ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

হায় হায় কোম্পানি

প্রকাশিত: ০৭:২৯, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 হায় হায় কোম্পানি

অবৈধ ক্যাসিনো কান্ডে সারাদেশে যখন তোলপাড় চলছে, তখন হায় হায় কোম্পানির বিষয়টিও সামনে চলে এসেছে। যেমন, দেশে আইনত ক্যাসিনোসহ সব ধরনের জুয়া একেবারে নিষিদ্ধ হলেও গোয়েন্দা তৎপরতায় দেখা গেছে যে, এসব ক্যাসিনো সামগ্রী দীর্ঘদিন থেকে বিনা শুল্কে আমদানি করা হয়েছে খেলনা সামগ্রী হিসেবে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ১৯টি প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানা, যেগুলোর অধিকাংশই ভুয়া। এরকম আরও হায় হায় কোম্পানি রয়েছে রাজধানীসহ দেশের প্রায় সর্বত্র। নিত্য-নতুন কোম্পানিও গজিয়ে উঠছে। এসব কোম্পানির গালভরা একটি নামও আছে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং সংক্ষেপে এমএলএম কোম্পানি। প্রায় সবই মূলত প্রতারক। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের প্রতারণামূলক ব্যবসা-বাণিজ্য খুলে বিশেষ করে নিরীহ ও সাধারণ মানুষকে সর্বস্বান্ত করে ছাড়ে এসব কোম্পানি। নিকট অতীতে বহুখ্যাত ও সুপরিচিত যুবক, ডেসটিনি, ইউনিপেটুইউসহ শতাধিক হায় হায় কোম্পানির বিরুদ্ধে অতীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণসহ এদের কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করলেও এসব প্রতিষ্ঠানে লগ্নি করে যে বা যারা সর্বস্বান্ত হয়েছেন তাদের আদৌ কোন ক্ষতিপূরণ মেলেনি। এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা আদালতে বিচারাধীন বছরের পর বছর ধরে ঝুলে আছে। অথচ অসহায় ভুক্তভোগীদের কোন প্রতিকার মিলছে না অদ্যাবধি। ইদানীং অর্থলগ্নির পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের ধরনেও পরিবর্তন এসেছে। কোম্পানিগুলো অনেকে খুলে বসেছে ই-কমার্সের নামে এমএলএম ব্যবসা। অনলাইনে ফুড সাপ্লিমেন্ট, যৌন উত্তেজক ওষুধ, প্রসাধন সামগ্রী, হারবাল ওষুধ, গ্যারান্টিসহকারে দেশে-বিদেশে চাকরি ও পড়াশোনা, লোভনীয় বেতনে মধ্যপ্রাচ্যে নারী কর্মী নিয়োগ, ট্যুরিস্ট ভিসা, ওমরাহ ভিসা ইত্যাদি দেয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে নিরীহ সাধারণ মানুষের কাছ থেকে। এক শ্রেণীর মানুষও খুব সহজেই পা দেয় হায় হায় কোম্পানির প্রলোভনের ফাঁদে। এক সময় বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাঠিয়ে অকস্মাৎ গা-ঢাকা দেয় এসব কোম্পানির হোমরা-চোমরা কর্মকর্তারা। কিছুদিন আগে র‌্যাব নিছক ধর্মকে পুঁজি করে ব্যবসা করে ফুলে-ফেঁপে ওঠা এক কোম্পানির বড় কর্তাকে গ্রেফতার করতেও সক্ষম হয়েছে। জনকণ্ঠের প্রতিবেদনেও এসেছে এরকম বেশ কয়েকটি হায় হায় কোম্পানির নাম। রাজধানীসহ সারাদেশে বিশেষ করে গ্রাম-গঞ্জে রেডিও-টেলিভিশনসহ গণমাধ্যমের সাহায্যে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণাই পারে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তুলতে এসব হায় হায় কোম্পানির বিষয়ে। স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রশাসনকেও সদাসতর্ক থাকতে হবে অবশ্যই। বাংলাদেশে ‘হায় হায় কোম্পানি’ করার সুবিধা হলো সবকিছু গুটিয়ে অকস্মাৎ চম্পট দেয়ার আগ পর্যন্ত তাদের খবর কেউ জানে না। বিদেশে লোক পাঠানো হলো ‘হায় হায় কোম্পানি’র বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার অন্যতম একটি। জনশক্তি রফতানি খাতে প্রতারণার ঘটনা বেশি ঘটে থাকে। এসব কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন উন্নত দেশে চাকরি ও লেখাপড়ার জন্য পাঠানোর কথা বলে যাত্রা শুরু করে। কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় তারা বিজ্ঞাপনও দেয়। সবই হয় প্রকাশ্যে এবং প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নাকের ডগায়। এসব বিজ্ঞাপন দেখে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের উচিত তার সত্যতা খতিয়ে দেখা। পুলিশ, দুদক ও আর্থিক অপরাধ তদন্ত কমিটির উদাসীনতায় তারা কখনও বাধার সম্মুখীন হয় না। ভুক্তভোগীরা জোরেশোরে প্রতিবাদ করলেই কেবল সরকারী সংস্থাগুলোর টনক নড়ে। অতীতে এ ধরনের আর্থিক অপরাধের কঠিন শাস্তি না হওয়ায় প্রতারকদের মনে ভয়ভীতি থাকে না বললেই চলে। সেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের প্রতারিত হওয়ার দায় কোনভাবেই সরকারী সংস্থাগুলো এড়াতে পারে না। নজরদারি সংস্থাগুলোর উচিত এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেয়ার প্রক্রিয়া আরও কঠোর করা এবং বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম নিয়মিত তদন্ত করে দেখা। নইলে প্রতারণার ঘটনা বাড়তেই থাকবে।
×