ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিচ্ছে না শরিক দল

প্রকাশিত: ১১:১৯, ২ অক্টোবর ২০১৯

বিএনপির আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিচ্ছে না শরিক দল

শরীফুল ইসলাম ॥ কারাবন্দী দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে যতশীঘ্র সম্ভব রাজপথে আন্দোলন শুরু করতে চায় বিএনপি। এ জন্য তারা একে একে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রতিটি শরিক দলের সঙ্গে কথা বলেছে। কিন্তু একটি শরিক দলও বিএনপির ডাকে আন্দোলনে যেতে এখন পর্যন্ত রাজি হচ্ছে না। এ কারণে বিএনপিও আপাতত বড় ধরনের কোন কর্মসূচী পালনের সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। সূত্র জানায়, আসন্ন শীত মৌসুম থেকে রাজপথে আন্দোলন চাঙ্গা করতে চায় বিএনপি। এ জন্য লন্ডন প্রবাসী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে প্রতিটি জোটসঙ্গী শরিক দলের সঙ্গে কথা বলেছেন দলটির সিনিয়র নেতারা। কিন্তু না রাজি হচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোন শরিক দল, না রাজি হচ্ছে ২০ দলীয় জোটের কোন শরিক দল। এ পরিস্থিতিতে আন্দোলনের বিষয়ে বিপাকে পড়েছে বিএনপি। অপর এক সূত্র মতে, আন্দোলনে যাওয়ার বিষয়ে নানামুখী কৌশল নিয়ে এগুচ্ছে বিএনপি। এ জন্য সমমনা দলগুলোর সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের সঙ্গেও তারা কথা বলে যাচ্ছে। এভাবে সরকার বিরোধী ঐক্য সৃষ্টি করে এ পথে এগিয়ে যেতে চায়। এ ছাড়া দেশী-বিদেশী বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখাছে। এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই। আমরা সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে রাজপথের আন্দোলন জোরদার করতে চাই। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা চাই। দেশের স্বার্থে আমাদের এ আহ্বানে সবাই সাড়া দেবেন বলে আমরা আশাবাদী। এদিকে রাজপথে সরকার বিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা করার লক্ষ্যে আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে সম্প্রতি তড়িঘড়ি করে ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠন করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল অতীতের মতো আন্দোলনের সম্মুখভাবে ছাত্রদলকে রেখে নতুন গতি সঞ্চার করা। কিন্তু আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে এ কমিটি করে আরও বিপাকে পড়েছে বিএনপি। এখন আদালত থেকে এ কমিটির কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর ফলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও এখন চুপসে গেছে। এ ছাড়া বিএনপির অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোও আন্দোলনের সামনের কাতারে থাকার অবস্থানে নেই। বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিনিয়র নেতাদের প্রতি তারেক রহমানের নির্দেশনা ছিল অক্টোবর থেকেই রাজপথের আন্দোলন শুরু করা। তারেক রহমানের নির্দেশ পেয়ে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রতিটি শরিক দলের সঙ্গে কথা বলেন তারা। কিন্তু কোন দলই এখন পর্যন্ত আশানুরূপ সাড়া দেয়নি। বরং কোন কোন রাজনৈতিক দল আন্দোলন শুরু করে দেয়ার কথা বললেও বিএনপি কি করে তা আগে দেখে পরে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ২০ দলীয় জোটের এক শরিক দলের সিনিয়র নেতা জানান, সরকার বিরোধী আন্দোলন করতে হলে আগে বিএনপিকে সক্রিয় হতে হবে। কিন্তু যেখানে বিএনপি নেতাকর্মীদেরই আন্দোলনে তেমন আগ্রহ নেই সেখানে শরিক দলের নেতারা কি করবে। অতীতেও বিএনপি বিভিন্ন শরিক দলের নেতাদের আন্দোলনে সক্রিয় করে নিজেরাই রাজপথ ছেড়ে চলে গেছে। এতে ওইসব শরিক দলের নেতারা রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই