ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু ও ৪ নেতা হত্যার নেপথ্য কারিগরদের বিচারের দাবি

প্রকাশিত: ০৯:৪৮, ২ নভেম্বর ২০১৯

 বঙ্গবন্ধু ও ৪ নেতা হত্যার নেপথ্য কারিগরদের বিচারের দাবি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ একটি তদন্ত কমিশন গঠনের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যার নেপথ্য ষড়যন্ত্রকারী রাজনীতিক ও সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শীর্ষ নেতারা। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগকে কলুষমুক্ত করে তারা জঙ্গীবাদী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সব ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলারও আহ্বান জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তিকে। শুক্রবার রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি মিলনায়তনে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে শহীদ মনসুর আলী স্মৃতি সংসদ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে ১৪ দল নেতারা এ দাবি জানান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, জাতির পিতা হত্যার মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল, তা এখনও অব্যাহত। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছিল। দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সেখান থেকে উত্তরণ ঘটিয়েছেন। দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারায় ফিরিয়ে এনেছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ আজ বিশে^র মর্যাদাশীল দেশ, উন্নয়নের রোল মডেল। তিনি বলেন, জাতীয় চার নেতা জীবন দিয়ে গেছেন কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সঙ্গে কখনও বেইমানি করেননি। এটি ইতিহাসের অবিস্মরণীয় ঘটনা। আজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারলেই জাতির পিতা ও চার জাতীয় নেতা হত্যার প্রতিশোধ নেয়া সম্ভব হবে, জাতি হবে কলঙ্কমুক্ত। এ কারণে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দলের অপর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এমপি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দুটি লক্ষ্য ছিল। এক. দেশকে স্বাধীন করা, দুই. জনগণের মুক্তি অর্জন। জনগণের সেই অর্থনৈতিক মুক্তি এখনও আসেনি। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই বঙ্গবন্ধুর সেই অসমাপ্ত কাজ শেষ করে দেশকে এগিয়ে নেয়ার পথে হাঁটছেন। তাই আসুন, বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী ও কলুষমুক্ত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তুলি। দলের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম ও চড়াই-উৎরাই পার করার মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির সঙ্কটকে আজ সম্ভাবনায় পরিণত করেছেন। দেশকে সবদিক থেকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তাই অসাম্প্রদায়িক শক্তির জোট ১৪ দলকে আরও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অসহিষ্ণু হয়ে নয়, আইনী পথেই সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদের লালন-পালনকারী এবং বঙ্গবন্ধুর খুনীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হবে। সভাপতির বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম একটি তদন্ত কমিশন গঠনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যার নেপথ্য ষড়যন্ত্রকারী রাজনীতিক ও সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান। তিনি বলেন, একটি কমিশন করেন, যাতে বোঝা যায় আরও কারা জড়িত ছিল। সামরিক বেসামরিক আর কারা জড়িত ছিল তদন্ত করে বিচার করতে হবে। বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, শকুনের দোয়ায় গরু মরে না। ড. কামাল ও বিএনপির দোয়াতেও গরু মরবে না। আগামী নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতকে কেবল পরাজিতই করা হবে না, তাদের রাজনীতির মাঠ থেকে চূড়ান্তভাবে নিশ্চিহ্নও করা হবে। জাতীয় চার নেতার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী পুত্র বলেন, জাতীয় চার নেতা লোভের কাছে কখনও আত্মসমর্পণ করেননি। তাদের জীবনকে অনুসরণ করতে হবে। লোভের কাছে মাথানত করা যাবে না। জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, বর্তমান প্রজন্মের সামনে রাজনীতিবিদরা কোন আদর্শ রেখে যেতে পারছেন না, এটা কাম্য নয়। রাজনীতির এই অবক্ষয় রোধ করতে হবে। দু’চারজন যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর জন্য গোটা দলের বদনাম হবে এটা মেনে নেয়া যায় না। সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশগড়ার সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে তার উন্নয়নের সঙ্গে থাকতে হবে। জনগণের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, শহীদ মনসুর আলী স্মৃতি সংসদের সভাপতি এ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম ঠান্ডু সাধারণ সম্পাদক মফিজউদ্দিন মাহমুদ প্রমুখ। আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন স্মৃতি সংসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মির্জা সাখাওয়াৎ হোসেন।
×