ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-জিম্বাবুইয়ে দু’দলেরই লক্ষ্য জয়

প্রকাশিত: ১১:৫৯, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বাংলাদেশ-জিম্বাবুইয়ে দু’দলেরই লক্ষ্য জয়

মিথুন আশরাফ ॥ আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট হারের ধকল থেকেই এখনও মুক্ত হতে পারেননি বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। তিনদিন পরই আবার নেমে যাচ্ছেন ত্রিদেশীয় টি২০ সিরিজ খেলতে। আজ জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে সিরিজের মিশন শুরু করবে বাংলাদেশ। টেস্ট হারের প্রভাব আবার টি২০ সিরিজে পড়বে না তো? সেই প্রশ্নই এখন চতুর্দিকে ঘুরপাক খাচ্ছে। একমাত্র টেস্টটির দলে থাকা সাকিব আল হাসান, সৌম্য সরকার, লিটন কুমার দাস, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, তাইজুল ইসলাম আছেন টি২০ দলেও। এ ক্রিকেটারদের সঙ্গে আফিফ হোসেন ধ্রুব, সাব্বির রহমান রুম্মন, মেহেদী হাসান, সাইফউদ্দিন, মুস্তাফিজুর রহমান ও ইয়াসিন আরাফাত রয়েছেন। টেস্ট ম্যাচটিতে যারা ছিলেন তাদের মানসিক অবস্থা যে খারাপ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সেই অবস্থা থেকে বের হওয়াও কঠিন। যদি বের হতে পারেন তাহলে তো ভালই। আর না হলে টি২০ সিরিজেও বিপদ ঘনিয়ে আসতে দেরি হবে না। জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচে আবার ছিলেন আফিফ, সাব্বির, সাইফউদ্দিন ও ইয়াসিন। এ চার ক্রিকেটারও বিপর্যস্ত অবস্থাতেই থাকতে পারেন। একে তো দল টেস্টে হেরেছে। সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছে। আবার প্রস্তুতি ম্যাচ হারের পর জিম্বাবুইয়ের কাছ থেকে হুমকিও মিলেছে। মনের ভেতর যদি ভয় ঢুকে যায় তাহলেই সর্বনাশ হয়ে যাবে। যেমনটি আফগানদের বিরুদ্ধে টেস্টে হয়েছে। আফগানদের স্পিনের বিরুদ্ধে এতটাই কম্পমান ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা, তাতেই সব শেষ হয়ে যায়। দেশের মাটিতে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াকে হারানো বাংলাদেশ দলটি টেস্ট ক্রিকেটে ‘নবীন’ আফগানিস্তানের কাছে হেরে যাওয়ায় এখন ক্রিকেট যে কোন্ পথে হাঁটতে শুরু করেছে, তাই নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে গেছে। যদি কোনভাবে টি২০ সিরিজেও ফল খারাপ হয় তাহলে চতুর্দিক থেকে সমালোচনা তীরে বিদ্ধ হবে ক্রিকেটারদের। ওয়ানডেতে দেশের মাটিতে অপ্রতিরোধ্য দলেই পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। টেস্টেও ভাল নজির দেখিয়েছে। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্টে হারের আগে সাফল্যই মিলেছিল। সেই তুলনায় টি২০তে আগে থেকেই দুর্বল বাংলাদেশ। ৮৫টি টি২০ খেলে ২৬টিতে জয় মিলেছে। ৫৭টিতে হার হয়েছে। ২টি ম্যাচের রেজাল্ট হয়নি। সর্বশেষ ১০ ম্যাচের মধ্যে তিনটি ম্যাচ জিততে পেরেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে আবার কঠিন একটি সিরিজের দেখাও পেয়েছে। