ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জ্ঞানভিত্তিক ডিজিটাল সাম্য সমাজ

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০১৯

জ্ঞানভিত্তিক ডিজিটাল সাম্য সমাজ

জ্ঞানভিত্তিক ডিজিটাল সাম্যসমাজ : যদিও বিষয়টি আমাদের আলোচনায় রয়েছে আরও অনেক আগে থেকে তবুও ২০০৮ সাল থেকেই ঘোষিতভাবে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচীর সঙ্গে পরিচিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুসারে আমরা ২০২১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলব। ১৯ সালে এসে আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, ডিজিটাল বাংলাদেশ স্বপ্নের অংশবিশেষ পূরণ হয়েছে। ২১ সাল নাগাদও স্বপ্নের পুরোটা পূরণ হবে না। হতে পারেও না। তাই ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পর আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ ২.০ এর কর্মসূচী বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের এই দ্বিতীয় স্তরটির শুরুটা তো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ১৮ সালের ইশতেহারেই রয়েছে। কিন্তু লক্ষ্যটা যেহেতু ৪১ সালের সেহেতু ২১ সালের পর পুরো বিশটি বছরকে বিবেচনায় রেখে ডিজিটাল বাংলাদেশ ২.০ কর্মসূচী প্রণয়ন করতে হচ্ছে। আমি ১৯ সালে বসে একটি খসড়ার কথাই ভাবতে পারি। একদম শর্তহীনভাবে আমি বলতে পারি যে, এর আমূল পরিবর্তন অনিবার্য। এমনকি পুরোটাই ছুড়ে ফেলে দেয়া হতে পারে বা এমন কিছু যুক্ত হতে পারে যা আমরা এখন ভাবতেই পারি না। তবে দুনিয়াতে কিছু বিষয় সব সময়েই থাকে যা বদলায় না-বদলাতে পারে না। আমরা এখন থেকে বাইশ বছর পরের ৪১ সালের একটি সভ্যতার কল্পিত রূপরেখা তুলে ধরতে পারি। এই রূপরেখায় যেসব বিষয় থাকতে পারে সেগুলোর মাঝে কয়েকটি আলোচনায় আসতে পারে। আমার আলোচনাটিকে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী মনে করতে পারেন। আমার তাতে ভালই লাগবে। ১৯৮৭ সালে আমি সিসার হরফবিহীন সভ্যতার কথা বলেছিলাম। ৯৭ সালে ট্যাপবিহীন মিডিয়া জগতের কথা বলেছিলাম। ৩২ বছরে সিসার হরফ থেকে মুক্ত হয়েছি আর ২২ বছরে ট্যাপ বিদায় হয়েছে। সেগুলো এখন আর বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী নয়। আমি এটাও মনে করি যে, আমার কথাগুলো অনেকেই বিশ্বাস করবেন না। অনেকে হাসি ঠাট্টা বা তামাশাও করতে পারেন। এতে উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই-কেননা ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা করার সময়ও এমন মশকরা করা হয়েছে। এটি বাস্তবতা যে সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা উচ্চশিক্ষিত মানুষদের পক্ষেও আন্দাজ করা কঠিন যে, কেমন একটি সভ্যতায় পা দিয়েছি আমরা। মানব সভ্যতা এমন কোন রূপান্তরের ধারণাও কোন কালে পায়নি। আমরা যেন ভুলে না যাই যে এই সময়টি চতুর্থ বা পঞ্চম শিল্প বিপ্লব বা সোসাইটি ৫.০ বা তার পরের কোন ধারণার সময়। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ধারণার জনক কার্লস সোয়াব স্পষ্ট করেই বলেছেন যে প্রথম থেকে তৃতীয় শিল্প বিপ্লবে যারা যুক্ত ছিলেন চতুর্থ শিল্প বিপ্লব তাদেরকেই সবচেয়ে বেশি সহায়তা করবে। আমরা তো সেই দলে পড়ি না। তবে তিনি আমাদের মতো যারা তিনটি শিল্প বিপ্লব মিস করেছি তাদের জন্যও কিছু সম্ভাবনার কথা বলেছেন। তবে আমি নিশ্চিত করেই বলতে পারি যে, আমাদের চ্যালেঞ্জগুলো অকল্পনীয়। শিল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য যা হয়তো অতি সহজ কাজ তা আমাদের জন্য প্রায় অসাধ্য মনে হতে পারে। এগুলো মোকাবেলা করার বিষয়গুলো মাথায় রেখেই আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ ২.