ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

আল বিদা মাহে রমজান

প্রকাশিত: ১০:২৭, ২ জুন ২০১৯

 আল বিদা মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ অবারিত রহমতের প্রতিশ্রুত মহান ইবাদতের মাস ক্রমেই আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যাচ্ছে। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর সামনে আসছে পবিত্র ঈদ, ঈদ-উল- ফিতর; রোজা ভাঙ্গার উৎসব। মহানবী (স.) বলেছেন- লিস সায়িমি ফারহাতান, অর্থাৎ রোজাদারের দুটি আনন্দ : একটি রোজা ভাঙ্গার পর আর অপরটি মহান আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের সময়। আজ চতুর্দিকে ঈদের বাজার, ঈদের কেনাকাটা, ঈদের পোশাক। আমাদেরকে সিয়াম সাধনার শিক্ষার আলোকে ঈদের আনন্দকে নির্মল করতে হবে। আমাদের পোশাক-আশাকে আনতে হবে নিষ্কলুষতার আদর্শ, ইসলামী আবহ, তাকওয়ার পোশাক। পোশাক পরিচ্ছদকে বাদ দিয়ে দেহমনকে সুস্থ রাখা সম্ভব নয়। দেহের জন্য যেমন উপযুক্ত খাদ্যের প্রয়োজন তেমনি প্রকৃতির খেয়ালি অত্যাচার থেকে দেহকে রক্ষা করার জন্য পোশাকের প্রয়োজন। পদমর্যাদা অনুযায়ী পোশাকের তারতম্য ঘটে। যেমন পিয়ন, চাপরাশি, হোটেলের বয়, বাবুর্চি, ড্রাইভার, পাইলট, সৈনিক, পুলিশ এদের পোশাক সাধারণ মানুষের পোশাক হতে ভিন্ন। পোশাকের প্রকারভেদে মানসিক অবস্থারও পরিবর্তন হয়। রাজকীয় পোশাক পরলে রাজসুলভ মনোভাবের সৃষ্টি হয়। পুলিশের পোশাক পরলে মেজাজ কঠোর হয়। পুরুষ ও নারীর পোশাকেও ব্যবধান আছে। পুরুষের পোশাক নারীর জন্য উপযুক্ত নয়। নারীর পোশাকও পুরুষের উপযুক্ত নয়। সকলের জন্য ঈদের পোশাকের একটি মার্জিত রূপ ও রুচি থাকা চাই। দেশের, জাতিভেদের তারতম্য থাকলেও পোশাকের মাঝে একটা শালীনতা থাকা দরকার। যে ধরনের পোশাক পড়লে মনে কুপ্রবৃত্তি জন্মে না, অহঙ্কার ও আস্ফালনে নাকের শিরা-উপশিরা স্ফীত হয়ে ওঠে না, অথচ সেগুলো সত্যি শরীরবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সঙ্গতিপূর্ণ। মহানবী হযরত মুহম্মদ (সঃ) বলেছেন, গোড়ালির নিচে পায়ের যে অংশে কাপড় ঝুলে তা দোজখে যাবে। হে বসনাবৃত, ওঠ। অনন্তর ভয় প্রদর্শন কর এবং তোমার প্রতিপালকের মহিমা প্রচার কর, তোমার পোশাক পবিত্র কর আর মলিনতা দূরীভূত কর। (সূরা মোদ্দাসসের, আয়াত ৩,৪) ‘হে আদম, বংশধরগণ, আমি অবশ্য তোমাদের প্রতি এরূপ পরিচ্ছদ অবতীর্ণ করেছি যা তোমাদের আবৃতাঙ্গ আচ্ছাদিত ও সুসজ্জিত করে। এবং সংযমশীলতার পরিচ্ছদই উত্তম। ইহা আল্লাহর নিদর্শনাবলীর অন্তর্গত, যেন তোমরা স্মরণ কর।’ ইসলামের দৃষ্টিতে পোশাক নেই। এর ওপর কোন বিধি-নিষেধও নবী-পয়গম্বরগণ দিয়ে যাননি। আবহাওয়ার সঙ্গে মিল রেখে শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য যে কোন পোশাকই ব্যবহার করা চলে। এর প্রমাণ আমরা পাই হযরত আব্বাস (রা.) এবং হযরত ওমর (রা.)