এবার আর সেভাবে কেউ আন্দোলনে নামতে চাচ্ছে না। আগে দেখতে চায় বিএনপি কি করে। তারপর পরিস্থিতি সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নিতে চায়। জানা যায়, শরিক দলের নেতারা রাজি না থাকায় বিএনপি সম্প্রতি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এককভাবেই ১০ দিনব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে। তবে এ কর্মসূচী তেমন সফল হয়নি। বিএনপির সঙ্গে জোটে থাকা শরিক দলগুলো এ কর্মসূচীর দিকেও নজর রাখে। কিন্তু বিএনপি নেতাকর্মীদের তেমন উপস্থিতি ছাড়া দায়সারা কর্মসূচী পালন হওয়ায় নিজ দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা হতাশ হওয়ার পাশাপাশি শরিক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও এ নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। শরিক দলের নেতাকর্মীদের সক্রিয় করতে না পারায় খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ইতিমধ্যেই ৬ বিভাগীয় সদরে যে জনসভা করেছে বিএনপি তাতেও তেমন সাড়া মেলেনি। অথচ খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে এ ধরনের জনসভায় বিএনপি নেতাকর্মীদের পাশাপাশি জোটের শরিক দলগুলোর নেতাকর্মীদেরও ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যেত। জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে কোন কর্মসূচী পালনের বিষয়ে জোটের শরিক দলগুলোর সহযোগিতা চাইলে পেতেন। কিন্তু তিনি কারাবন্দী হওয়ার পর বিএনপির সিনিয়র নেতাদের আহ্বানে তারা সেভাবে আর সাড়া দিচ্ছেন না। বিশেষ করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে এ অবস্থা বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর মূল কারণ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শরিকদের মধ্যে আসন বণ্টনকালে তাদের মূল্যায়ন না করা। মনোনয়ন বাণিজ্য করতে গিয়ে বিএনপি হাইকমান্ড জোটের বেশ ক’টি দলকে কোন আসনই দেয়নি। একমাত্র জামায়াতকে ২৫টি আসন ছাড়লেও অন্য কয়েকটি দলকে খুবই কম আসন দেয়া হয়েছে। আর জামায়াতসহ যেসব দলকে আসন ছেড়েছে সেখানেও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল। যে কারণে নির্বাচনী প্রচারে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়। বিএনপি জোটের এত কম আসনে বিজয়ী হওয়ার এটাও একটা কারণ বলে জানা গেছে। মাসখানেক আগে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে স্কাইপি বৈঠকে লন্ডন প্রবাসী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অক্টোবর থেকে রাজপথের আন্দোলন শুরু করার তাগিদ দেন। এর পর দলের সিনিয়র নেতারা নিজেদের মধ্যে আরও ক’টি বৈঠক করে আন্দোলন শুরুর কৌশল নির্ধারণ করতে থাকেন। আর এ কৌশলের অংশ হিসেবেই সমমনা দলগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন বিএনপি নেতারা। কিন্তু তেমন সাড়া না পেয়ে কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েন বিএনপি নেতারা। এ হতাশা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তবে ভেতরে ভেতরে এখনও চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে। বিএনপি রাজপথের আন্দোলন শুরু করতে না পারার একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে- ২০১৫ সালে টানা ৯২দিনের জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনের সময় জান-মালের ব্যাপক ক্ষতি হওয়া। দেশ-বিদেশে বিএনপির এ আন্দোলন নিয়ে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ সহিংস আন্দোলনের কারণেই কানাডার আদালত বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে আখ্যায়িত করে। এ পরিস্থিতিতে আবারও রাজপথে আন্দোলন কর্মসূচী পালন করতে গিয়ে নতুন করে সমালোচনার মুখে পড়তে হয় কি না দলের অনেক নেতাকর্মীর মধ্যে এমন আশঙ্কা রয়েছে।
×