ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

আলোচনা সভা

থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা আরও সহজ করার দাবি

প্রকাশিত: ০৯:৫৫, ৯ মে ২০১৯

 থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা আরও  সহজ করার দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ থ্যালাসেমিয়া শনাক্তকরণে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং এই রোগের আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা গ্রহণ আরও সহজসাধ্য করার দাবি জানানোর মধ্য দিয়ে বুধবার পালিত হয়েছে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস। দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, দেশে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের চিকিৎসাসেবা গ্রহণ আরও সহজসাধ্য করতে সরকারী হাসপাতালগুলোতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা উচিত। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, সচেতনতার অভাব, অপ্রতুল চিকিৎসাব্যবস্থা এবং বাস্তবমুখী কার্যক্রমের অভাবে থ্যালাসেমিয়া দেশের স্বাস্থ্যসেবার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ রোগের চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। তাই অনেক দরিদ্র রোগী আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস উপলক্ষে বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের নতুন ভবনে আলোচনা সভার আয়োজন করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডাঃ আমিনুল হাসানের সভাপতিত্বে আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ডাঃ বেনজীর আহমদ, অধ্যাপক ডাঃ এম এ খান, অধ্যাপক ডাঃ মাজহারুল হক তপন, অধ্যাপক ডাঃ মাহবুবুর রহমান, অধ্যাপক ডাঃ আসাদুল ইসলাম, অধ্যাপক ডাঃ রেজাউল করিম কাজল প্রমুখ। অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, থ্যালাসেমিয়া একটি জন্মগত রোগ। বিবাহের আগে পাত্র-পাত্রীর রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগের বাহক শনাক্তকরণ করে সহজে এটা প্রতিরোধ করা যায়। এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি অত্যন্ত জরুরী। রোগটি জন্মগত হলেও সঠিক চিকিৎসা পেলে রোগীরা স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারেন। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা যাতে রক্ত পরীক্ষা, রক্ত গ্রহণ ও চিকিৎসাসহ সমন্বিত সেবা পান সেজন্যই সরকারী হাসপাতালগুলোতে ওয়ান স্টপ সেন্টার চালু করা হবে। সরকারী হাসপাতালগুলো ইতোমধ্যে এই রোগের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বোনম্যারো প্রতিষ্ঠান সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। অনেক রোগী ইতোমধ্যে কোটি টাকার চিকিৎসাসেবা অল্প খরচে গ্রহণ করেছে। সরকারী হাসপাতালগুলোতে এই রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা আরও সহজসাধ্য করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। অধ্যাপক ডাঃ বেনজীর আহমদ বলেন, থ্যালাসেমিয়ার জিন বহন করছে, দেশে এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি। এ রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা সাড়ে তিন লাখ। বংশগত এই রোগ নিয়ে প্রতি বছর দেশে সাত হাজার শিশু জন্ম নিচ্ছে। থ্যালাসেমিয়ার বাহকদের মধ্যে বিয়ে হলে এ রোগের বিস্তার ঘটে। থ্যালাসেমিয়া রোগীর বাহ্যিক তেমন লক্ষণ নেই। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তশূন্যতা দেখা দেবে, পেটের প্লিহা বড় হয়ে যাবে, তাকে ফ্যাকাশে দেখাবে। এই রোগের চিকিৎসা হচ্ছে যতদিন বাঁচবেন, ততদিন নিয়মিত নতুন রক্ত গ্রহণ করতে হবে কিংবা বোনম্যারো প্রতিস্থাপন করতে হবে। ব্যয়বহুল চিকিৎসা হওয়ায় রক্তে এ রোগের জীবাণু আছে কিনা তা পরীক্ষা করা দরকার বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ডাঃ এম এ খান। অন্য বক্তারা বলেন, ডিএনএ এ্যানালাইসিস পদ্ধতির মাধ্যমে খুব সহজেই থ্যালাসিমিয়া রোগ নিরূপণ করা যায়। ডিএনএ শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় রক্ত উৎপাদন করে। এই ডিএনএ সুস্থ কিনা তা পরীক্ষার জন্যই এ্যানালাইসিস পদ্ধতি। এ পদ্ধতির দুটি কাজ। একটি হলো রক্ত পরীক্ষা করে থ্যালাসেমিয়া রোগ চিহ্নিত করা। এর জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির শরীর থেকে মাত্র দুই সিসি রক্ত দরকার হয়। অন্যটি হলো গর্ভধারণের ১০ থেকে ১৪ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভে বেড়ে ওঠা শিশুর ভ্র‍ুণ থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত কিনা তা নিশ্চিত হওয়া।
×