ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সঞ্চয়ের সুযোগ কমেছে

প্রকাশিত: ০৮:২০, ২৯ নভেম্বর ২০১৯

সঞ্চয়ের সুযোগ কমেছে

ক্ষুদ্র ও মাঝারি আয়ের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী তাদের দৈনন্দিন চাহিদা মিটিয়ে যে স্বল্প পুঁজিকে সঞ্চয়ে বিনিয়োগ করে সেখানেও তার আর্থিক সচ্ছলতার লক্ষ্যমাত্রা থাকে। ফলে সামান্য আয় সত্ত্বেও সিংহভাগ জনগণ মাস প্রতি কিছু টাকা জমাতে আগ্রহী। যেমন স্বল্প টাকায় ডিপিএস খোলা যায়। তিন বছর কিংবা পাঁচ বছর মেয়াদী এই ডিপিএসে যখন একটি বিরাট অঙ্কের টাকা হাতের নাগালে আসে, সেটাও দেশের সমৃদ্ধ অর্থনীতির একটি সুযোগ বটে। তার ওপর আছে এফডিআর, পেনশন স্কিম কিংবা আরও বেশি টাকায় সঞ্চয়পত্র ক্রয় করে সাধারণ মধ্যবিত্তের আয় বাড়ানোর একটি বড় ধরনের সুযোগ। যাতে সরকারের আর্থিক প্রবৃদ্ধিও তার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগিয়ে যায়। যা বিনিয়োগ সম্ভাবনাকে এগিয়ে দেয়। তার ওপর আছে মেয়েদের জন্য পারিবারিক সঞ্চয়পত্র, যা কম টাকায় কেনার সুযোগ থাকে। যা দেশের অতি নিম্ন বিত্তের বিশেষ করে নারীদের আয়ের একটি বিরাট উৎস। মূল টাকা থেকে যায় মাসে অথবা ২, ৪, ৬ মাস পরেও এ টাকা তোলা যায়। অনেক প্রয়োজনীয় কাজ সুরাহা করতেও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ এতদিন সাধারণ মানুষের চাহিদাই শুধু নয়, আগ্রহও ছিল অনেক বেশি। বিভিন্ন সময় সঞ্চয়পত্রের উৎস কর ওঠানামা করলেও গত (২০১৮-১৯) অর্থবছর থেকে সঞ্চয়পত্রের ওপর উৎস কর ৫% থেকে বাড়িয়ে ১০% এ নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলে ক্রমে তা কার্যকর হতেও সময় লাগেনি। সর্বোচ্চ সুদ পাওয়া যেত পেনশন সঞ্চয়পত্রে। এরপর পারিবারিক। আর ৪ মাস অন্তর সঞ্চয়পত্রের হার সব থেকে কম। ফলে যে সঞ্চয়পত্র কিনে মানুষ আর্থিক সচ্ছলতার কথা ভাবতে পারত সেখানে আজ দেখা দিয়েছে টানাপোড়েন। কারণ বিশেষ করে অবসরে যাওয়া সরকারী কর্মজীবীরা এই সঞ্চয়পত্রের ওপরই সমধিক নির্ভরশীল। সুদের হারে এমন তারতম্যে এর বিক্রির ওপরও পড়ে এক ধরনের নেতিবাচক চাপ। মানুষ এখন সঞ্চয়পত্র কেনা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে স্বল্পলাভসহ নানা শর্তের কারণে। বিবিধ সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ এখন আর সেভাবে সঞ্চয়পত্র কিনছে না। ফলে সামগ্রিক অর্থনীতির সঞ্চয়ন খাতটি এখন ঘাটতির দিকে, যা উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা শ্লথগতি করে তুলতে পারে। শেয়ারবাজারের দুর্বিপাক পুঁজি সঞ্চয়নকে নানামাত্রিকে অর্থ সঙ্কটের আবর্তে ফেলে দিচ্ছে। পুঁজিবাজারের মন্দাভাবের প্রভাব পড়ছে সরকারের উৎসকর ব্যবস্থাপনায়ও। ফলে লাভজনক এই খাতটির প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহের ঘাটতি সার্বিক চিত্রকে অস্থির করে তুলছে। তার ওপর এক লাখের বেশি টাকার সঞ্চয়পত্র কিনতে গেলে জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে টিআইএন সনদপত্রও জমা দেয়া আবশ্যক। প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে সঞ্চয়পত্র কেনার ব্যাপারে আগে তেমন কোন বিধি-নিষেধ ছিল না। আয়-ব্যয়ের হিসাবও নেয়া হয়নি। শুধু নির্দেশ ছিল একজন নারী ৪৫ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন, এর বেশি নয়। এছাড়া অবসরে যাওয়া ব্যক্তিরা পেনশন সঞ্চয়পত্রও কিনতে পারবেন ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত। সৎ এবং নিষ্ঠাবান গ্রাহকরা এমন বিধি-নিষেধ মানলেও অনেকে তা উপেক্ষাও করেছেন। এমন নথিপত্রও সরকারের কাছে আছে। তাছাড়া জাতীয় সঞ্চয় যদি কাক্সিক্ষত হারে বৃদ্ধি পেতে বাধা পায়, তাহলে তার যথার্থ প্রভাব পড়বে জিডিপিতে। এমন আলামত এখন দৃশ্যমান। এখান থেকে উত্তরণের সুচিন্তিত উপায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকেই আশা করা যায়। দেখা যাক, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সবদিক বিবেচনায় কোন ইতিবাচক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে কিনা।
×