ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

শুভ্র ঘোষ

সচেতন হোন

প্রকাশিত: ১১:৩৫, ১ আগস্ট ২০১৯

সচেতন হোন

কবি শামসুর রাহমানের একটি কাব্যগ্রন্থের শিরোনাম হলো- ‘উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ’। আজ সারাদেশ জুড়ে যে হারে গুজব ছড়িয়ে পড়ছে এবং গণপিটুনিতে নির্দোষ মানুষের হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে তাতে নির্দ্বিধায় বলা যায়- ‘অদ্ভুত গুজবের পিঠে চলেছে স্বদেশ।’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বারবার সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে বলছেন যে কে গুজবে কান দিবেন না। কিন্তু কে শোনে কার কথা! শামসুর রাহমান ‘পণ্ডশ্রম’ কবিতায় গুজবের ডালপালা ছড়ানোর পর প্রকৃত পরিস্থিতি ছুটছে এইভাবেÑ এই নিয়েছে ঐ নিল যাঃ! কান নিয়েছে চিলে, চিলের পিছে মরছি ঘুরে আমরা সবাই মিলে।’ আমরা কেউ কানে হাত দিচ্ছে না, চিলের পিছেই অযথা পিটিয়ে। ‘পদ্মা সেতুতে শিশুর কাটা মাথা লাগবে’Ñ এই কথা কি কোন আধুনিক শিক্ষিত মানুষ বিশ্বাস করতে পারেন? ছেলেধরা সন্দেহে রাজধানী ঢাকার একটি স্কুলে সন্তানকে ভর্তি করতে যাওয়া একজন মাকে কীভাবে পিটিয়ে হত্যা করা যায়? নিজের মেয়েকে আদর করার সময় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের একটি স্কুলে কীভাবে পিটিকে হত্যা করা যায় একজন বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী বাবাকে? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হইতে যেখানে জ্ঞানের আলো ছড়ানোর কথা, সেইখানে কেন এখনও কুসংস্কারের ভূত দূর হচ্ছে না? আমাদের এত উন্নয়ন ও অগ্রগতি কি তা হলে বৃথা যাবে? ছেলেধরার গুজবে দেশে গণপিটুনির ঘটনা যেভাবে বাড়ছে তাতে প্রতিবন্ধী, অপ্রকৃতিস্থ ও অচেনা বেশভূষার মানুষজন সন্দেহভাজন হিসেবে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছেন। অথচ জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিকাশ ও চর্চায় আমাদের এই উপলব্ধি হওয়া উচিতÑ বিনা বিচারে যে কাউকে হত্যা করা অন্যায়। এই ক্ষেত্রে সন্দেহভাজন অপরাধীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপর্দ করাই নিয়ম। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপর্দ করার পরও অনেক সময় দেখা যায় সুবিচার পাওয়া যায় না। এই কারণে হতাশ জনতা অকুস্থলেই দোষী বা সন্দেহজনক ব্যক্তি শাস্তি দিতে উঠেপড়ে লাগে, যদিও এটা আইনের পরিপন্থী ও একটি গণতান্ত্রিক সমাজে মোটেও কাম্য নয়। অনেক সময় প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করতে ‘গণপিটুনি’ নামক অস্ত্রও ব্যবহার করা হয়, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। গণপিটুনিতে হত্যা সভ্যতা ও মানবতাবিবর্জিত অপরাধ। আমরা যেন নিজের ভিতর একজন খুনীকে লালন না করি, সে ব্যাপারে আমাদের অবশ্যই সচেতন হতে হবে। কলকলিয়াপাড়া, মাগুরা থেকে
×