০ এর কর্মসূচী রচনা করতে হবে। লক্ষ্য : জ্ঞানভিত্তিক ডিজিটাল সাম্যসমাজ : আমাদের আলোচনায় আমরা জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার আলোচনা করেছি। এটি ২০৩০ সালে অর্জন করার কথা। সেখানে খুবই স্পষ্ট করে কিছু বিষয় উল্লেখ করা আছে। জাতিসংঘ ২০০৩ সালে জেনেভা ঘোষণাতে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিল। ২০১৫ সালে সেটি অর্জিত হবার কথা ছিল। সেটি এখনও দুনিয়ার কোথাও অর্জিত হয়নি। বরং মনে হচ্ছে জাতিসংঘ এসডিজি গোল এর কথা বলে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ এর কথা চাপা দিতে চলেছে। আমরা সেটি করিনি-করতে চাই না। ২০০৩ সালে আমাদের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নির্বোধের মতো ২০০৬ সালে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। জেনেভা থেকে ফিরে ২০০৬ সালের ক্ষমতার শেষ দিন পর্যন্ত তিনি ঐ শব্দটি আর উচ্চারণও করেননি। অন্যদিকে আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ৪১ সালে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ সমাজ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচী বা আমাদের রাষ্ট্রীয় মূলনীতি থেকে সাম্য সমাজ প্রতিষ্ঠার কর্মসূচীটি গ্রহণ করে ৪১ সালে জ্ঞানভিত্তিক ডিজিটাল সাম্য সমাজ প্রতিষ্ঠার কর্মসূচী নেবার প্রস্তাব করছি। এমন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠার কাজটি সার্বজনীন। দেশের সকল মানুষকে সম্পৃক্ত করে সরকার, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, কৃষি ও জীবনধারার সম্মিলিত রূপান্তর করেই এই সমাজ গড়তে হবে। মনে রাখতে হবে, ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল সমাজও এর লক্ষ্য। এসবই বস্তুত ডিজিটাল বাংলাদেশ ২.০ এর মূল লক্ষ্য। ক) কাগজবিহীন সভ্যতা : যেসব খাত পুরোই কাগজবিহীন হবে সেগুলোর মোটা দাগের তালিকাটি হচ্ছে: ১) কাগজবিহীন ডিজিটাল সরকার : সরকারের প্রশাসনিক ও বিচার বিভাগসহ সকল ক্ষেত্রেরই ফাইলপত্র, তথ্য ভা-ার, প্রশাসনের কাজকর্ম, পারস্পরিক ও আন্তঃযোগাযোগ, জনগণের জন্য সেবাসহ সকল কিছু ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন হবে বলে কাগজ নামক বস্তুটি সরকারের জাদুঘরে থাকবে- কাজে থাকবে না। এছাড়াও বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় তথ্যগুলো ডিজিটাল তথ্যে রূপান্তর করতে হবে এবং তার সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। ২) কাগজবিহীন ডিজিটাল শিক্ষা: শিক্ষার কোন স্তরে কাগজ ব্যবহৃত হবে না। পাঠ্যবই বা সহায়ক বইতো বটেই পরীক্ষা পদ্ধতিও কাগজবিহীন হবে। কালি দিয়ে লেখার কলম নামক কোন বস্তুর অস্তিত্ব থাকবে না। এমনকি কীবোর্ড নামক বস্তুটিও থাকবে না। মানুষ মুখে কথা বলবে বা ইশারায় নিজের মনের ভাব প্রকাশ করবে এবং যন্ত্র সেটি লিখিতরূপে, শব্দে বা চিত্রে রূপান্তর করবে। শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং মানবসভ্যতার সকল জ্ঞান ডিজিটাল রূপে সংরক্ষিত থাকবে। শিক্ষার সকল স্তরের সকল উপাত্ত ডিজিটাল ইন্টারঅ্যাকটিভ মাল্টিমিডিয়া কনটেন্টে রূপান্তরিত হবে। প্রযুক্তি মানুষকে এমন ক্ষমতা দেবে যে তার ভাবনা বা প্রয়োজন অনুযায়ী সে তার হাতের কাছে সকল তথ্য তার পছন্দরূপে পাবে। ফলে ছাত্র