ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

বই প্রকাশের গল্প অনুষ্ঠানে সমরেশ মজুমদার

প্রকাশিত: ১১:১৮, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বই প্রকাশের গল্প অনুষ্ঠানে সমরেশ মজুমদার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকায় এসেছেন পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত লেখক সমরেশ মজুমদার। প্রকাশিত হলো তার নতুন ‘অপরিচিত জীবনযাপন’। সেই গ্রন্থটি নিয়ে শনিবার বিকেলে তিনি উপস্থিত হলেন ‘বই প্রকাশের গল্প’ শীর্ষক কথোপকথনে। সে অনুষ্ঠানে লেখক বলেন, উপদেশ দিয়ে লেখক হওয়া যায় না। লেখক হতে হলে ভেতর থেকে তাড়না থাকতে হয়। একজন মা যখন সন্তানের জন্ম দেন তখন সেই সন্তানকে যেমন যতœ না করলে তার স্বাভাবিক বৃদ্ধি হয় না; ঠিক তেমনি একজন লেখকের ভেতরে একটা উপলব্ধি ও তাড়িত না করলে তিনি লেখক হতে পারেন না। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাতিঘর। আয়োজনে প্রকাশিত হয় সমরেশ মজুমদার রচিত নতুন বই ‘অপরিচিত জীবনযাপন’ এবং বাদল সৈয়দের লেখা ‘জন্ম জয়’ নামের দুটি বই। বাতিঘরের কর্ণধার দীপঙ্কর দাশের স্বাগত বক্তব্যে মঞ্চে আসেন সমরেশ মজমুদার। সমরেশ মজুমদার আরও বলেন, নিজের কথা বলি, আমি কখনও একই জিনিস বার বার লিখিনি, লিখতে চাই না। এমনকি আমি একই ধরনের বাক্যও দুবার লিখি না। ভুল করে লিখে ফেললেও তা বদলে ফেলি। এই গুণ প্রত্যেক লেখকের থাকতে হবে এবং নতুন কিছু দেয়ার তাগিদ থাকতে হবে। সমরেশ মজুমদার বলেছেন, হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যের রাজধানী কলকাতা থেকে ঢাকায় নিয়ে এসেছেন। বাংলা সাহিত্যের রাজা-রানী চলে এসেছে ঢাকায়। বাংলা সাহিত্যের রাজধানী আগে কলকাতা ছিল এটা আমি তিরিশ বছর আগের কথা বলছি। কিন্তু গত তিরিশ বছরে আমরা নতুন কোন সুনীল, শীর্ষেন্দু, প্রফুল্ল রায়কে পাইনি। সেই আসা শুরু হয়েছে হুমায়ূন আহমেদের হাত ধরে। তিনি খুব বিনয়ের সঙ্গে জায়গাটি দখল করে নিলেন। বরেণ্য এই সাহিত্যিক বলেন, আমার লেখা ‘কালবেলা’ বইটা ন্যায্যভাবে এক লাখ সাত হাজার কপি বিক্রি হয়েছে। আর বিভিন্ন পত্রিকা এবং নানা জায়গা থেকে জেনেছি, বাংলাদেশে আড়াই লাখের বেশি কপি বিক্রি হয়েছে। কালবেলা উপন্যাসের মাধবীলতা তো বিয়ে না করেও সন্তানের মা হয়। এ ধরনের বই লিখলে তো অশ্লীলতার অভিযোগে সেটি বাতিল করে দেয়ার কথা। কিন্তু বাঙালী পাঠক মাধবীলতাকে কেন গ্রহণ করল? এর আগে আমি যখন ঢাকায় আসি তখন ঢাকা ক্লাবে একটি ছেলে আর মেয়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে। তারা জানায়, তাদের নাম অনিমেষ এবং মাধবীলতা। আমি ভাবলাম, মজা করছে হয়ত। পরে তারা বলল, এফিডেভিট করেই তারা নিজেদের নাম রেখেছে অনিমেষ আর মাধবীলতা। সমরেশ মজুমদার বলেন, লেখালেখি অত্যন্ত যন্ত্রণার একটি বিষয়। এই যন্ত্রণা আরও বেড়ে যায় যখন বাংলাদেশের কোন বইয়ের দোকানে এসে দেখি ‘রাত তিনটে তোমাতে আমাতে’ বইয়ের নিচে লেখা সমরেশ মজুমদার। বইটি কেনার পর দেখি একটি অক্ষরও আমার নয়। কিন্তু বইয়ের পেছনে আমার ছবিটি দেয়া আছে। পাইরেসি চলুক সমস্যা নেই। কিন্তু যদি মূল বইটি ঠিক রেখে ছাপা হতো তাহলেও কষ্ট লাগত না। এর পর দর্শকের কাছে সমরেশ জানতে চান, কেন অনিমেষ, মাধবীলতা চরিত্র এত জনপ্রিয় হলো? দর্শক সারি থেকে দুজন পাঠক সমরেশকে জানান, উপন্যাসটি কেন তাদের ভাল লেগেছে। এভাবেই আড্ডা গল্পে দীর্ঘ সময় কথা বলেন সমরেশ মজুমদার। অনুষ্ঠানে এই প্রখ্যাত সাহিত্যিক বলেন, যে কোন কিছুতেই আলাদা হতে না পারলে, কেউ গ্রহণ করবে না। কেউ ফিরেও তাকাবে না। একই রকম লিখলে তো হবে না। ভিন্ন কিছু লেখার চেষ্টা করতে হবে। অন্যদিকে শারীরিক অসুস্থতা নিয়েই অনুষ্ঠানের মধ্যভাগে এসে হাজির হন লেখক বাদল সৈয়দ। তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকেই এখানে এসেছি। অনুষ্ঠানটিতে সবার সঙ্গে উপস্থিত থাকব বলে।
×