ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

তারেকের ওপর বাড়ছে বিএনপি নেতা কর্মীদের চাপা ক্ষোভ

প্রকাশিত: ১১:০৫, ৩ মে ২০১৯

 তারেকের ওপর বাড়ছে বিএনপি নেতা কর্মীদের চাপা ক্ষোভ

শরীফুল ইসলাম ॥ দলীয় এমপিদের শপথসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর দলের নেতাকর্মীদের চাপা ক্ষোভ বাড়ছে। খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার পর বার বার ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভিন্নস্তরের কমিটি গঠন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন, জাতীয় কাউন্সিলের অনুমতি না দেয়া ও একক সিদ্ধান্তে এমপিদের শপথ নিয়ে সংসদে যাওয়ার নির্দেশ দেয়ায় স্বল্পসংখ্যক নেতা ছাড়া দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী তার ওপর অসন্তুষ্ট। যে কোন সময় ঘটতে পারে চাপা ক্ষোভের বিস্ফোরণ। সূত্র জানায়, গতবছর ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দী হওয়ার ক’দিন আগেই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে তার অনুপস্থিতিতে তারেক রহমান ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা মিলে যেন যে কোন সিদ্ধান্ত নেন সেই নির্দেশ দেন। কিন্তু তিনি কারাবন্দী হওয়ার পর তারেক রহমান স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করলেও একক সিদ্ধান্ত নেন। এ কারণে খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার এক মাসের মধ্যেই দলের সিনিয়র নেতারা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি চরম অসন্তুষ্ট হন। অবশ্য চাপা ক্ষোভ বিরাজ করলেও দলীয় পদ হারানোর ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। এক পর্যায়ে লন্ডন প্রবাসী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের বিভিন্নস্তরের কমিটি পুনর্গঠন করতে গিয়েও দলের নেতাকর্মীদের ক্ষুব্ধ করে তোলেন। তিনি দলে তার অনুসারী কিছু নেতার মাধ্যমে বিভিন্নভাবে খবর নিয়ে তার পছন্দ অনুসারে কমিটি পুনর্গঠনের কাজ করতে থাকেন। এ কারণে সিনিয়র নেতারা ক্ষুব্ধ হন। এর প্রতিক্রিয়ায় কমিটি পুনর্গঠনের পর পদবঞ্চিতদের সঙ্গে তারেক রহমানের দেয়া কমিটির বিরোধ কোন কোন ক্ষেত্রে মারামারির পর্যায়েও গড়ায়। খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার কয়েক মাস পর থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হয়। মুক্ত খালেদা ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে তারেক রহমান দলের সিনিয়র নেতাদের জানিয়ে দিলেও এক পর্যায়ে তিনিই নির্বাচনের পক্ষে মত দেন। এমন কি ড. কামালের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনও তার নির্দেশেই হয়। আবার এ জোট গঠনের সময় বিকল্পধারার সভাপতি বি চৌধুরীকেও তার নির্দেশেই সরিয়ে দেয়া হয়। যদিও দলের অধিকাংশ সিনিয়র নেতাই এভাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের বিপক্ষে ছিলেন না। তবে প্রকাশ্যে তারা এ জোট গঠনের বিরোধিতা করেননি। যে কারণে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পরও বিএনপির অনেক নেতাই এ জোটের কর্মকান্ডে সক্রিয় অংশ নেননি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে তারেক রহমানের নির্দেশে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিতরণ করা হয়। এক পর্যায়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সামনে বসিয়ে লন্ডন থেকে স্কাইপিতে তারেক রহমানই তাদের সাক্ষাতকার নেন। এবং অধিকাংশ সংসদীয় আসনে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মতামত উপেক্ষা করে প্রার্থী চূড়ান্ত করেন। এ সময় দলের প্রার্থী চূড়ান্তকরণে ব্যাপক মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তোলে খোদ বিএনপি নেতাকর্মীরাই। এ নিয়ে বিএনপির নয়াপল্টন ও গুলশান কার্যালয়ে ভাংচূর করে মনোনয়নবঞ্চিতরা। শুধু তাই নয়, নির্বাচনকালে প্রতিটি সংসদীয় এলাকায় মনোনয়নবঞ্চিতরা সরাসরি দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করে। এর ফলে সাধারণ নেতাকর্মীরাও দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকে। এ কারণে ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ফল বিপর্যয় ঘটে। তিন শ’ আসনের মধ্যে মাত্র ছয় আসনে বিজয়ী হয় বিএনপি। নির্বাচনে ভরাডুৃবির পর লন্ডন থেকে দেয়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ফল প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়ে নতুন নির্বাচনের দাবি জানায়। পরে এ নির্বাচন বাতিল করে নতুন নির্বাচনের দাবিতে নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপিও দেয়া হয়। পাশাপাশি নতুন নির্বাচনের দাবিতে মানববন্ধন, অনশন ও গণশুনানিসহ বিভিন্ন কর্মসূচীও পালন করে বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার এক বছরের মাথায় দলের বর্তমান নির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা জাতীয় কাউন্সিল ডেকে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানায়। এ দাবির পক্ষে জনমত বাড়তে থাকলে দলের মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতারা জাতীয় কাউন্সিল করতে তারেক রহমানের অনুমতি চান। তারেক রহমান আপাতত জাতীয় কাউন্সিল না করার পক্ষে মত দিলে বিএনপি নেতাকর্মীরা হতাশ হন, বিশেষ করে যারা আগের কমিটিতে পদ পাননি তাদের পদ পাওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়লে চরম নাখোশ হন তারা।
×