ছাত্রী বা জ্ঞান অর্জনে ইচ্ছুক কাউকে কাগজের বই-এর পাতায় কিছু খুঁজতে হবে না। রাষ্ট্রকে এ জন্য প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে। জ্ঞানভা-ারটি থাকবে মাতৃভাষায়। ৩) কাগজবিহীন ব্যবসা-বাণিজ্য-শিল্প-কৃষি-স্বাস্থ্য ব্যবস্থা: আমাদের প্রচলিত ব্যবসা বাণিজ্য, শিল্প, কৃষি বা স্বাস্থ্য সেবায় বড় ভূমিকা পালন করে কাগজ। আমরা পরস্পর লেনদেনের জন্য, তথ্য আদান-প্রদানের জন্য বা সংরক্ষণের জন্য কাগজ ব্যবহার করে আসছি। সভ্যতার বিকাশে কাগজের ব্যবহার বেড়েই এসেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ ১.০ এর অন্যতম লক্ষ্য ছিল কগজবিহীন সভ্যতার ভিত রচনা করা এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ ২.০ এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হবে এই কাগজবিহীন সভ্যতা পরিপূর্ণ করা। এসব খাতের তথ্যদি কাগজে না থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে জমা হবে এবং সকল কর্মকা- কাগজ ছাড়া পরিচালিত হবে। আমরা একে কাগজবিহীন জীবনধারা বলেও গণ্য করতে পারি। নতুন জীবনধারায় প্রচলিত সামাজিক মূল্যবোধ, সমাজব্যবস্থা, সংস্কার, ভাষা, সংস্কৃতি ও পারস্পরিক সম্পর্কও বদলে যেতে পারে। এমনকি ৪১ সালের মাঝে বিশ্বে নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা, নতুন বিশ্বব্যবস্থা, নতুন কূটনৈতিক মেরুকরণ বা রাজনৈতিক ব্যবস্থাও জন্ম নিতে পারে। খ) ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল সভ্যতা : ডিজিটাল বাংলাদেশ এর দ্বিতীয় স্তরে আমাদের চারপাশের সকল প্রযুক্তির রূপান্তর হবে। তৃতীয় শিল্প বিপ্লব চলাকালে যেসব সর্বাধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তির জন্ম হয়েছে যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স, আইওটি, বিগ ডাটা, ব্লক চেইন, সেন্টিমেন্ট এনালাইসিস, স্পীচ-ভয়েস রিকগনিসন ইত্যাদির আমরা কোনটাই এখনও প্রাথমিকভাবে ব্যবহার করতে পারিনি। এক্ষেত্রে আমাদের মানবসম্পদ তৈরি করাও শুরু হয়নি। আমাদের শিল্প কল কারখানা, উৎপাদন ব্যবস্থার কোনটাতেই এসবের প্রয়োগ করা হয়নি। এসব প্রযুক্তি ব্যবহার এমনভাবে করতে হবে যাতে এর ফলে বেকারত্ব তৈরি না হয় এবং আমরা আমাদের তরুণ মানবসম্পদ নিয়ে বিপন্ন না হই। এসব ডিজিটাল প্রযুক্তির ভিত্তিতে প্রচলিত ব্যবসা বাণিজ্য পাল্টাবে ও নতুন বাণিজ্য ব্যবস্থা ও শিল্প কল কারখানা গড়ে উঠবে সেটাই স্বাভাবিক। গ) ডিজিটাল নিরাপত্তা ও ডিজিটাল যুদ্ধ : বিশ্ব যখন পরিপূর্ণভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর হবে তখন ব্যক্তি, সমাজ, সরকার ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তাও ডিজিটাল প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে যাবে। ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা, নিরাপত্তা কিংবা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এরই মাঝে ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছে। এমনকি যুদ্ধ-বিগ্রহও হবে ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর। অপরাধের জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহৃত হলে সেটি মোকাবেলাতেও ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে- এটাই স্বাভাবিক। রাষ্ট্রকে নিজস্ব, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য রাষ্ট্রকে ডিজিটাল নিরাপত্তার প্রযুক্তি উন্নয়ন, সংগ্রহ ও প্রয়োগ করতে হবে। একই সঙ্গে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহায়তা গড়ে তুলতে হবে। ঘ) ডিজিটাল সংযুক্তি : আমার বিবেচনায় ডিজিটাল বাংলাদেশ ২.