ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

চার লাখ বিদেশী বাংলাদেশে কাজ করছেন

প্রকাশিত: ১০:০৩, ১ জুলাই ২০১৯

 চার লাখ বিদেশী বাংলাদেশে কাজ করছেন

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের আওতাভুক্ত কলেজগুলো থেকে পাস করে বের হওয়া শিক্ষার্থীদের ৪৬ শতাংশই চাকরির জন্য অন্তত তিন বছর অপেক্ষা করছেন। অন্যদিকে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষ জনবলের অভাব মেটাতে চার লাখ বিদেশী নাগরিককে নিয়োজিত করছে। এর জন্য বিলিয়ন ডলার দেশ থেকে চলে যাচ্ছে। দেশের বাজারের চাহিদার তুলনায় বাংলাদেশের তরুণদের প্রশিক্ষিত করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জাতীয় অর্থনীতি। রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেন্টার অন বাজেট এন্ড পলিসির উদ্যোগে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনের সম্মেলন কক্ষে জাতীয় বাজেটে উচ্চশিক্ষায় বরাদ্দ বিষয়ক এক আলোচনা সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. আতিউর রহমান এসব তথ্য জানান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও সেন্টার অন বাজেট এন্ড পলিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোঃ কামাল উদ্দীনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল এবং উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. তৈয়বুর রহমান। আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ। ড. আতিউর রহমান বলেন, একটা বড় প্রতিবন্ধকতা হলো আমাদের ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থান করা। ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৬ লাখ ছেলেমেয়েকে কর্মসংস্থান করার কথা বলা হলেও সরকার বড়জোর সাত-আট লাখের কর্মসংস্থান করতে পারে। বাকিরা সবাই কর্মসংস্থানবিহীন। সরকারী চাকরির মাধ্যমে এতগুলো ছেলেমেয়েকে কর্মসংস্থান দিতে পারব না। তাই ব্যক্তি খাতে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। তাদের গ্র্যাজুয়েট বানিয়ে ছেড়ে দিব, তা কিন্তু নয়। আমাদের উচিত তাদের উদ্যোক্তা তৈরি করা, যাতে তারা আরও ১০ জনকে কর্মসংস্থান দিতে পারে। সেটিই হবে বিশ^বিদ্যালয়গুলোর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। শিক্ষার্থীদের চাকরির বাজারের চাহিদা অনুযায়ী কর্মদক্ষতা বাড়ানোর জন্য বিশ^বিদ্যালয়ের সঙ্গে দেশের শিল্প-ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করতে হবে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, বিশ^বিদ্যালয়কে এমনভাবে দাঁড় করাতে হবে যাতে শিল্প কারখানাগুলো বিনিয়োগ করে। কারণ এই মানবসম্পদ পরবর্তীতে তারাই ব্যবহার করবেন। তাদের অবদান কিভাবে বিশ^বিদ্যালয়ে নিয়ে আসা যায় সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। আমরা বিশ^বিদ্যালয়ের সঙ্গে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগের সম্পর্ক স্থাপন করতে পারিনি। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের অবশ্যই চাকরির বাজারের প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মদক্ষতা থাকতে হবে। চাকরির বাজার কেমন গ্র্যাজুয়েট চায়, তাদের কী কী দক্ষতা থাকা দরকার বলে চাকরিদাতারা মনে সেটি বিবেচনায় নিয়ে কোর্স কারিকুলাম করতে হবে। উচ্চশিক্ষায় বাজেটের বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষা খাতের বাজেটের বৃদ্ধির যে হার উচ্চশিক্ষায় বাজেট সেই হারে বাড়ছে না। উচ্চশিক্ষার বাজেট বাড়লে তা অন্য সকল খাতের উন্নয়নের সঙ্গে এর সম্পর্ক। এটি বাড়লে জিডিপি বাড়ে। এছাড়া এ সমস্যা সমাধানে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প-ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কার্যকর সংযোগ ও সহযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। কারিগরি শিক্ষার প্রসার করতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। উদ্বোধনী বক্তব্যে বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান বলেন, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ইতোমধ্যে বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ডেস্ক খোলা হয়েছে। এ বিষয়টি দেখার জন্য লোকবল সমৃদ্ধ অফিস খোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তিনি প্রশ্ন করেন ক্যাম্পাসে কি কোন বিদেশী ছাত্র চোখে পড়ে? কারণ আমরা বিদেশী ছাত্র আনার জন্য কোন বিজ্ঞাপন দেইনি। বিদেশী শিক্ষক, শিক্ষার্থী থাকা এবং দেশীয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও তাদের অনুপাত বিশ^বিদ্যালয় র‌্যাংকিং নির্ধারণে একটি বড় সূচক। এই সূচকে আমাদের কোন পয়েন্ট নেই। তাই বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীকে সামনে রেখে মুজিব বর্ষে অন্তত ১০ জন বিদেশী শিক্ষার্থীকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে আনব। তাদের জন্য ‘বঙ্গবন্ধু স্কলারশিপ ফর ফরেইন স্টুডেন্টস’ নামে তহবিলও গঠন করেছি। এছাড়া গবেষণাগার ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি কেনার জন্য প্রায় ৫৪৪ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি করেছি। এ সময় তিনি উচ্চশিক্ষিত মানব সম্পদ তৈরি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক অগ্রগতি ও উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
×