ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজার বিমানবন্দর

ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে দিতে তৎপর বরখাস্ত পরিচালক

প্রকাশিত: ১২:১৩, ৪ ডিসেম্বর ২০১৯

ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে দিতে তৎপর বরখাস্ত পরিচালক

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে নতুন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। চলমান কাজ দ্রুত চালিয়ে নিতে সিনিয়র নির্বাহী প্রকৌশলী শরীফুল ইসলামকে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। এর আগে অনিয়ম দুর্নীতি ও সরকারী অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে প্রকল্প পরিচালক আমিনুল হাসিবকে। ২০১২ সালে ৪ অক্টোবর তাকে এ পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। জানা যায়, বিমানবন্দরে সরকারী উন্নয়ন কর্মকা- ও কাজের গুণগত মান সরেজমিনে পরিদর্শন করতে বৃহস্পতিবার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান ও সিভিল এভিয়েশনের প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্দু বিকাশ গোস্বামী কক্সবাজার সফর করে গেছেন। বিদেশী পর্যটকদের জন্য মানসম্মত এই বিমানবন্দরে আরও কি কি স্থাপনা নির্মাণে পদক্ষেপ নেয়া যায়Ñ এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃক্ষের চেয়ারম্যান ও প্রধান প্রকৌশলী টাওয়ারসহ বিভিন্ন সাইড সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখেছেন। সূত্র মতে, নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত প্রকল্প পরিচালক সিনিয়র নির্বাহী প্রকৌশলী শরীফুল ইসলাম গত মঙ্গলবার ঢাকায় যোগদান করে বর্তমানে কর্মস্থলে (কক্সবাজার বিমানবন্দর) উপস্থিত থেকে সরকারী উন্নয়ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তর করার লক্ষ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দরে চলমান প্রকল্প দ্রুত সম্পন্ন করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, নিষ্ঠাবান হিসেবে সরকারী দায়িত্ব পালনে কক্সবাজার বিমানবন্দরে চলমান উন্নয়ন কর্মকা-ে বুধবার থেকে তিনি কর্মব্যস্ততা শুরু করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে বদ্ধপরিকর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তর, বিদেশী পর্যটকদের আকৃষ্টসহ দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতকে বিশ্বের কাছে আরও বেশি পরিচিত করতে প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারকে ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এজন্য ৬৭৫ ফুট রানওয়ে থেকে ৯ হাজার ফুটে উন্নীতকরণ কাজ ও রানওয়ের পাশে ১৫০ ফুট শোল্ডার থেকে ২০০ ফুট শোল্ডারে উন্নীতকরণ বাবদ ১১৯৩.৩২ কোটি (প্রথম পর্যায়ে) টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। ২০১৮ সালে প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজটি শেষ হওয়ার কথা। তবে ২০১৯ সাল পেরিয়ে যেতে বসেছে। এখনও পর্যন্ত প্রকল্প কাজটি সম্পন্ন করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে প্রকল্প পরিচালক আমিনুল হাসিবের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে দিয়ে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করানো হয়। এদিকে সরেজমিন তদন্তে ওই ইঞ্জিনিয়ার হাসিবের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির সত্যতা পাওয়া যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছেন। একজন অতিরিক্ত সচিবের তদন্তে দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারী অর্থ আত্মসাতের সত্যতা উঠে আসায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় প্রকল্প পরিচালক আমিনুল হাসিবকে। অভিযোগ উঠেছে, দুর্নীতিতে জড়িয়ে সরকারী টাকা আত্মসাত করার দায়ে বরখাস্ত হওয়া ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল হাসিব বর্তমানে ভুয়া কাগজপত্র সৃজন করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। ধুয়া তুলসীপাতা বানাতে একাজে তাকে সংশ্লিষ্ট দফতরের শীর্ষস্থানীয় জনৈক কর্মকর্তা গোপনে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন বলে তথ্য মিলছে। সূত্র মতে, দুর্নীতির টাকায় তিনি নিকটাত্মীয়ের নামে খুলনা বিমানবন্দরের পাশে বহু জমিজমা কিনে রেখেছেন। কুমিল্লায় গড়ে তুলেছেন সুরম্য অট্টালিকা। এ ব্যাপারে জানতে আমিনুল হাসিবের মুঠোফোনে একাধিক কল করলেও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া যায়নি। প্রাপ্ততথ্যে জানা যায়, প্রকল্প পরিচালক হিসেবে আমিনুল হাসিব উন্নয়ন প্রকল্পে ছোটখাটো কিছু কাজ তার নিজস্ব লোক দিয়ে সম্পন্ন করিয়ে আত্মসাত করেছেন প্রকল্পের বিপুল টাকা। এছাড়াও পুরনো রানওয়ে-শোল্ডার ভেঙ্গে নতুনভাবে নির্মাণ করতে প্রাক্কলনে শুধু শতকরা ১০ ভাগ পুরাতন (ইট-কংকর) ব্যবহার করার নিয়ম রয়েছে। তবে ঠিকাদারের সঙ্গে আঁতাত করে শতকরা ৮০ ভাগ পুরনো ইটভাঙ্গা ইত্যাদি মেকাডম হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ দিয়েছেন বরখাস্ত হওয়া প্রকৌশলী। এসব ইট দেশ স্বাধীনের বহু বছর আগে ব্যবহৃত। এ অবস্থার কারণে ভবিষ্যতে রানওয়ে ধসে পড়া বা দেবে যাবার আশঙ্কা রয়েছে বলে মত প্রকাশ করেন অভিজ্ঞজনরা। উন্নয়ন কাজের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য বিদেশে যাওয়া-আসার খরচ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রদান করার নিয়ম থাকলেও এ সংক্রান্ত একাধিক ভুয়া বিল-ভাউচার জমা করে সরকারী টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে সাবেক প্রকল্প পরিচালক হাসিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। পুরনো মালামাল তথা স্কাব ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট দফতরে বুঝিয়ে দেয়ার নিয়ম থাকলেও ঠিকাদার নতুন রানওয়ে-শোল্ডারে সাব-বেইজ হিসেবে ওই পুরনো স্কাব ব্যবহার করে নিয়েছেন। উল্লেখ্য, পুরনো রানওয়েতে শোল্ডার ছিল ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৭৫০ ফুট। ঠিকাদার এসব ভেঙ্গে পুরনো মালগুলো নতুন নির্মাণ সামগ্রীর সঙ্গে মিশিয়ে বর্তমান শোল্ডার নির্মাণে ব্যবহার করেছেন। সরকারী শোল্ডার ভাঙ্গা শতকরা ১০ ভাগ ব্যবহার করে তার মূল্য চালানের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয় সরকারী কোষাগারে। এখানে ঠিকাদারের কাছ থেকে কত ফুটের এবং কত টাকা বিল কর্তন করে সরকারী কোষাগারে জমা করা হয়েছে, তা তদন্তের দাবি করেছেন বিভিন্ন মহল।
×