ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

শিশুশ্রম নিরসনে ‘অধিকার’

প্রকাশিত: ০৮:২১, ২৯ নভেম্বর ২০১৯

 শিশুশ্রম নিরসনে ‘অধিকার’

সরকারের নানামুখী উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা সত্ত্বেও দেশে শিশুশ্রমের পরিসর ও বিস্তৃতি বাড়ছে বই কমছে না। এর পাশাপাশি কারণে-অকারণে কাজকর্মে যৎসামান্য অবহেলা এমনকি ‘পান থেকে চুন খসলেই’ শিশু নির্যাতন-নিপীড়ন এমনকি হত্যার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। দেশে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ এবং আইনত দন্ডনীয়। আঠারো বছরের নিচে সব শিশু এই অধিকারের আওতায় রয়েছে। দুঃখজনক হলো, বাস্তবে এর প্রয়োগ নেই বললেই চলে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধসহ দেশে শিশুশ্রম চিরতরে বন্ধে সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় যে আন্তরিক এবং উদ্যোগী, সে বিষয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই। এই প্রেক্ষাপটে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নকে সামনে রেখে সরকার ২০২০ সালের মধ্যে শিশুশ্রম নিরসনে ‘অধিকার’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এর আওতায় প্রাথমিকভাবে দেশের এক লাখ শিশুকে পুনর্বাসন করা হবে। পর্যায়ক্রমে সব শিশুকর্মীকে নিয়ে আসা হবে পুনর্বাসনের আওতায়। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮৪ কোটি টাকা। সরকারের পাশাপাশি কয়েকটি বেসরকারী সংস্থাও হাত দিয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নে। দেশে শিশুশ্রম কমছে না, বরং বাড়ছে। এ রকমই তথ্য-পরিসংখ্যান উঠে এসেছে ২৬৭টি শিশু সংগঠনের মোর্চা বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের পরিবেশিত প্রতিবেদনে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ সমীক্ষা অনুযায়ী দেশে ১২ লাখ ৮০ হাজার শিশু ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত। এসব শিশু প্রধানত কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে ছোট ছোট শিল্প-কারখানায়, লেদ মেশিনে, ইটভাঁটিতে, লেগুনা, বিড়ি-সিগারেট তৈরিসহ নানা ক্ষেত্রে, যেখানে শুধু উদয়স্ত পরিশ্রমই নয়, সমূহ স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ নিরাপত্তা ঝুঁকিও বিদ্যমান। শিশু অধিকার ফোরামের তথ্যানুযায়ী শুধু গৃহকর্মেই নিয়োজিত শিশু শ্রমিকের সংখ্যা চার লাখ ২১ হাজার। এই শ্রমও এই কারণে ঝুঁকিপূর্ণ যে, অধিকাংশ শিশুর গৃহকর্মের কাজেও কমপক্ষে ১৫-১৬ ঘণ্টা কাজ করতে হয় এক নাগাড়ে। সেই অনুপাতে জোটে না পেটপুরে খাবার ও পুষ্টি। বরং প্রতিনিয়ত জোটে বকাঝকা-লাঞ্ছনা-গঞ্জনা-মারধর। নির্মম অত্যাচারে একাধিক মৃত্যুর খবরও আছে। এর পাশাপাশি নারী গৃহকর্মীদের ক্ষেত্রে রয়েছে অহরহ যৌন নিপীড়ন-নির্যাতনসহ হত্যার ঘটনা। অনেক ক্ষেত্রে মামলা-মোকদ্দমা হলেও সুবিচার তথা ন্যায়বিচার পাওয়া যায় না বললেই চলে। আর কলকারখানায় কর্মরত শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমদানের বিষয়টি তো সুবিদিত। চুরির অপরাধে অথবা ছুতানাতায় শিশু শ্রমিককে অকথ্য গালাগালি, মারধরসহ পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে হত্যার অভিযোগও রয়েছে একাধিক। অথচ সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম এবং ২০২৫ সালের মধ্যে সব ধরনের শিশুশ্রম নিরসনে অঙ্গীকারাবদ্ধ। তা না হলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে। শিশুশ্রম নিরসনে সরকার বাধ্যতামূলক সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা, মিড ডে মিল কর্মসূচী বাস্তবায়নসহ ২৮৫ কোটি টাকার বহুমুখী প্রকল্প নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে অগ্রগতির হার আশাব্যঞ্জক নয়। অন্যদিকে আর্থ-সামাজিক বাস্তবতাও শিশুশ্রম নিরসনে প্রতিবন্ধক। ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুশ্রম বন্ধ না হওয়ার মূল কারণ আসলে দারিদ্র্য। কেননা অনেক শিশু শ্রমিকের আয়েই চলে তাদের পরিবার। অভাবের তাড়নায় বাধ্য হয়ে শিশুরা এসব কাজ করছে। সস্তা শ্রমের কারণেও মালিকপক্ষ সুযোগ নিচ্ছে। এমতাবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ-অঝুঁকিপূর্ণ উভয় শ্রমে শিশুদের নিরস্ত করা কঠিন বৈকি। দেশে যতদিন দারিদ্র্য ও বেকারত্ব থাকবে ততদিন এসব কাজে শিশুদের বিরত রাখা সম্ভব হবে না। এজন্য সেসব শিশুর অভিভাবকের কর্মসংস্থানসহ জীবনমানের উন্নয়ন প্রয়োজন।
×