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে গত বছর ভারতের দেরাদুনে তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে প্রায় ৯ মাস পর যেমন টেস্ট খেলতে নেমে হেরেছে বাংলাদেশ, এবার একই সময় পর টি২০ও খেলতে নামছে। তাহলে কী বিপদ আসন্ন? জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে প্রথম খেলা। সিরিজে প্রতিটি দল পরস্পরের বিরুদ্ধে দুটি করে ম্যাচ খেলবে। এরপর পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষস্থানে থাকা দুটি দল ২৪ সেপ্টেম্বর ফাইনালে খেলবে। প্রতিটি ম্যাচ সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় শুরু হবে। বাংলাদেশ কী পারবে ফাইনালে খেলতে? শুরুটা ভাল হওয়া খুবই জরুরী। প্রতিপক্ষ যেহেতু জিম্বাবুইয়ে, তাই আশাও থাকছে। তবে সেই আশা হতাশায় পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। আফগানরা টি২০তে দুর্দান্ত দল। তাতো সবারই জানা। দলে এত বৈচিত্র্যময় স্পিনার আর ব্যাটসম্যান আছেন যে কোন দলকেই ভোগাতে পারে আফগানিস্তান। জয় তুলে নিতে সক্ষমও। কিন্তু বাংলাদেশের বেলাতে টি২০তে জিম্বাবুইয়েও কম নয়। দুই দলের মধ্যকার ৯টি ম্যাচ হয়েছে। ৫টি বাংলাদেশ জিতেছে। ৪টি জিতে নিয়েছে জিম্বাবুইয়ে। দুই দলের মধ্যকার সর্বশেষ ২০১৬ সালে খেলা হয়। দেশের মাটিতে চার ম্যাচের টি২০ সিরিজ হয়েছিল। সেই সিরিজ ২-২ ড্র হয়েছিল। প্রথম দুটি ম্যাচেই জিতেছিল জিম্বাবুইয়ে। শেষ দুটি ম্যাচ জিতে ড্র করে বাংলাদেশ। তার মানে জিম্বাবুইয়েও একেবারে দুর্বল দল নয়। প্রস্তুতি ম্যাচে তা বুঝিয়েও দিয়েছে জিম্বাবুইয়ে। তবে টেস্ট হারের দুঃখ কাটাতে হলে বাংলাদেশকে এবার ত্রিদেশীয় টি২০ সিরিজে কিছু করে দেখাতেই হবে। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান সেই আশাতেই আছেন। তিনি বলেছেন, ‘টি২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচটি জেতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে হয় তো সবকিছু নিয়ন্ত্রণে আসার একটি সম্ভাবনা তৈরি হবে। সে জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। হাতে খুব বেশি সময় নেই। তিনদিন মাত্র হাতে সময় আছে আমাদের।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘খুব তাড়াতাড়ি ঘুরে দাঁড়াতে হবে। কারণ বেশিরভাগ খেলোয়াড় এখানে যারা আছে (টেস্ট দলে) তারা টি২০তে খেলবে। তাই সবার মানসিকতা পরিবর্তন করে আবার টি২০ ঘরানায় আনতে হবে এবং ভাল পারফর্ম করে ফলাফলও আনতে হবে। আমাদের জন্য এটি কঠিন। কিন্তু এই ফলাফল আমাদের জন্য খুবই জরুরী যে, আমরা যেন ভাল একটি শুরু করতে পারি টুর্নামেন্টটিতে।’ বাংলাদেশের সেই শুরু আজ হচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ আজ খেলতে নামবে সেই জিম্বাবুইয়ে দলও কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে প্রস্তুত। জিম্বাবুইয়ে অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজাই যেমন বলেছেন, ‘সিরিজটা সহজ হবে না জানি। আমরা আমাদের সেরাটা দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশে এসেছি। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে চোখ আমাদের। ছেলেরা অনেক আত্মবিশ্বাসী।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘টি২০ অবশ্যই ভিন্ন ফরমেট। টেস্ট ক্রিকেটে টস অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। টি২০ খেলা হয় সীমিত ওভার ও আরও ভাল উইকেটে। তাই আমরা কঠিন চ্যালেঞ্জের প্রত্যাশা করছি।’ জিম্বাবুইয়ে ফাইনালে খেলার আশা করছে। তা করতে হলে তাদেরও শুরুটা অসাধারণভাবে করতে হবে। এখন দেখা যাক জিম্বাবুইয়েকে হারিয়ে আজ ত্রিদেশীয় টি২০ সিরিজের মিশনটা সুন্দরভাবে করতে পারে কিনা বাংলাদেশ।
×