এর বাণী হতে। যা ছিল নিম্নরূপ : যা ইচ্ছা আহার কর, পান কর ও পরিধান কর, যে পর্যন্ত অমিতব্যয়িতা ও অহঙ্কার এর সঙ্গে মিশ্রিত না হয়। পোশাকের মধ্যে সাদা পোশাক স্বাস্থ্যসম্মত সে বিষয়ে শরীরবিজ্ঞানীদের দ্বিমত নেই। কেননা সাদা পোশাকে মন যেমন সাদা ও প্রফুল্ল হয় অন্য কোন পোশাকে তা হয় না। মনের সৌন্দর্য ও প্রফুল্লতাই যে সুষ্ঠু চিন্তাধারার মাপকাঠি ও সবল দেহের উপাদান তা সবাইকে স্বীকার করতেই হবে। দ্বিতীয়ত, সাদা কাপড়ে ময়লা জমলে তা চোখে পড়ে। অন্য যে কোন রঙের কাপড়ে তা দেখা যায় না। শরীরে ময়লা লাগা, ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পোশাক ব্যবহার করা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। তাই সাদা কাপড়ই উত্তম। এজন্য হযরত (সাঃ) সাদা কাপড়কে সর্বোৎকৃষ্ট বলেছেন। সাদার পরেই সবুজের স্থান। সবুজ রং সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে চোখের দৃষ্টিশক্তিকে প্রখর করে। সূর্যের যে সাতটি রং আছে সবুজ তার মধ্যে অন্যতম। যদি গাছের পাতা এই সূর্যরশ্মি না পায় তবে সবুজ রং ধারণ করতে পারে না। হযরত (স.) সবুজ রঙের পোশাকও ব্যবহার করতেন। সুতিবস্ত্রের অভ্যন্তরে অসংখ্য ছিদ্র থাকে। গ্রীষ্মকালে শরীর ঘামলে সুতিবস্ত্র তা শোষণ করে নিতে পারে। এছাড়া সুতিবস্ত্রের মধ্যে বায়ু প্রবেশ করে ঘামকে বাষ্পে পরিণত করে ও শরীরকে শীতল করে। রেশমি বস্ত্রে তা হয় না। ঠিক এর উল্টো ক্রিয়া হয়। ফলে শরীর অসুস্থ হবার বিশেষ সম্ভাবনা থাকে। যেহেতু পুরুষ ছেলেরা কঠোর পরিশ্রম করে, ফলে শরীর ঘর্মাক্ত হয়, তাই তাদের জন্যই শুধু রেশমি বস্ত্র নিষিদ্ধ কিন্তু মেয়েদের জন্য নয়। দেহকে আবৃত করতে যেমন জামা-কাপড় দরকার, মস্তিষ্ক ও পদযুগল রক্ষা করতেও তেমনি পরিচ্ছদ দরকার। এজন্য হযরত (সা.) টুপি,পাগড়ি ও জুতা ব্যবহার করতেন। মানুষ সৌন্দর্যকে ভালবাসে। তাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পোশাক-পরিচ্ছদ, সুগন্ধি ও বিলাসবহুল জিনিসপত্র নিয়ে জীবন কাটাতে পছন্দ করে। এতে মনের দিক থেকে যেমন উন্নতি হয়, দেহের দিক থেকেও তেমনি উৎকর্ষ সাধিত হয়। হযরত (সাঃ) এর জীবনচরিত ও উপদেশ বাণীর মধ্যেও এর ব্যতিক্রম দেখা যায়নি। হযরত (সাঃ) এর সহচরগণ সাক্ষ্য দিয়েছেন, নবীজীর একটি সুরমাকাঠি ছিল। উহা দ্বারা তিনি প্রতি রজনীতে বাম চোখে দু’বার এবং ডান চোখে তিনবার সুরমা দিতেন। পরিচ্ছদের মধ্যে একটি বস্তু রাসূল (স.) বেশি পছন্দ করতেন তা হলো সুগন্ধি। কেউ সুগন্ধি তাঁকে উপহার দিলে তা কোনদিন তিনি ফিরিয়ে দেননি।
×