ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে উত্তরায়ণের গীতি আলেখ্য ‘ইউরোপে রবীন্দ্রনাথ’

প্রকাশিত: ১০:৪৪, ৩ নভেম্বর ২০১৯

 প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে উত্তরায়ণের গীতি আলেখ্য ‘ইউরোপে রবীন্দ্রনাথ’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মঞ্চ থেকে মাইকে ভরাট কণ্ঠে শোনা যাচ্ছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে পাঠ-‘বিংশ শতাব্দী শুরু। এই শতব্দীর প্রথম দশ-বারো বছর নানাভাবে রবীন্দ্রনাথের জীবন বহু ওঠাপড়ার মধ্যে তোলপাড় হলো। সাধারণভাবে দেখতে গেলে বাইরে থেকে রবীন্দ্রনাথকে নিস্তরঙ্গ সমুদ্রের মতো মনে হয়। সে জীবন সমুদ্রের যত ভাঙ্গাগড়া সবই জলের গভীরে-বাইরেটা প্রায় শান্ত, সমাহিত। তবু বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় সে জীবনের উপরিভাগেও অনেক ঢেউ উঠল, ভাঙ্গল। কিন্তু সেই আলোড়নের মধ্যেও রবীন্দ্রনাথ ধীর, স্থির। কী অসাধারণ ক্ষমতায় সমস্ত ঝড়ঝাপটা তিনি অনায়াসে অতিক্রম করে এগিয়ে গেছেন। সৃষ্টির দিকে তাকালে মনে হয় এই ক’বছরই হয়তো তার সোনার ফসল ফলাবার সময়। অথচ সে সৃষ্টির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বুকভাঙ্গা দুঃখের ইতিহাস পারিবারিক দুঃখ, প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বিপর্যয়। তবে সর্বদাই সে দুঃখ, সেই বিপর্যয় তার জীবন প্রদীপকে আরও উজ্জ্বল শিখায় জ্বলতে সাহায্য করেছে। বিংশ শতকের গোড়াতেই রবীন্দ্রনাথের অনেকগুলো কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হলো। শুরু হলো কথা দিয়ে, তারপর এলো কাহিনী এবং তারপরে ‘ক্ষণিকা’ ও কল্পনা। আর এই যুগেই রবীন্দ্র প্রতিভার বিকাশ তার স্বদেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেবার জন্য তাকে প্রস্তুত করেছে’। এরপরই সমবেত কণ্ঠে শোনা গেল রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘প্রথম যুগের উদয় দিগঙ্গনে’। জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে শনিবার সন্ধ্যায় উত্তরায়ণ নিবেদিত রবীন্দ্রনাথের ইউরোপ ভ্রমণের সময় রচিত গান নিয়ে ‘ইউরোপে রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক গীতি আলেখ্যের শুরুটা ছিল এমনই। সংগঠনটির নবম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিসচিব ড. মোঃ আবু হেনা মোস্তফা কামাল। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, আমাদের কাছে রবীন্দ্রনাথ মানে এই বঙ্গভূমের বাংলাদেশ হয়ে ওঠা, এই জনপদের মানুষগুলোর বাঙালী হয়ে ওঠা আর ক্রমাগত বাঙালীয়ানার মধ্যদিয়ে বিশ্বমানব হয়ে ওঠা। কখনও তিনি গুরুদেব, কখনও কবিগুরু, কখনও বিশ্বকবি, আবার কবি সম্রাট বলে তাকে সম্মোধন করেছেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি শুধু কবি নন, চিত্রকর নন, নাট্যকার বা অভিনয়শিল্পী শুধু নন, আমাদের কাছে রবীন্দ্রনাথ মানে এর চেয়ে বেশি কিছু। রবীন্দ্রনাথের কবিতা আমাদের কাছে শুধু ছন্দবদ্ধ পঙ্ক্তিমালা নয়, রবীন্দ্রসঙ্গীত আমাদের কাছে শুধু বিশেষ সঙ্গীত নয়, তার গল্প উপন্যাস, প্রবন্ধ নিবন্ধ শুধু সাহিত্য নয় আমাদের কাছে। বাংলাদেশের মানুষের কাছে রবীন্দ্ররচনা অমৃতসমান, বাঙালীর জীবনদর্শন, আমাদের আন্দোলন, সংগ্রামের প্রেরণা আর মানবিক চেতনার উৎস। সংক্ষিপ্ত আলোচনার পর শুরু হয় রবীন্দ্রনাথের ইউরোপ ভ্রমণের সময় রচিত গান নিয়ে ‘ইউরোপে রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষত গীতি আলেখ্য। এটি পরিকল্পনা ও পরিচালনা করেছেন লিলি ইসলাম। সঙ্গীত পরিচালনায় হিমাদ্রী শেখর। যন্ত্রানুসঙ্গ পরিচালনায় শিমু দে। সঙ্গীতে কণ্ঠ দেয় সংগঠনের শিল্পীরা। পাঠ ও আবৃত্তিতে অংশ নেন ড. ভাস্বর বন্দোপাধ্যায় ও ডালিয়া আহমেদ। পরিবেশিত গানগুলো হচ্ছে-প্রথম যুগের উদয় দিগঙ্গনে, গানে গানে তব বন্ধন, সুন্দর বটে তব অঙ্গদখানি, আমার মুক্তি আলোয় আলোয়, মধুর তোমার শেষ, তোমারি নাম বলব, কার চোখের চাওয়ার, আকাশে তোর তেমনি আছে ছুটি প্রভৃতি। ‘নাই নাই ভয় হবে হবে জয়’ রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে শেষ হয় গীতি আলেখ্য। সঙ্গীতে অংশ নেন কান্তা, সৌরিন্দ, মৌমিতা, প্রমিলা, রতম, বীথি, সাথী, লিলি ইসলাম, অভিজিৎ, শিমু দে প্রমুখ।
×