০ এর অন্যতম লক্ষ্য হবে দেশের প্রতিটি মানুষকে সর্বোচ্চ গতির ডিজিটাল সংযুক্তির আওতায় আনা। সাবমেরিন ক্যাবল, স্যাটেলাইট, ফাইবার অপটিক্সের সঙ্গে ৫জি প্রযুক্তির সহায়তায় দেশের প্রতিটি বাড়ি, প্রতিটি ঘর বা প্রতি ইঞ্চি মাটিতে থাকতে হবে এই ডিজিটাল সংযুক্তি। ঙ) মাতৃভাষার বিশ : জ্ঞানভিত্তিক সমাজের প্রধানতম হাতিয়ার যেহেতু জ্ঞান সেহেতু সেই জ্ঞান মাতৃভাষায় পেতে হবে। বাধ্য হয়ে ৪১ সাল নাগাদ বিশ্বটা ইংরেজী ভাষাকেন্দ্রিক থাকবে না। বিশ্বটা হবে মাতৃভাষাকেন্দ্রিক। বিশ্বের সকল মাতৃভাষার জন্য সুখবর হলো যে, প্রযুক্তি মাতৃভাষার অক্ষমতাকে কেবল ইংরেজীর সমকক্ষ করবে না বরং মাতৃভাষা মানুষের বুকের মাঝে বসবাস করে বলে ভাষাপ্রযুক্তির অভাবনীয় অগ্রগতি হবে। ইংরেজী নির্ভরতা থাকবেই না। এমনকি যেসব ভাষার হরফ বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে তাকেও রক্ষা করা যাবে। সাহিত্য বা জ্ঞানভিত্তিক সম্পদকে মাতৃভাষার রূপান্তর হবে সহজতম একটি কাজ। স্পিচ-ভয়েস রিকগনিসন, ও.সি.আর. সাইন রিকগনিসন, সেন্টিমেন্ট এনালাইসিস, অটো ট্রান্সলেশন ইত্যাদি বস্তুত বহমান প্রযুক্তি। ডিজিটাল যুগে প্রযুক্তির অভাবনীয় অগ্রগতির সময় এসব কর্মসূচী বাংলার ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করতে হবে। যদিও এসব বিষয়ে এখনই আমাদের কর্মসূচী রয়েছে তথাপি এর অগ্রগতি মানসম্পন্ন নয়। ফলে এই সময়ের মাঝে ভাষাপ্রযুক্তি উদ্ভাবন, বিকাশ ও প্রয়োগ করার জন্য সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। চ) সাম্য সমাজ : মানবসভ্যতার ইতিহাস বলে মানুষ যত বেশি উন্নত ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে রাষ্ট্রে ও সমাজে ততো বেশি বৈষম্য তৈরি হয়েছে। সম্পদের সুষম বণ্টন নামক স্বপ্নটি অপূরণীয়ই থেকে গেছে। কোন কোন রাষ্ট্রে মার্ক্সীয় সমাজতন্ত্রের নতুন সংস্করণ বাস্তবায়নের চেষ্টা হয়েছে। মানুষে মানুষে বৈষম্য কমানোতে তারা অনেকটা সফল হয়েছেন। কেউ কেউ কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে চলেছেন। আমাদের মুক্তবাজার অর্থনীতিতে মানুষে মানুষে বৈষম্য চরম। দিনে দিনে এটি বাড়ছে। আমাদের সেই বৈষম্য দূর করতে হবে। জ্ঞানভিত্তিক বা মেধাভিত্তিক সমাজ সাম্য সমাজ প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে সহায়ক হতে পারে যদি অস্ত্র ও অর্থকে শক্তির উৎস হিসেবে বিবেচনা না করে মেধা ও জ্ঞানকে শক্তির উৎস হিসেবে বিবেচনা করি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সমাজ, ব্যবসা বাণিজ্য কৃষি ও স্বাস্থ্যসহ সকল খাতেই এই লক্ষ্যটি ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অর্জন করা যেতে পারে। আমরা প্রাসঙ্গিকভাবেই বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচীর বিষয়টি ধারণ করতে পারি। বাংলাদেশ যদি তার সাংবিধানিক নীতিমালা বাস্তবায়ন করে যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্র জন্ম নিয়েছে সেটিট বাস্তবায়ন করে তবেই সকল লক্ষ্য পূরণ হবে। সামগ্রিক বিবেচনায় আমরা আমাদের সামনে জ্ঞানভিত্তিক ডিজিটাল সাম্যসমাজ গড়ে তোলার লড়াইটা বস্তুত এখনই দৃশ্যমান। ঢাকা, ২১ ডিসেম্বর ১৯ লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাসের চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কী-বোর্ড ও সফটওয়্যারের জনক
×