি গুঁড়িয়ে দেয়া হবে। এরপরও তাদের কথা অগ্রাহ্য করায় সোর্সরা প্রকাশ্যে পারভেজের বাড়িতে গিয়ে হামলা চালায়। একইভাবে মাদক বিক্রিতে নিরুসাহিত করায় জানে আলমের ভাই মোঃ শাহীনকেও নানাভাবে মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকতে চাপ দিতে থাকে সোর্সরা। কিন্তু শাহীন তার ভাই, ভাবি ও ভাতিজাকে মাদক ব্যবসা ছাড়তে চাপ দিলে গত ১৭ ডিসেম্বর পুলিশ সোর্স মানিক, জেবল হোসেন, সোহাগ ও আলাউদ্দিনসহ তাদের ঘরে হানা দিয়ে শাহীন ও তার মাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। এ ঘটনা শাহীন স্থানীয় চেয়ারম্যানকে জানালে তিনি থানায় অভিযোগ দায়ের করতে বলেন। এরপর থানায় অভিযোগ দায়ের করলে সোর্স আলাউদ্দিন তাকে থানাতে আসতে বলেন এবং গণধোলাই দিয়ে হত্যার হুমকি দেন। শুধু তাই নয় থানায় উক্ত সোর্সদের কথায় এস.আই কাউছার শাহীনকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। এভাবে পুরো একটি পরিবার মাদক ব্যবসা ছাড়তে চেয়ে উল্টো বিপদে পড়ে গেছে। বর্তমানে সোর্সদের উৎপাতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বাধ্য হয়ে শুক্রবার রাতে ভুক্তভোগী জানে আলমের ছেলে পারভেজ (২৪) ও তার চাচা শাহীন (৩০) সীতাকু- প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের শরণাপন্ন হন এবং লিখিত অভিযোগ দায়ের করে প্রতিকার চান। হতাশ কণ্ঠে পারভেজ বলেন, নানাস্থান থেকে পুলিশের উদ্ধার করা মাদক সোর্সরা আমার বাবা জানে আলমকে বিক্রির জন্য দিতেন। এভাবে বাবা, মা ও আমি মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু এখন সরকার মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। সামাজিকভাবেও মাদক ব্যবসার কারণে আমরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছি। তাই সম্মান ও জীবন রক্ষায় আমরা মাদক ব্যবসা ছাড়তে চাই। কিন্তু পুলিশের সোর্সরা আমাদের কিছুতেই মাদক ব্যবসা ছাড়তে দিচ্ছে না। তারা নিয়মিত মাদক নিয়ে এসে আমাদের বিক্রি করতে বাধ্য করছে, টাকা চাইছে। এছাড়াও তারা যখন তখন আমাদের ঘরে এসে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে হয়রানি করছে। তাই আমরা পেশাটি ছেড়ে তাদের উৎপাত থেকে বাঁচতে চাই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত এক পুলিশ সোর্স মোঃ সোহাগ বলেন, ‘কেউ ভাল হতে চাইলে আমরা বাধা দেব কেন? আমরা টাকা নিই বা অন্য অভিযোগগুলো সত্য নয়। তিনি সরাসরি প্রতিবেদকের সঙ্গে সাক্ষাত করবেন জানিয়ে ফোন কেটে দেন।’ সীতাকু- থানার ওসি মোঃ ফিরোজ হোসেন মোল্লা বলেন, ‘আমি বিষয়টি অবগত নই। সংশ্লিষ্টদের ডেকে এনে বিষয়টি খতিয়ে দেখব এবং কেউ যদি অপরাধ ছেড়ে দিয়ে ভাল হতে চায়, আমিও তাদের সর্বদিকে সহযোগিতা করব।’
×