ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তুমি শুধু পঁচিশে বৈশাখ

প্রকাশিত: ১২:০৩, ৮ মে ২০১৯

তুমি শুধু পঁচিশে বৈশাখ

আজ ২৫ বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৯তম জন্মদিন। ২৫ বৈশাখের গুরুত্ব বিশেষ করে বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা ও বাঙালীর জীবনে অপরিসীম। রবীন্দ্রনাথ বাঙালীর জীবনে এমনভাবে জড়িয়ে আছেন, যাতে প্রতিদিন তাঁকে স্মরণ করতে হয়। এবারের ১৪২৬ সালের ২৫ বৈশাখ পালিত হচ্ছে তাঁর জন্মের এক শ’ ঊনষাটতম বার্ষিকী। ‘আজ আমার জন্মদিন পঁচিশে বৈশাখÑ পঁচিশ বছর পূর্বে এই পঁচিশে বৈশাখে আমি ধরণীকে বাধিত করতে অবতীর্ণ হয়েছিলুমÑ জীবনে এমন আরও অনেকগুলো পঁচিশে বৈশাখ আসে এই আশীর্বাদ করুন। জীবন অতি সুখের।’ ২৫ পেরিয়ে ২৬-এ পা রাখার দিন কবি শ্রীশচন্দ্র মুজমদারকে এ চিঠিটি লিখেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। এর আগে তিনি জন্মদিন নিয়ে কাউকে কিছু বলেননি, লেখেননিও। এর পরের বছর থেকে ঠাকুরবাড়িতে প্রথম জন্মদিন পালন শুরু হয় মেজদাদা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর উদ্যোগে। ভারত বিভক্তির পর তৎকালীন পূর্ববাংলায় বেশ গুরুত্বের সঙ্গে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালিত হতে থাকে। এভাবেই ১৯৬১ সালে আসে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী। সে সময় পাকিস্তানী শাসক শ্রেণীর বিরোধিতার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেও এ দেশের মানুষ পালন করেছে প্রিয় কবির শততম জন্মদিন। একপর্যায়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধ করা হয়। সে সময় সকল শ্রেণীর মানুষের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ ওঠে। মানুষ এই নিষিদ্ধের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়। এ দেশের মানুষ তাদের সুখ-দুঃখে, আন্দোলন-সংগ্রামে যে কবিকে কাছে পেয়েছে, যাঁর কবিতা, গান ব্যক্তিগত ও সমাজ জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে মানুষকে অনুপ্রাণিত-উদ্দীপ্ত করেছে এবং সান্ত¡না যুগিয়েছে, এ দেশের মানুষ সে কবিকে কখনও ছাড়তে পারেনি। বিশেষ করে জাতীয় জীবনের নানা বিপর্যয়ে, ঘোর দুর্বিপাকের দিনে তাঁকে সঙ্গে রেখেছে, তাঁর সম্মান ও মর্যাদা অক্ষুণœ রেখেছে, রেখেছে অন্তরের ভালবাসায়। শিলাইদহ, শাহজাদপুর ও পতিসরের এই দেশে বিশাল মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত রবীন্দ্রনাথ। তাঁর অমর সৃষ্টি ‘আমার সোনার বাংলা’কে জাতীয় সঙ্গীত করা হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রাণের উচ্ছ্বসিত আবেগের সঙ্গে প্রতিবছর নানাভাবে ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হয়েছে ও হচ্ছে রবীন্দ্র জন্মোৎসব। একই মর্যাদায় পালিত হয় তাঁর প্রয়াণ দিবস বাইশে শ্রাবণও। রবীন্দ্রনাথের প্রতি শ্রদ্ধায় এবং বিশেষ করে তাঁর সম্পর্কে অধিকতর চর্চার জন্য সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার। বিশ^ভারতীর আদলে শাহজাদপুরের বিশ^বিদ্যালয়টি অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যম-িত এক উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। রবীন্দ্রনাথ বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি। এই ভাষার উন্নয়নে তাঁর অবদান তুলনাহীন। রবীন্দ্রনাথ এ ভাষাকে বিশ্ব অঙ্গনে সুপরিচিত ও সুখ্যাত করিয়েছেন। চিন্তায়-মননে, আনন্দে, বিষাদে তিনি বাঙালীর নিত্যসঙ্গী। আমাদের জীবনে আলোর পথে, জ্ঞানের পথে, শিক্ষা তথা আনন্দের পথে চলার প্রেরণা তিনি। তিনি উৎসাহ যোগান অন্ধকার দূর করার, পাশাপাশি কূপম-ূকতা ও সঙ্কীর্ণতা দূর করতে। রবীন্দ্রনাথ শুধু বাংলা ভাষার একজন কবি, লেখক, গীতিকার, দার্শনিক বা অন্য আরও বিশেষণে অভিহিত মহাপুরুষই নন, তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয়, আমাদের সবার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা তিনি নিজেই বলে গেছেন। তাঁর সে কথাটি হলোÑ ‘মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক/আমি তোমাদেরই লোক।’ আসলেই তাই। আমাদের প্রতিদিনের জীবনে তাঁকে প্রতিদিন একবার নয়, বহুবার স্মরণ করতে হয়। আমাদের প্রাণে, চিন্তায়, চেতনায়, মননে, রুচিতে তিনি সর্বক্ষণ উপস্থিত। আমাদের প্রাণের ভালবাসার এই কবির স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।
×