ফিরোজ মান্না ॥ পনেরোটি দেশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ -এর বাজার খোঁজা হচ্ছে। ইতোমধ্যে নেপালের ডিটিএইচ কোম্পানির কাছে ফ্রিকুয়েন্সি বিক্রির আলোচনা প্রায় শেষ। অল্পদিনের মধ্যে নেপালের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হবে। একই সঙ্গে ফিলিপিন্সের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা চলছে। ফিলিপিন্সও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে ফ্রিকুয়েন্সি নিতে আগ্রহী। এর বাইরে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া, আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, কাজাখস্তান এবং উজবেকিস্তানের সঙ্গে বিসিএসসিএল আলোচনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই ১৫টি দেশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ - এর কভারেজের মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএসসিএল) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ এ তথ্য জানিয়েছেন।
বিসিএসসিএল সূত্র জানিয়েছে, দেশে সেবা নিশ্চিত করেই বিদেশে বিপণন কাজ করা হচ্ছে। দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে চলছে। টেলিভিশনগুলোর জন্য তিনটি রিডানডেন্সি চালু করা হয়েছে। যাতে কোন কারণে একটি সংযোগ কাটা পড়লেও বিকল্প পথে চ্যানেলগুলো চলতে পারে। আরও একটা রিডানডেন্সি তৈরির কাজ করছি। এটা তৈরি করা হলে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে বাংলাদেশের চ্যানেল দেখা যাবে। এ জন্য বিদেশী কয়েকটি স্যাটেলাইট কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করছে বিসিএসসিএল। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ -এর মাধ্যমে এবার বিদেশ থেকে অর্থ উপার্জনের দ্বার উন্মোচন হচ্ছে। দেশীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলো এতদিন বিদেশী স্যাটেলাইট কোম্পানির কাছ থেকে ফ্রিকুয়েন্সি কিনলেও এবার দেশীয় একমাত্র স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ এর সেবা বিদেশে বিক্রি করা হবে। দেশের একমাত্র স্যাটেলাইটের কাছ থেকে ফ্রিকুয়েন্সি কিনতে নেপালের ডিটিএইচ কোম্পানির আলোচনা প্রায় চূড়ান্ত। যে কোন সময় নেপালের কাছে ফ্রিকুয়েন্সি বিক্রি করার চুক্তি হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাই-১ -এর পাঁচটি ট্রান্সপন্ডার কেনার আগ্রহ দেখিয়েছে। দরদাম ঠিক হলেই চুক্তি সই হবে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর থেকেই দেশে বিদেশে বিপণনের জন্য মাকের্টিং করার কথা চিন্তা করছে বিসিএসসিএল। ইতোমধ্যে নেপাল ও ফিলিপিন্সের সঙ্গে স্যাটেলাইটের ফ্রিকুয়েন্সি বিক্রির কথা হচ্ছে। বর্তমানে দেশের টেলিভিশনগুলোর কাছে প্রতি মেগাহার্টজ ফ্রিকুয়েন্সি মাসে সাড়ে তিন হাজার ডলার মূল্যে বিক্রি করছে বিসিএসসিএল। কিন্তু নেপালে দুই হাজার ডলারের মধ্যে স্যাটেলাইটের ফ্রিকুয়েন্সি বিক্রি করা হতে পারে। বিদেশী বাজার ধরতেই কম দামে ফ্রিকুয়েন্সি বিক্রির কথা চিন্তা করছে স্যাটেলাইট কোম্পানি। ফিলিপিন্সের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা শেষ হয়েছে। ফিলিপিন্স চারটি ট্রান্সপন্ডার বা ১৪৪ মেগাহার্টজ ব্যান্ডউইথ কেনার জন্য আলোচনা করছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমায় হওয়ায় ফিলিপিন্সের মতো আশপাশের দেশগুলোকে এ স্যাটেলাইটের ফুটপ্রিন্ট সবচেয়ে ভাল পড়েছে। ফিলিপিন্সসহ আশপাশের দেশগুলোর বাজার টার্গেট করে সেখানে একটি ল্যান্ডিং স্টেশনও করা হবে। স্যাটেলাইটের ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে ২০টি দেশের চাহিদা মেটাবে। বাকি ২০টি ট্রান্সপন্ডার বিদেশের বাজারে বিক্রি করা হবে। বর্তমানে দেশের বাজারে ২৬ শতাংশ ফ্রিকুয়েন্সি বিক্রি হয়ে গেছে। এখান থেকে প্রতি মাসে ১০ কোটি টাকার বেশি আয় করছে বিসিএসসিএল। ২০১৮ সালের ১১ মে নিজ কক্ষপথ ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রীতে স্যাটেলাইটটি মহাকাশে উৎক্ষেপণ করার পর নবেম্বরে এটি বিসিএসসিএলকে বুঝিয়ে দেয় স্যাটেলাইটটির নির্মাতা কোম্পানি থ্যালাস এ্যালেনিয়া স্পেস। এ কারণে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করতে একটু সময় লেগে গেছে।
এদিকে, দ্বিতীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করার জন্য প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। অল্পদিনের মধ্যে দ্বিতীয় স্যাটেলাইটের জন্য পরামর্শক নিয়োগ করা হবে। এই স্যাটেলাইটটি হবে ‘হাইব্রিড স্যাটেলাইট’।