ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

গণভবনে পেশাজীবীদের সম্মানে দেয়া ইফতার মাহফিলে প্রধানমন্ত্রী

মাদক সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে

প্রকাশিত: ১৩:২৮, ২২ মে ২০১৯

মাদক সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শান্তি ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব না। জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাস বিশ্বব্যাপী সমস্যা। এই সমস্যা বাংলাদেশেও ছিল। আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় আমরা জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাস দমন করতে সক্ষম হয়েছি। সন্ত্রাস-মাদক, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। মঙ্গলবার গণভবনে পেশাজীবীদের সম্মানে তার দেয়া ইফতার মাহফিলে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একটি দেশের উন্নতি করতে হলে অবশ্যই শান্তি প্রয়োজন। আমরা চাই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখে জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে। এ জন্য দেশবাসীর কাছে আমি দোয়া চাই। সবার সহযোগিতা চাই। আমরা সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছি। আমরা উন্নয়নের ধারাবাহিকতা শুরু করেছি, সেই ধারা অব্যাহত রাখব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং লাখো শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা দেশটাকে স্বাধীন করে দিয়েছেন। তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলার কাজ শুরু করলেন। মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় হাতে পেয়েছিলেন। যখন দেশটি অর্থনৈতিকভাবে গড়ে তুলছিলেন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকরা জাতির পিতাকে হত্যা করে। আমরা দুই বোন দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যাই। সেই কালরাতে আমরা হারিয়েছিলাম আমার মা-বাবা-ভাইসহ আত্মীয় স্বজন। আর বাঙালী জাতি হারিয়েছিল তাদের স্বপ্নদেষ্টাকে। উন্নত জীবনের সারথীকে। সেই দিন আমরা ঘাতকের জাতি হিসেবে পরিচিতি পাই বিশ্বে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দেশবাসীর সহযোগিতা চাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে গড়ে তুলতে চাই। জাতির পিতা যে স্বপ্ন নিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছিলেন, সেই সুফল যেন ঘরে ঘরে পৌঁছাতে পারি। বাঙালী জাতিকে বিশ্বে সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে যেতে পারি। মঞ্চে আসন গ্রহণ করে আমন্ত্রিত অতিথিদের পবিত্র মাহে রমজানের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রচ- গরমের মধ্যে গণভবনে আসার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুরুতেই বলেন, প্রতি বছর রমজানে আমরা এক সঙ্গে হই। আমি সব সময় ঘুরে ঘুরে সবার সঙ্গে দেখা করি। কিন্তু আমি দুঃখ প্রকাশ করছি, ঘুরে ঘুরে কারও সঙ্গে দেখা করতে পারলাম না। কারণ ১৫-১৬ দিন হলো আমার চোখের অপারেশন হয়েছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, কি করব? বয়স হয়েছে, চোখে ছানি পড়ে গেছে। তিনি বলেন, বাইরে যেতে ডাক্তারের নিষেধ আছে। আজকে যারা এখানে উপস্থিত হয়েছেন, সবাইকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পবিত্র মাহে রমজানে দেশবাসী এবং বিদেশে বসবাসকারী বাঙালীদের মাহে রমজানের মোবারকবাদ জানাই। রমজান মাস দোয়া কবুলের মাস। সবাই বাংলাদেশের জন্য দোয়া করবেন। এর আগে বিকেল ৬টা ২৬ মিনিটে তিনি ইফতার প্যান্ডেলের ভেতরে প্রবেশ করেন। প্রতি বছর প্যান্ডেল ঘুরে ঘুরে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেও এবার চোখের ছানি অপারেশনের কারণে তিনি তা করেননি। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, প্রবীণ সাংবাদিক দৈনিক জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক তোয়াব খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আখতারুজ্জামান, কৃষিবিদ ড. মির্জা আবদুল জলিল, এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে-আলম ও ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাহ উদ্দিনসহ আরও কয়েকজন। এছাড়াও ইফতার মাহফিলে অংশ নেন দৈনিক জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়, প্রবীণ আইনজীবী এ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, আবদুল বাছেত মজুমদার, এ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক একে আজাদ চৌধুরী, আইইবির সভাপতি প্রকৌশলী আবদুস সবুর, বিএফইউজের সভাপতি মোল্লা জালাল, মহাসচিব শাবান মাহমুদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক প্রাণ গোপাল, বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কনক কান্তি বড়ুয়া, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ শহিদুল্লাহ সিকদার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান, নাট্য ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, মামুনুর রশিদ, পীযুষ বন্দ্যোপ্যাধ্যায়, চিত্র নায়ক ফেরদৌস, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ইকবাল আর্সনাল, স্বাচিপ নেতা অধ্যাপক ডাঃ আবদুল আজিজ এমপি, ব্যবসায়ী নেতা কাজী আকরাম, বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মালিক ও উর্ধতন কর্মকর্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ অন্যরা। প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনে এ ইফতারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের পদচারণায় বিকেল থেকেই মুখর হয়ে উঠে গণভবন প্রাঙ্গণ। বিকেল ৪টা থেকে অতিথিরা গণভবনে প্রবেশ করতে থাকেন। গণভবনের সবুজ লনে বিশাল প্যান্ডেলে অতিথিদের বসার ব্যবস্থা করা হয়। ইফতার শুরু হওয়ার আগেই একে একে অতিথিরা প্যান্ডেলে আসন গ্রহণ করেন। একে অন্যের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে খোঁজখবরও নেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও প্রেস উইংয়ের সদস্যরা আগত অতিথিদের অভ্যর্থনা জানান। সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এর আগে গত রবিবার আলেম, ওলামা, মুক্তিযোদ্ধা, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটি, আত্মীয়-স্বজন ও পরিবার-পরিজন নিয়ে ইফতার করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
×