ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

আরও চার জঙ্গী আটক

ব্যাংকে বিপুল অর্থ মজুদ করেছে আল্লার দল

প্রকাশিত: ১২:৪৮, ২৯ আগস্ট ২০১৯

ব্যাংকে বিপুল অর্থ মজুদ করেছে আল্লার দল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সারাদেশে নাশকতা চালিয়ে সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যাংকে বিপুল অঙ্কের টাকা মজুদকারী জঙ্গী সংগঠন আল্লাহর দলের চার জঙ্গী গ্রেফতার হয়েছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে সরকার উৎখাতসহ নানা দেশে নাশকতা চালানোর নানা তথ্য সংবলিত আলামত। মাত্র দশ দিনের ব্যবধানে খোদ ঢাকা থেকেই জঙ্গী সংগঠনটির আরও চার সদস্য গ্রেফতারের ঘটনায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন জেলায় জঙ্গী সংগঠনটির তৎপরতা থাকার তথ্য মিললেও খোদ ঢাকায় তাদের সংগঠিত হওয়ার তথ্য পাওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। বুধবার ভোরে ঢাকার দক্ষিণখান থানা এলাকা থেকে র‌্যাব-১ এর একটি দল তাদের আটক করে। আটককৃতরা হচ্ছে, সিরাজুল ইসলাম (৪৬), মনিরুজ্জামান মনির (৪০), এসএম হাফিজুর রহমান সাগর (৪৫) ও মোঃ শফিউল মোযনাবীন তুরিন (২৭)। তাদের কাছ থেকে জঙ্গী তৎপরতার আলামতসহ তিনটি পেনড্রাইভ, ১২টি মোবাইল ফোন, জঙ্গী সংগঠনটির লিফলেট, দাওয়াতপত্র ও আয়-ব্যয়ের হিসাবের একটি টালি খাতা উদ্ধার হয়েছে। র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক মোঃ সারওয়ার-বিন-কাশেম আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে জানান, জঙ্গী সংগঠনটির একাধিক ব্যাংকে এ্যাকাউন্ট আছে। তাদের এখন পর্যন্ত ২০টি এ্যাকাউন্টের তথ্য পাওয়া গেছে। এ্যাকাউন্টগুলোতে কোটি টাকার ওপরে জমা আছে। এসব টাকার উৎস সম্পর্কে জানার চেষ্টা চলছে। আবার জঙ্গী সংগঠনটির মূল মূলধনের একটি বড় অংশ নামে-বেনামে দেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংকে গচ্ছিত রাখার তথ্য মিলেছে। মূলত দেশে নাশকতা চালিয়ে সরকার উৎখাত করতেই এসব অর্থ ব্যয় করা হবে বলে জানা গেছে। গ্রেফতারকৃতরা ইসলামের অপব্যাখ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য পরিবেশন করে এবং ভ্রান্ত ইসলামী সঙ্গীতের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করত। আটক সিরাজুল ইসলাম ১৯৯১ সালে প্রথম এসএসসি পরীক্ষা দেয়। পর পর চার বার পরীক্ষা দিয়েও পাস করতে পারেনি। ১৯৯৯ সালে মতিন মেহেদীর হাত ধরে জঙ্গী সংগঠনটিতে প্রবেশ করে। প্রাথমিক পর্যায়ে গ্রাম নায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। পরে গুরুত্ব¡পূর্ণ পদ পেয়ে পাবনা, ঝিনাইদহ, খুলনা, রাজশাহী ও নওগাঁয় দায়িত্ব পালন করেছে। ২০১৪ সালে যুগ্ম অধিনায়ক হয়। তার মূল কাজ হচ্ছে জঙ্গী সংগঠনটির গ্রেফতারকৃত সদস্যদের মামলা মোকাদ্দমাসহ অন্যান্য বিষয়াদি তদারকি করা। আর মনিরুজ্জামান ১৯৮০ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করে। ১৯৯৭ সালে এসএসসি, ১৯৯৯ সালে এইচএসসি এবং পরে অনার্স ও মাস্টার্স পাস করে। ১৯৯৭ সালে সংগঠনটিতে যোগ দেয়। জঙ্গী সংগঠনটির আর্থিক ব্যবস্থাপনা, দাওয়াতি ব্যবস্থাপনা, রিক্রুটিংসহ বিভিন্ন বিষয়াদি দেখাভাল করাই ছিল তার কাজ। গ্রেফতারকৃত হাফিজুর রহমান সাগর ১৯৭৫ সালে খুলনায় জন্মগ্রহণ করে। ১৯৯০ সালে এসএসসি, ১৯৯২ সালে এইচএসসি এবং পরবর্তীতে বিএসসি ও এমএসসি পাস করে। দাওয়াতি কর্মকা- পরিচালনা করাই ছিল তার মূল কাজ। আর শফিউল মোযনাবীন তুরিন একটি পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ৭ম সেমিস্টার পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। ২০১০ সালে দুই বন্ধুর মাধ্যমে জঙ্গী সংগঠনটিতে যোগ দেয়। র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক বলছেন, জঙ্গী সংগঠনটির ভাষ্য মোতাবেক বর্তমানে দেশে যুদ্ধাবস্থা চলছে। এজন্য তারা ঈদ, কোরবানি, হজ ইত্যাদি পালন করেন না। জুমার নামাজ আদায় করেন না। প্রতি ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে শুধুমাত্র দুই ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে। ইসলামের কালেমার সঙ্গে শেষ নবী (হযরত মুহম্মদ সা.) এর নাম যুক্ত করার ক্ষেত্রেও জঙ্গী সংগঠনটির ভিন্নমত আছে। গ্রেফতারকৃতরা মনে করে, বর্তমান সময়ের জন্য মতিন মেহেদী আল্লাহর বিশেষ দূত হতে পারেন। সংগঠনটি গণতন্ত্র ও বাংলাদেশের সংবিধানে বিশ্বাসী নয়। তাদের মূল লক্ষ্য অনুকূল পরিবেশে দেশের মধ্যে নাশকতায় লিপ্ত হয়ে গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের মাধ্যমে শান্তি-শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলা এবং তাদের নিজেদের কাঠামো অনুযায়ী শাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
×