ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রাজিলে শুরু হতে যাওয়া কোপা আমেরিকা ফুটবলে দেশের জার্সিতে শিরোপা জিততে চান আর্জেন্টাইন অধিনায়ক

শেষ সুযোগ কাজে লাগাতে মরিয়া মেসি

প্রকাশিত: ১২:৩৫, ১২ জুন ২০১৯

শেষ সুযোগ কাজে লাগাতে মরিয়া মেসি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ জাতীয় দল আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে বারবার বেদনায় ভারাক্রান্ত হতে হয়েছে লিওনেল মেসিকে। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপ, ২০১৫ ও ২০১৬ কোপা আমেরিকায় তীরে এসে তরী ডোবে মেসির দলের। তিন আসরেই ফাইনালে হেরে কান্নার সাগরে ডুবতে হয় দিয়াগো ম্যারাডোনার উত্তরসূরিদের। এবার আরও একবার দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময়ের শিরোপা বন্ধ্যত্ব ঘোচানোর সুযোগ পাচ্ছে আর্জেন্টিনা। ১৪ জুন (বাংলাদেশ সময় ১৫ জুন শনিবার সকাল) ব্রাজিলে শুরু হতে যাওয়া কোপা আমেরিকা ফুটবলে আর্জেন্টিনা মিশন শুরু করবে কাক্সিক্ষত শিরোপার লক্ষ্যেই। আর ট্রফি জিতে মেসি কিংবদন্তি হবেন বলে বিশ্বাস অনেকেরই। অনেকের মতে, এবারই আর্জেন্টাইন অধিনায়কের শেষ সুযোগ জাতীয় দলকে কিছু দেয়ার। এর পেছনে তাদের যুক্তি, এবার না পারলে পরবর্তী বড় আসরে মেসি খেলতে পারেন ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে। তখন মেসির বয়স হবে ৩৫ বছর। কিন্তু ধারণা করাই যায়, তখন আর মেসি জাতীয় দলের হয়ে খেলবেন না। কেননা ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের পরই অবসর নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সবার অনুরোধে আবার ফিরেছেন। এখন আসন্ন কোপা আমেরিকাতে সফল হতে না পারলে আরও তিন/চার বছর মেসির খেলার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এ কারণে কোপাতেই মেসির শেষ সুযোগ দেখছেন সবাই। সম্প্রতি মেসির চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো উয়েফা নেশন্স কাপ জিতেছেন পর্তুগালের হয়ে। এর আগে তিনি জিতেছেন ইউরো। যে কারণে রোনাল্ডো জাতীয় দলের হয়ে দুটি ট্রফি জিতলেও মেসির ভা-ার এখনও শূন্য। সবশেষ দুইবার কোপা আমেরিকার ফাইনালে চিলির কাছে পেনাল্টিতে হেরে শিরোপা বঞ্চিত হয় আর্জেন্টিনা। ফলে ২০১৪ সালে ব্রাজিলের মাটিতে জার্মানির কাছে বিশ্বকাপ ফাইনাল হারের পর দুই বছরের মধ্যে আরও দুইবার ট্রফি হাতছাড়া করতে হয় দলটিকে। দক্ষিণ আমেরিকার শক্তিশালী দলটি কোপা আমেরিকার শেষ পাঁচবারের মধ্যে চারবারই ফাইনাল খেলেছে। তবে প্রতিবারই তাদের রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। সর্বশেষ ১৯৯৩ সালে আসরটিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আলবেসেলেস্তারা। বারবার বেদনায় ভারাক্রান্ত হলেও এবার সম্ভব বলে বিশ্বাস করছেন মেসি। এবারের আসর জিতে তারা গত ২৬ বছরের শিরোপার অপেক্ষা ঘোচাবেন। পাঁচবারের ফিফা ব্যালন ডি’অর জয়ী মেসি ফুটবলের ইতিহাসে নিজ ক্লাব বার্সিলোনার হয়ে একের পর এক শিরোপার দেখা পেলেও জাতীয় দলের হয়ে তার সাফল্যের চিত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইতোমধ্যেই বার্সিলোনার জার্সি গায়ে চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ও ১০টি লা লিগা শিরোপা জেতা হয়ে গেছে। কিন্তু মেসির এই সাফল্য কোনভাবেই আর্জেন্টিনার সাফল্যের সঙ্গে তুলনা করা যায় না। ৩১ বছর বয়সী মেসিও খুব ভালভাবেই জানেন ক্লাবের সঙ্গে জাতীয় দলের সাফল্য তুলনা করতে গেলে তার হাতে সময়ও ফুরিয়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সাক্ষাতকারে মেসি বলেন, জাতীয় দলের হয়ে কিছু একটা জয় করে আমি ক্যারিয়ারের ইতি টানতে চাই। অন্তত সম্ভাব্য শেষ চেষ্টাটুকু করতে চাই। আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে ইতোমধ্যেই মেসির চারটি বড় টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা হয়ে গেছে। কিন্তু একটিতেও সাফল্য ধরা দেয়নি। যার মধ্যে ছিল গত দুই কোপা ফাইনাল। দুটিতেই পেনাল্টিতে চিলির কাছে হার মানতে হয়েছে আর্জেন্টিনাকে। তবে সবচেয়ে দুঃখজনক ছিল ঐতিহাসিক মারাকানা স্টেডিয়ামে ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির কাছে পরাজয়। এই মাঠেই আগামী ৭ জুলাই এবারের কোপা আমেরিকার ফাইনাল ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে। জার্মানির বিপক্ষে ফাইনালে পরাজয়টি ছিল টানা তিন বছর ফাইনালে আর্জেন্টিনার হতাশার আরেকটি চিত্র। ওই ম্যাচের পরই হতাশ মেসি আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দেন। বিশ্বকাপের হারের পরে মেসি ও তার সতীর্থদের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল। এ বিষয়ে আর্জেন্টাইন অধিনায়ক বলেন, সবদিক থেকেই আর্জেন্টাইন সমর্থকরা আমাদের আক্রমণ করেছিল। যদিও মেসির অবসরের সিদ্ধান্ত মাত্র ছয় সপ্তাহ স্থায়ী হয়েছিল। গত বছর রাশিয়া বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের শেষ ম্যাচে মেসির হ্যাটট্রিকে ইকুয়েডরকে ৩-১ গোলে পরাজিত করে আর্জেন্টিনা মূল পর্বের টিকেট পায়। কিন্তু এর আগেও বহুবার মেসি তার বার্সা ফর্মকে জাতীয় দলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়েছে। ফ্রান্সের কাছে শেষ ষোলোতে ৪-৩ গোলে পরাজিত হয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছিল আলবিসেলেস্তারা। এবারের কোপা আমেরিকায় আর্জেন্টিনা দলটি অনেকটাই অনভিজ্ঞ। ব্রাজিলের মাটিতে পুনর্গঠিত এই দলকে নিয়ে লড়াই করার মানসিকতাই দেখিয়েছেন মেসি। আত্মবিশ্বাসী এই তারকা বলেন, অন্য সব আসরের মতো একই আশা নিয়ে আমরা টুর্নামেন্টে মাঠে নামব। এই দলের অনেকের জন্য এটা প্রথম অফিসিয়াল টুর্নামেন্ট। কিন্তু এই বিষয়টি আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ের স্বপ্নকে মোটেই ফিকে করবে না।
×