ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

চক্রের দুই সদস্য গ্রেফতার

মালয়েশিয়ায় প্রবাসীকে কৌশলে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়

প্রকাশিত: ১১:১৭, ৭ আগস্ট ২০১৯

মালয়েশিয়ায় প্রবাসীকে কৌশলে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এরা কৌশলে মালয়েশিয়া প্রবাসী কিছু লোককে অপহরণ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এই চক্রের কয়েকজন সদস্য থাকে মালয়েশিয়ায়। বাকিরা বাংলাদেশে। কাজের সন্ধানে মালয়েশিয়ায় কয়েকজন প্রবাসীকে অপহরণ করত ওরা। আর দেশে থাকা এই অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা ভাল মানুষের ভান করে অপহৃতদের উদ্ধারে সহায়তার নামে তাদের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করে। আর মুক্তিপণের টাকা নেয়া হতো বিকাশের মাধ্যমে। মুক্তিপণের টাকা হাতে পেলে দেশীয় অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা জানিয়ে দিতো মালয়েশিয়ায় থাকা সহযোগীদের। তারপর মালয়েশিয়ায় ছেড়ে দেয়া হতো অপহৃত প্রবাসী ব্যক্তিকে। এ রকম একটি চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিট। এরা হচ্ছে, হামিদ হোসেন (২৪) ও আমান উল্লাহ (৪৩)। গ্রেফতারকৃতদের গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারের টেকনাফ এলাকায়। সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার শারমিন জাহান জানান, মালয়েশিয়ায় অবস্থান করা অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা প্রথমে সেখানে অবস্থানরত কোন একজন বাংলাদেশী ব্যক্তিকে টার্গেট করে। পরে তার সঙ্গে দেশী নাগরিক হিসেবে পরিচিত হয়। এরপর ভাল চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী টার্গেট করা ব্যক্তিকে নিয়ে যাওয়া হয় অজ্ঞাত স্থানে। সেখানে আটকে রেখে করা হয় নির্যাতন। সেই নির্যাতনের দৃশ্য ভিডিও করে বিভিন্ন এ্যাপসের মাধ্যমে পাঠানো হয় পরিবারের সদস্যদের কাছে। পরে চক্রের সদস্যরা তাদের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে। অনেকটা বাধ্য হয়ে পরিবারের সদস্যরা মুক্তিপণ দিলে অপহৃত ব্যক্তিকে ছেড়ে দেয়া হয়। সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, প্রায় আড়াই বছর আগে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলেন পাবনার আমিনপুর থানাধীন শহীদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। মালয়েশিয়ায় মাহবুব হোসেন নামে একজনের সঙ্গে শহীদুলের পরিচয় হয়। ভাল বেতনের কাজ দেয়ার কথা বলে মালয়েশিয়ায় অপহরণকারী চক্রের হোতা মাহবুব তাকে সেখানে (মালয়েশিয়ার) একটি অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখে নির্যাতন করতে থাকে। মাহবুব তার মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত সহযোগীদের মাধ্যমে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে। পরবর্তীতে দেশে তার স্বজনদের মোবাইলে ফোন করে শহীদুলের আর্তনাদ শুনিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে। এমনকি মুক্তিপণের টাকা দেয়ার জন্য দেশের একাধিক বিকাশ নম্বরও দেয়। শহীদুলের স্বজনরা অপহরণকারীদের দাবি অনুযায়ী দুই লাখ টাকা দেয়ার পর চক্রটি তাকে ছেড়ে দেয়। পরবর্তীতে এই ঘটনায় ২০১৬ সালের পয়লা ফেব্রুয়ারি পাবনার আমিনপুর থানায় একটি মামলা (নম্বর ২) দায়ের করেন ঘটনার শিকার শহীদুল ইসলামের ভাই। সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ তদন্ত করে। পরবর্তীতে সিআইডির অর্গানাইজ ক্রাইমের কাছে হস্তান্তর করা হলে তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতায় অনুসন্ধান শুরু করে। একপর্যায়ে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আবু সাঈদের নেতৃত্বে গত ৩০ জুলাই প্রথমে হামিদকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের সূত্র ধরে ৩ আগস্ট আমান উল্লাহকেও গ্রেফতার করা হয়। সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গ্রেফতারকৃত হামিদ ও আমান উল্লাহ জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, টেকনাফ থানা এলাকার বাসিন্দা মাহবুব হোসেন দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছে। সে সেখানে কয়েকজন সহযোগী নিয়ে একটি অপহরণকারী চক্র গড়ে তুলেছে। সেই চক্রের সদস্যরা মালয়েশিয়ায় সদ্য যাওয়া ব্যক্তিদের টার্গেট করত। তাদের কৌশল ছিল ভাল চাকরি দেয়ার কথা বলে অপহরণ করা। অপহরণের পর মুক্তিপণ হিসেবে বাংলাদেশী সহযোগীদের মাধ্যমে অর্থ নিতো। তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, শহীদুলের ঘটনায় অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা তার স্বজনদের কাছ থেকে মোট ৮টি বিকাশ নম্বরে ২ লাখ টাকা নিয়েছিল। সেসব বিকাশ নম্বরের তথ্য সংগ্রহের পর সিআইডির কর্মকর্তারা জানতে পারেন, ৪টি বিকাশ নম্বর চক্রের এক সদস্য খোরশেদের নামে, ১টি হামিদের নামে, বাকিগুলো মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত চক্রের প্রধান মাহবুবের নামে রেজিস্ট্রেশন করা। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, মাহবুবের নির্দেশে তারা অপহৃত ব্যক্তির স্বজনদের কাছ থেকে মুক্তিপণের টাকা নিয়েছে। প্রত্যেকটি অপহরণের ঘটনায় তারা একটি নির্দিষ্ট অংশ ভাগ পেতো বলেও জানিয়েছে। গ্রেফতারের আগে মালয়েশিয়ায় অপহরণকারী চক্রের হোতা মাহবুবের মালিকানাধীন একটি দোকান পরিচালনা করত আমান উল্লাহ। এই চক্রের আরও কয়েকজন সদস্যকে তারা শনাক্ত করেছেন। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
×