ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের নিয়ে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার

প্রকাশিত: ১১:১৪, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

রোহিঙ্গাদের নিয়ে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার

মোয়াজ্জেমুল হক / এইচএম এরশাদ ॥ দেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নিয়ে সরকার এখনও মানবিক। তবে এরা বেপরোয়া মনোভাবে পৌঁছানোর কারণে বিভিন্ন পর্যায়ে অবস্থান ও ব্যবস্থাপনা কঠোর করা হচ্ছে। আশ্রয় শিবির থেকে রোহিঙ্গারা যেন বাইরে অবাধে চলাফেরা করতে না পারে সে ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ৩২ আশ্রয় শিবির কেন্দ্রিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ টহল আরও বৃদ্ধি ও জোরদার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতিপূর্বে আশ্রয় শিবির কেন্দ্রিক কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার যে একটি সুপারিশ রয়েছে সেটিও কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া নোয়াখালীর ভাসানচরে প্রাথমিক পর্যায়ে একলাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টিও চিন্তা ভাবনা চলছে জোরেশোরে। এর পাশাপাশি রোহিঙ্গারা কিভাবে এনআইডি ও পাসপোর্ট হাতিয়ে নিতে সক্ষম হচ্ছে সে লক্ষ্যে ইসির একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি বৃহস্পতিবার থেকে চট্টগ্রামে কাজ শুরু করেছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবারও চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে জালিয়াতির মাধ্যমে পাসপোর্টের আবেদন করতে গিয়ে আটক হয়েছে এক রোহিঙ্গা যুবক। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে, ২০১৭ সালের আগস্টের পূর্বে দফায় দফায় যে সকল রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে তাদের পরিবারে জন্ম নেয়া সন্তানরা বাংলাদেশী পরিচয়েই বড় হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে এরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থেকে কেউ কেউ স্কুল কলেজের গ-ি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পৌঁছেছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, ২০১৭ সালের আগস্টের পরে যে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে তাদের পরিবারে গত দু’বছরে লক্ষাধিক নবজাতকের জন্ম হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে এসব শিশুর পিতা মাতাকে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিক হিসেবে কার্ড দেয়া হয়েছে। কিন্তু লক্ষাধিক শিশুর পরিচয় কি হবে তার কোন সমাধান মেলেনি। একটি সূত্র জানিয়েছে, যেহেতু এরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবিরে জন্ম নিয়েছে এদের পরিচয় যেমন রোহিঙ্গা হবে, তেমনি নাগরিকত্বও হবে মিয়ানমারের। তবে অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, এসব শিশুদের পক্ষে যদি কখনও জন্মসূত্রে বাংলাদেশী হিসেবে দাবি উঠে তখন এর সমাধান কি হবে। কিন্তু রোহিঙ্গারা এখনই দাবি তুলেছে তাদের যে সমস্ত পরিবারে নবজাতক এদেশে ভূমিষ্ঠ হয়েছে তারা জন্মসূত্রে বাংলাদেশী নাগরিক। সম্প্রতি পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত রোহিঙ্গা ডাকাত নুর মোহাম্মদের কাছে পাওয়া গেছে বাংলাদেশী স্মার্ট কার্ড। নুর মোহাম্মদের মতো কি পরিমাণ রোহিঙ্গা এ জাতীয় কার্ড হাতিয়ে নিয়েছে তা বলা মুশকিল। এছাড়া ১৯৭৮ সালে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের অনেকে একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর তালিকায় নামও লিখিয়ে ফেলেছে। অভিযোগ রয়েছে, রোহিঙ্গাদের কাছে থাকা বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টের অধিকাংশ চট্টগ্রামের হালিশহর ও কক্সবাজারের ঠিকানা রয়েছে। দালালরা এসব এলাকার নাগরিক সাজিয়ে তাদের এনআইডি পাইয়ে দিয়েছে। কক্সবাজারের একজন বিএনপি নেতা ও পৌর কাউন্সিলরের সহায়তায় সহস্রাধিক রোহিঙ্গা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। কক্সবাজারের পাহাড়তলী, হালিমাপাড়া, জিয়া নগর, বর্মা পাড়ায় সহস্রাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশী দাবি করে বসবাস করছে। সূত্র জানায়, ১৯৭৮, ১৯৯১, ১৯৯২, ১৯৯৪, ২০১২, ২০১৬ ও সর্বশেষ ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে দলে দলে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। এদের মধ্যে ১৯৭৮, ১৯৯২ ও ১৯৯৪ সালে অনুপ্রবেশকারীদের অনেকেই বাংলাদেশী পরিচয়পত্র হাতিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। এদিকে, বর্তমানে আশ্রিত ২২ ক্যাম্প ইনচার্জদের কাছে নতুন ভূমিষ্ঠ হওয়া রোহিঙ্গা শিশুদের কোন তালিকা নেই। ২০১৭ সালের ১৭ আগস্টের পর থেকে গত দুইবছরে যেসব রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নিয়েছে এদের তালিকা যেমন মিয়ানমার পক্ষের কাছে নেই, তেমনি সংরক্ষিত নেই ক্যাম্প ইনচার্জ কার্যালয়ে। আশ্রয় শিবির কেন্দ্র্রিক কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার মতে, রোহিঙ্গা পরিবারগুলোতে প্রতিদিন ভূমিষ্ঠ হচ্ছে গড়ে ৬০ জনেরও বেশি শিশু। কোন কোন সংস্থার মতে শতাধিক। এসব পরিসংখ্যান বেসরকারী হলেও ভূমিষ্ঠ হওয়ার সংখ্যা ক্ষেত্রবিশেষে আরও বেশি। কারণ রোহিঙ্গারা জন্মনিয়ন্ত্রণ মানে না। ক্ষেত্রবিশেষে এ পদ্ধতিকে তারা ধর্মীয় বিধি-বিধানবিরোধী বলে বিশ্বাস করে থাকে। ফলে রোহিঙ্গাদের প্রতিটি পরিবারের সদস্য সংখ্যা গড়ে ৭ থেকে ৮ জন। ক্ষেত্রবিশেষে ১০ থেকে ১২ জনও রয়েছে। এত বেশি সন্তান গ্রহণের রেওয়াজের বিপরীতে আরেকটি বিষয় রয়েছে বলে আলোচনা রয়েছে। সেটি হচ্ছে প্রথমত এরা অল্প বয়সে বিয়ে সম্পন্ন করে। দ্বিতীয়ত একজন পুরুষ রোহিঙ্গা একাধিক বিয়ে করতে পারদর্শী। তৃতীয়ত রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নারীরা প্রতিনিয়ত সে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ উগ্র মগদের ধর্ষণের হাত থেকে বাঁচতে এরা সারাবছরই গর্ভবতী হয়ে থাকতে অভ্যস্ত। ইসির বিশেষজ্ঞ টিম চট্টগ্রামে ॥ জালিয়াতির মাধ্যমে রোহিঙ্গারা যে এনআইডি পেয়ে যাচ্ছে সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের একটি বিশেষজ্ঞ টিম বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে পৌঁছেছে। ইসির সুরক্ষিত সার্ভারে কিভাবে নিশ্চিত করে রাখা যায় সে বিষয়ে বিভাগীয় কর্মকর্তাদের তারা প্রশিক্ষণ দেবে। পাসপোর্টের আবেদন করতে গিয়ে রোহিঙ্গা যুবক আটক ॥ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসে পরিচয় গোপন করে পাসপোর্টের আবেদন করতে গিয়ে ধরা পড়েছে এক রোহিঙ্গা যুবক। তার নাম সফিউল হাই (২৪)। পাসপোর্ট আবেদনের সঙ্গে এ রোহিঙ্গা যুবক বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয়পত্র, জাতীয়তা সনদও জমা দিয়েছে। চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলার আবদুল্লাপুরের ঠিকানা ব্যবহার করেছে পাসপোর্টের আবেদনে সফিউল।
×