ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যয় বরাদ্দ ১শ’ ১৫ কোটি টাকা

মণিহার থেকে মুড়লী হচ্ছে ফোর লেন

প্রকাশিত: ০৯:৫০, ২১ মে ২০১৯

মণিহার থেকে মুড়লী হচ্ছে ফোর লেন

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোরে আরও একটি ফোর লেনের সড়ক নির্মিত হচ্ছে। এক শ’ পনেরো কোটি টাকা ব্যয়ে শহরের মণিহার থেকে মুড়লী মোড় পর্যন্ত আধুনিকমান সম্পন্ন সড়কটি নির্মিত হতে যাচ্ছে। এতে যশোর শহরের বকচর এলাকার জনগণের বছরের পর বছরের দুর্ভোগের অবসান হবে। অবশ্য সড়কের বকচর এলাকার দুই যুগের ভঙ্গুর অংশটি বিশেষ পদ্ধতিতে নির্মাণ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রায় সাড়ে ছয়শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে যশোর-বেনাপোল ও যশোর-খুলনা মহাসড়কের নির্মাণ কাজ চলছে। এ দুটি সড়কই দশ ফুট বাড়িয়ে ২৪ ফুটের স্থলে ৩৪ ফুটে নির্মিত হচ্ছে। এরমধ্যে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের কাজ হচ্ছে শহরের দড়াটানা মোড় মুজিব সড়ক থেকে শুরু হয়ে বেনাপোল চেকপোস্ট পর্যন্ত। আর যশোর-খুলনা মহাসড়কের কাজ শহরতলীর পালবাড়ি মোড় থেকে শুরু হয়ে নওয়াপাড়ার রাজঘাট পর্যন্ত। এ হিসেবে যশোরের আলোচিত যুগের পর যুগ জনগণের দুর্দশার অন্যতম স্থান বকচরের ভাঙ্গাচোরা সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারবিহীন অবস্থায় পড়ে আছে। এ বিষয়টি বিবেচনায় এনে যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগ পৃথক প্রকল্প গ্রহণ করে। ব্যস্ততম এ সড়কটি পুনঃনির্মাণে তারা মাঠে নামে। ২০১৮ সালের শেষ নাগাদ তারা সড়কটি পুনঃনির্মাণে মাপজোক ও এস্টিমেট তৈরি করে। শহরের মণিহার থেকে মুড়লী পর্যন্ত ২ পয়েন্ট ৯ কিলোমিটার সড়কটি তারা ফোর লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প গ্রহণ করে। এ বাবদ ব্যয় ধরেছে এক শ’ ১৫ কোটি টাকা। একই সঙ্গে সড়কের দু’পাশে নির্মিত হবে ড্রেন। সড়কটি খুঁড়ে নতুন করে নির্মাণ করা হবে। বর্তমানে সড়কটি চওড়া রয়েছে ২৪ ফুট। আর ফোর লেনের হলে এটির চওড়া হবে ৫০ ফুটের বেশি। ফলে সড়কটি দ্বিগুণেরও বেশি চওড়া হচ্ছে। মাঝে থাকবে সড়ক ডিভাইডার। সূত্র জানায়, মুড়লী থেকে মণিহার পর্যন্ত সড়কটি ৪ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত খোঁড়া হবে। এরপর বালি ফিলিং, পরে বালি ও ইটের খোয়া, এরপর বালির সঙ্গে পাথরের খোয়া মিক্সিং করে ফিলিং করা হবে। এরপর ম্যাকাডাম ও পিচসহ অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করা হবে। এক্ষেত্রে সড়কের আলোচিত বকচরের ভাঙ্গাচোরা স্থানটি বিশেষভাবে নির্মাণ করা হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। তারা বলেছে, সড়কের ভাঙ্গাচোরা ওই স্থানটির নির্মাণ কাজে বিশেষভাবে নজর দেবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। তারা ওই এলাকার সয়েল টেস্ট করে দেখেছে মাটিতে সমস্যা রয়েছে। নিচে স্যাঁতসেতে ভাব রয়েছে। এ কারণে ওই এলাকায় সড়কটি সহজে নষ্ট হয়ে যায়। একই সময়ে নির্মিত পালবাড়ি মোড় থেকে মুড়লী পর্যন্ত সড়কের অন্যান্য স্থান মোটামুটি ভাল থাকলেও বকচরের স্থানটি অনেক আগেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে পিচ উঠে যাওয়া ভাঙ্গা স্থানে ইটের সোলিংয়ের মাধ্যমে কোনমতে মেরামত করে যানবাহন চলাচল উপযোগী করা হয়েছে। কিন্তু সেই স্থানেরও এখন বেহাল অবস্থা। এ কারণে নতুন করে ফোর লেনের সড়ক নির্মাণের সময় বকচরে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজনে নিচে ঢালাইসহ অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। সূত্র জানায়, তিন বছর আগে পালবাড়ি মোড় থেকে দড়াটানা হয়ে মুড়লী মোড় পর্যন্ত সড়কটি নির্মাণে ব্যয় হয় ৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। কিন্তু এক বছর পেরোতে না পেরোতেই সড়কের বকচর অংশের স্থানটি ভেঙ্গেচুরে গর্তের সৃষ্টি হয়। ব্যস্ততম সড়কটির এ ভাঙ্গা স্থান দিয়ে প্রতিদিন হাজারো যানবাহন চলাচল করে। আর পিচ না থাকায় সড়কের ধুলিঝড়ের ভয়াবহ দুর্ভোগে অতিষ্ঠ এলাকাবাসীসহ ব্যবসায়ীরা। যুগের পর যুগ ধরে এ দুর্ভোগ থেকে তারা পরিত্রাণ চায়। এদিকে, মণিহার থেকে মুড়লী পর্যন্ত ফোর লেনের এ প্রকল্পের কাজ বর্তমানে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। এখান থেকে প্রস্তাব আকারে প্রকল্পটি একনেকের বৈঠকে ওঠানো হবে। এরপর টাকা ছাড় পেলেই টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হবে। এসব প্রক্রিয়া শেষে চলতি বছরের শেষ নাগাদ ওইস্থানে ফোর লেনের কাজ শুরু হতে পারে বলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়। এ ব্যাপারে যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, মণিহার থেকে মুড়লী পর্যন্ত ফোর লেনের প্রকল্পটি বর্তমানে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী তিন মাসের মধ্যে বা এ বছরের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। আর এটি হলে শহরের ওই স্থানে যানজটসহ সকল সমস্যার সমাধান হবে। তিনি বলেন, বকচর অংশের স্থানটির বিষয়ে আমরা অবগত। দীর্ঘদিনের এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি। আশা করা যায়, এ প্রকল্পের মাধ্যমেই জনগণের দুর্ভোগের অবসান ঘটবে।
×