ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বের ব্যয়বহুল শহর

প্রকাশিত: ০৮:৫৪, ২ জুলাই ২০১৯

বিশ্বের ব্যয়বহুল শহর

ভূপেন হাজারিকার একটি গান এক সময় মানুষের মুখে মুখে ফিরত। এখনও সে গানের আবেদন ম্লান হয়ে যায়নি। গানটি হলো- আমি এক যাযাবর। গানটির একটি চরণ এরকম: আমি দেখেছি অনেক গগনচুম্বী অট্টালিকার সারি/আবার তারই ছায়াতেই দেখেছি অনেক গৃহহীন নরনারী। এই কথাগুলোয় আধুনিকতার সমান্তরালে বৈষম্যের বাস্তবতা পরিস্ফুট। ঢাকা শহর বিলাসীদের জন্য রীতিমতো ‘স্বর্গে’ পরিণত হয়েছে। এখানকার বাতাসে যতই ক্ষতিকর পদার্থ থাকুক না কেন, পথে অসহনীয় যানজট লেগে থাকুক না কেন কিংবা সাধারণ নাগরিক জীবনে সুযোগ-সুবিধার ঘাটতি থাকুক না কেন, বিত্তবানদের জন্য রয়েছে অর্থের বিনিময়ে বিলাসবহুল জীবনযাপনের সুযোগ। এখন শিল্প ও শিল্পীদের কাক্সিক্ষত শহর ফ্রান্সের প্যারিসে বিদেশীদের বসবাস করা যতটা ব্যয়বহুল, ঠিক সমপরিমাণ ব্যয়বহুল হলো মধ্যম আয়ের দেশ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবসম্পদ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মার্সার প্রকাশিত একটি তালিকায় এমন চিত্রই উঠে এসেছে। রিপোর্টটি জানাচ্ছে, ব্যয় আরও বেড়েছে ঢাকায় বসবাসকারী প্রবাসীদের। গত বছর প্রবাসীদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহরের তালিকায় ঢাকা ৬৬তম হলেও এ বছর তা এসে দাঁড়িয়েছে ৪৭তম অবস্থানে। ঢাকার সঙ্গে যৌথভাবে একই অবস্থানে আছে ফ্রান্সের অন্যতম পর্যটন নগরী প্যারিস। গতবারের মতো এবারও এ তালিকার শীর্ষে রয়েছে হংকং। নিউইয়র্কে বসবাসের খরচকে মানদন্ড ধরে অন্য শহরের তুলনা করে ব্যয়বহুল শহরের এ তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে। এ বছর পাঁচশতাধিক শহরে জরিপ করা হলেও তালিকায় রাখা হয়েছে ২০৯টি। জরিপে প্রতিটি শহরের ২০০টি বিষয়ের তুলনা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাসা ভাড়া, যাতায়াত, খাবার, পোশাক, নিত্যপণ্য ও বিনোদনের খরচ। প্রতিটি পণ্যের দাম মার্কিন ডলারের বিপরীতে ওই দেশের মুদ্রার মানের সঙ্গে তুলনা করে নির্ধারণ করা হয়েছে। এই জরিপের ফল প্রকাশের পর সহজেই বোঝা যায় ব্যয়বহুল হলেও ঢাকায় বিদেশীদের আগমন থেমে নেই। রাজধানী শহর হিসেবে ঢাকা তার জনসংখ্যার দিক থেকে সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করেছে বহু বছর আগেই। এখন পৌনে দু’কোটি লোকের এই মহানগরীতে মানুষের গায়ে গা লাগার মতো দশা। তারপরও বাংলাদেশ নানাভাবে বিশ্ব দরবারে অনুসরণীয় হয়ে উঠেছে। এখানে আয়োজিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইভেন্ট। এসব ইভেন্টে যোগ দিতে যেমন বিদেশীরা আসছেন, তেমনি চলমান অনেক উন্নয়ন প্রকল্পে যুক্ত হতেও আসছেন বিদেশীরা। প্যারিস ও ঢাকার নাম এক পঙক্তিতে উচ্চারিত হওয়ার ফলে এক বিচারে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিংই হয়েছে। এতে বিদেশীদের কাছে ঢাকা তথা বাংলাদেশের আকর্ষণ আরও বাড়বে। ঢাকাবাসীদের যত সঙ্কট-সমস্যাই থাকুক না কেন, চড়া মূল্য পরিশোধের ফলে বিদেশীদের বোঝার উপায় নেই যে, ব্যয়বহুল এই শহরে বেশিরভাগ স্থানীয় অধিবাসীরই জীবনমান এখনও কাক্সিক্ষত মাত্রায় পৌঁছতে পারেনি। খাদ্যে ভেজাল, পানিতে দূষিত পদার্থ, বায়ুতে বিষ নিয়ে জনচাপে ভারাক্রান্ত যে মহানগরীটি ভেতরে ভেতরে বিপন্ন হয়ে উঠছে, সেটির উত্তরণ ঘটানোর জন্য নাগরিক সচেতনতা ও সরকারী সক্রিয়তার কোন বিকল্প নেই। সরকার সেই কাজটি সম্পর্কে সতর্ক ও সচেতন। তাই ঢাকাবাসীর কিছুটা ভরসা তো রয়েছেই।
×