ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাং

প্রকাশিত: ০৮:১০, ৫ আগস্ট ২০১৯

 ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাং

রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে কিশোর অপরাধ বাড়ছে শীর্ষক সংবাদটি রীতিমতো উদ্বেগজনক বৈকি। গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও ভাবিয়ে তুলছে বিষয়টি। অভিভাবকরাও স্বভাবতই উদ্বিগ্ন, আতঙ্কিত ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। কি জানি, যদি নিজের সন্তানটিও কোন না কোনভাবে জড়িয়ে পড়ে কিশোর অপরাধী দলের সঙ্গে? আর সবাই জানেন, একবার কোন অপরাধ, তা সে ছোট-বড় যাই হোক না কেন, কম বেশি জড়িয়ে পড়ে পুলিশের খাতায় নাম উঠলে আজীবন বয়ে বেড়াতে হয় দুষ্কর্ম ও কলঙ্কের বোঝা। যা আত্মীয়স্বজনসহ সমাজের জন্য মুখ দেখানোর ক্ষেত্রে রীতিমতো দায় হয়ে দাঁড়ায়। বরগুনায় প্রকাশ্য দিবালোকে জনসমক্ষে নয়ন বন্ড গ্রুপ কর্তৃক রিফাতকে রামদা দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা, রাজধানীর দিলু রোডে বিয়ের আসরে ঢুকে বখাটে কর্তৃক কনের বাবাকে হত্যা অথবা ক্রিকেট খেলাসহ নানা তুচ্ছ কারণে এক কিশোর গ্রুপ কর্তৃক আরেক কিশোর গ্রুপের কিশোর হত্যার ঘটনা বাড়ছে দিন দিন। এটি একটি উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশের জন্য আদৌ শুভ লক্ষণ নয়। নানা কারণে দেশে কিশোর অপরাধ বাড়ছে। রাজধানীর উত্তরাতেই রয়েছে কয়েকটি গ্রুপ। সেগুলোর নামেরও নানা বাহার- নাইন স্টার, ডিস্কো বয়েজ, বিগ বস ইত্যাদি। এ রকম আরও একাধিক গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে রাজধানী ঢাকা, বন্দর ও বাণিজ্যনগরী চট্টগ্রাম ও দেশের অন্যত্র। অধিকাংশই কিশোর বয়সী- নাইন-টেন থেকে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। এসব গ্রুপের আবার গ্যাং লিডারও রয়েছে, যারা অপেক্ষাকৃত অল্প শিক্ষিত এবং মস্তান শ্রেণীর। অধিকাংশই ফেসবুক, ইন্টারনেটে আসক্ত, মাদকাসক্ত, ছোটখাটো ছিনতাই-রাহাজানির সঙ্গে যুক্ত। পুলিশের খাতায় নাম লেখানো উচ্ছৃঙ্খল বিপথগামী সন্তান। এক গ্রুপের সঙ্গে অন্য গ্রুপের সম্পর্ক মোটেও ভাল নয়- প্রধানত এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে। ফলে মারামারি, হানাহানি, খুনোখুনী তদুপরি প্রতিশোধ স্পৃহা লেগেই থাকে। এদের পেছনে গডফাদার থাকাও বিচিত্র নয়। কিশোর-তরুণদের এভাবে বখে যাওয়া, দলাদলি, গ্রুপিং-লবিং, পাড়া-মহল্লায় আধিপত্য বিস্তার, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা ইত্যাদিকে বলা হয় ‘গ্যাং কালচার।’ আইনের পরিভাষায় জুভেনাইল সাবকালচার। এ নাকি নগরায়ণের সঙ্গে সম্পর্কিত। এরা প্রায়ই তুমুল হর্ন বাজিয়ে তীব্র গতিতে রাজপথ দাপিয়ে বেড়ায় হোন্ডায়, সমবয়সী মেয়েদের সকাল-বিকেল উত্ত্যক্ত করে, ফেসবুকে আপত্তিকর স্ট্যাটাস দেয়, মোবাইলে অশ্লীল ছবি ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করে, খেলার মাঠে হামলা চালায় প্রতিপক্ষের ওপর, সর্বোপরি ছিনতাই-চাঁদাবাজি-মাদক তো আছেই। পাঠকের মনে পড়তে পারে ঐশীর কথা, যে তার পুলিশ অফিসার বাবা ও মাকে কফির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে মেরে ফেলেছিল প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে। অথবা চট্টগ্রামের ঘটনাই বা কম কী? যেখানে সহপাঠী বন্ধুরা ছাদে হিংস্র কুকুর লেলিয়ে দিয়ে মেরে ফেলেছিল হিমাদ্রীকে। কিশোরদের এসব অপরাধমূলক কর্মকান্ডের জন্য শুধু মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ফেসবুক, ইন্টারনেট ইত্যাদিকে দোষ দেয়া যাবে না। শুধু থানা-পুলিশ দিয়েও হবে না। এক্ষেত্রে সবিশেষ গুরু দায়িত্ব রয়েছে সমাজ, পরিবার ও অভিভাবকদের, বিশেষ করে মা-বাবা, ভাইবোনের। খেলাধুলা কিংবা পার্টির ছলে ছেলেটি কোথায় যায়, কী করে, কাদের সঙ্গে মেশে তা নিয়মিত রাখতে হবে নজরদারিতে। পাড়া-মহল্লার মুরব্বিরাও এক্ষেত্রে দেখভাল করতে পারেন। যথাযথ ভালবাসা দিয়ে সন্তানদের বোঝালে বিপথগামী হওয়া থেকে রক্ষা পেতেও পারে কিশোর প্রজন্ম।
×