ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতজুড়ে সরকারী চিকিৎসকদের গণইস্তফার ঢেউ

প্রকাশিত: ১০:২৮, ১৫ জুন ২০১৯

 ভারতজুড়ে সরকারী চিকিৎসকদের গণইস্তফার ঢেউ

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, নয়াদিল্লী, মুম্বাই ও হায়দরাবাদসহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসকদের কর্মবিরতির মধ্যেই শুক্রবার পর্যন্ত সরকারী হাসপাতালগুলোর অন্তত ১৭০ চিকিৎসক পদত্যাগ করেছেন। গত মঙ্গলবার থেকেই পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসকরা ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন। চতুর্থ দিনের মতো শুক্রবার তারা ধর্মঘট পালন করেছেন। খবর আনন্দবাজার, ওয়ান ইন্ডিয়া ও এনডিটিভির। গত মঙ্গলবার হাসপাতালে মারা যাওয়া এক রোগীর আত্মীয়রা এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হসপিটালের দুই জুনিয়র চিকিৎসককে অপদস্থ করে। এর প্রতিবাদে ধর্মঘট ডাকা হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির হুঁশিয়ারিকে না মেনে চিকিৎসকদের তরফ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা নিরাপত্তা না পাবেন ততক্ষণ তারা কাজে ফিরবেন না। শুধু এনআরএস নয় রাজ্যের সব হাসপাতালেই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এর জের ধরেই কলকাতার আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ সরকারী হাসপাতালে প্রায় ৮০ চিকিৎসক একযোগে ইস্তফা দিয়েছেন। এর মধ্যে অনেক সিনিয়র চিকিৎসকও রয়েছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। রাজ্যের হাসপাতালগুলোতে যে পরিস্থিতি চলছে তা পুরোপুরি প্রশাসনিক ব্যর্থতা। এর দায় রাজ্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী এড়াতে পারেন না। এই দায় তাকেই নিতে হবে। সিনিয়র চিকিৎসকদের অভিযোগ, রাজ্যের প্রত্যেকটি হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং পরিকাঠামোয় দুরবস্থা চলছে। এই অবস্থায় চিকিৎসকদের পাশে না থেকে মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে চিকিৎসকদের হুমকি দিলেন তা তারা মেনে নিতে পারছেন না। এমন অবস্থায় ইন্টার্নদের পাশাপাশি সিনিয়র ডাক্তাররা কার্যত রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন। আর তা শুরু হলো আরজিকর হাসপাতালের ৭০ থেকে ৮০ চিকিৎসকের গণইস্তফার মধ্য দিয়েই। সরকারী ডাক্তারদের গণইস্তফার ঢেউ, ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ॥ শুরু হয়েছিল সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল দিয়ে। তার পর থেকেই রাজ্যজুড়ে সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসকদের গণইস্তফা চলছে। নীলরতন সরকারী মেডিক্যাল কলেজ (এনআরএস) থেকে শুরু করে, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ, আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ, এসএসকেএম, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের মতো একাধিক হাসপাতালে গণইস্তফা দিয়েছেন চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর অনুযায়ী, শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত চার অধ্যক্ষ এবং ১৭০ চিকিৎসক ইস্তফা দিয়েছেন। নজিরবিহীন এই পরিস্থিতিতে গোটা রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাটাই ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। গোটা পরিস্থিতির জন্য রাজ্য প্রশাসন এবং মুখ্যমন্ত্রীকেই দায়ী করছে চিকিৎসক মহল। সরাসরি না বললেও ইস্তফার কারণ হিসেবে প্রশাসনিক অসহযোগিতাকেই কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন চিকিৎসকরা। ১৭ জুন দেশজুড়ে হাসপাতাল ধর্মঘটের ডাক দিল আইএমএ ॥ দিল্লীর এইমসে সমস্ত পরিষেবা বন্ধের ঘোষণা ছিল আগে থেকেই। এনআরএস-এ জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে সমর্থন করতে শামিল হলো দেশের প্রায় সব রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজ। তার মধ্যেই ১৭ জুন সোমবার সারা দেশের হাসপাতাল ধর্মঘটের ডাক দিল ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)। চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, জরুরী ও রুটিন পরিষেবা চালু থাকবে। তবে আউটডোর এবং অন্যান্য পরিষেবা বন্ধ থাকবে। ফলে সোমবার সারা দেশেই চিকিৎসা পরিষেবায় ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে। অন্যদিকে শুক্রবারের কর্মবিরতিতে কার্যত শামিল হয়েছে গোটা দেশ। চিকিৎসকদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে ভারতের বিভিন্ন স্থানে ॥ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসকদের কর্মবিরতি ও প্রতিবাদকে সমর্থন জানিয়ে নয়াদিল্লী, মুম্বাই ও হায়দরাবাদের চিকিৎসকরাও একদিনের কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন। চতুর্থ দিনের মতো শুক্রবার তারা ধর্মঘট পালন করেছেন। বৃহস্পতিবার এইমস-এর চিকিৎসকরা হেলমেট পরে এবং মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে প্রতীকী প্রতিবাদে অংশ নেন। তবে পরিষেবা সচল ছিল। ওই অবস্থাতেই সব বিভাগে চিকিৎসা দিয়েছেন চিকিৎসকরা। সেই সঙ্গে বৃহস্পতিবারই ঘোষণা করে দেয়া হয়েছিল যে, শুক্রবার হাসপাতালের সব পরিষেবা বন্ধ থাকবে। সারা দেশের সব মেডিক্যাল কলেজকেও এক দিনের এই প্রতীকী কর্মবিরতিতে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল এইমস-এর রেসিডেন্ট ডক্টরস এ্যাসোসিয়েশন। কলকাতার আন্দোলনের রেশ ছড়িয়েছে দক্ষিণের দুই রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলেঙ্গানাতেও। সেখানকার মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী এবং চিকিৎসকরাও এনআরএসের আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তবে এখানে পরিষেবায় খুব বেশি প্রভাব পড়েনি।
×