ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

কোথাও জঙ্গীবাদের সামান্য আলামত পেলে খবর দিন ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১৩:৩৯, ৩০ এপ্রিল ২০১৯

কোথাও জঙ্গীবাদের সামান্য আলামত পেলে খবর দিন ॥ প্রধানমন্ত্রী

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এ ধরনের সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের ঘটনা মেনে নেয়া যায় না। সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এর বিরুদ্ধে দেশের সকল মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের কোথাও এতটুকু জঙ্গী-সন্ত্রাসবাদের আলামত দেখলে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে খবর দিন। আমরা এ ধরনের সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ বাংলাদেশে আর দেখতে চাই না। বাংলাদেশকে আমরা উন্নত ও শান্তির দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। নুসরাত হত্যাকান্ডসহ যৌন নিপীড়নের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে কঠোর আইন প্রণয়ন করা হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারাই এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। জড়িতরা কে কোন্ দলের তা দেখা হবে না। যৌন নিপীড়ন যারা করবেন তাদেরও রেহাই নেই। অনেকেই কঠোর আইনের কথা বলেছেন। আইন রয়েছে। কিন্তু প্রয়োনে কঠোর আইন করতে হয় আমরা করব। তাদের যেন সর্বোচ্চ শাস্তি হয় সেই ব্যবস্থাই আমরা করব। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদ, শ্রীলঙ্কার গির্জা ও হোটেলে সন্ত্রাসী হামলা, ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ এবং এসব সন্ত্রাসী, যৌন নিপীড়নের ঘটনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল সংসদ, সরকার ও নাগরিকদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে আনীত সাধারণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। প্রস্তাবটি সমর্থন করে প্রধানমন্ত্রী শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, শান্তিপূর্ণ দেশ নিউজিল্যান্ডেও নামাজ পড়া অবস্থায় ৫৩ মুসল্লিকে হত্যা করে একজন খুনী ক্যামেরা মাথায় নিয়ে। সে একজন উগ্রবাদী খ্রীস্টান ছিল। জাতীয় ক্রিকেট টিমের সদস্যরা অল্পের জন্য বেঁচে যান। ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাতকে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ যৌন নির্যাতন করে। মামলা প্রত্যাহারের প্রচ- চাপ দেয়া হয়, সাহসী মেয়ে নুসরাত তাতে রাজি হয়নি। এ কারণে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর সেই মেয়েটাকে চরিত্রহীন বানানোর চেষ্টা করা হয়। অধ্যক্ষের সঙ্গে আমাদের দলের কয়েকজন জড়িত ছিল। সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশ দেই, গ্রেফতার করা হয়। কারণ অপরাধ অপরাধীই। সে যে দলেরই হোক। তিনি বলেন, জঙ্গীবাদ শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপী সমস্যা। শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলায় নিষ্পাপ শিশু জায়ান চৌধুরী নিহত হয়। প্রায় ৪২ বিদেশী মারা যায় ওই ভয়াবহ হামলায়। আত্মঘাতী সন্ত্রাসীরা এই হামলা করেছে। এ ধরনের জঘন্য ঘটনার আমরা নিন্দা জানাই। সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রতিটি জনগণকে আহ্বান জানাব, সকলকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে। হলি আর্টিজানে হামলার পর আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। গোয়েন্দা সংস্থা সঠিক সময়ে সংবাদ দিতে পারছে বলেই অনেক জীবন রক্ষা পাচ্ছে। দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোথাও এবং কারও বিরুদ্ধে কোন অস্বাভাবিক ঘটনা দেখলে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা বাহিনীকে জানাবেন, যাতে আমরা পদক্ষেপ নিতে পারি। আমিও ২১ আগস্ট ভয়াল হামলার শিকার হয়েছিলাম। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চাওয়ার অধিকার পর্যন্ত কেড়ে নেয়া হয়েছিল, খুনীদের পুরস্কৃত করা হয়েছিল। যে দেশে খুনীদের পুরস্কৃত করা হয় সে দেশে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ বৃদ্ধি পাবে, এটাই স্বাভাবিক। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রহসনের নির্বাচন করে খালেদা জিয়া খুনী রশিদকে বিরোধী দলের আসনে বসিয়েছিলেন। জিয়া-এরশাদও খুনীদের পুরস্কৃত করেছে। সংসদ নেতা বলেন, কোন আপনজন মারা গেলে তারা বিচার চায়, কিন্তু আমরা যারা পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছিলাম, আপনজনদের বিচার চাওয়ার অধিকার আমাদের ছিল না। বুকে পাথর বেঁধে সংগ্রাম করেছি, ক্ষমতায় এসে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করিনি। ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের ব্যবস্থা করেছি। আর এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশে ঘটুক, তা চাই না। সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ মোকাবেলা দেশেও যেমন করতে হবে তেমনি সারাবিশ্বে জনমত গড়ে তুলতে হবে। নুসরাত হত্যাকা- প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষক পিতার সমতুল্য। কিন্তু শিক্ষক যদি রক্ষক না হয়ে ভক্ষক হয়, তবে বলার কী থাকে। যারাই এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে, কে কোন্ দলের তা দেখা হবে না। যৌন নিপীড়ন যারা করবেন তাদেরও রেহাই নেই। অনেকেই কঠোর আইনের কথা বলেছেন। এর জন্য কঠোর আইন করতে হয় প্রয়োজনে আমরা করব। সর্বোচ্চ শাস্তি হয় সেই ব্যবস্থা আমরা করব। আর জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব, জঙ্গীবাদ দমনে যা যা করার দরকার তা করা হবে। তিনি বলেন, যারা এ ধরনের হামলা করে তাদের কোন ধর্ম নেই। যারা এসব করে তারা নিজের ধর্মও মানে না। আল্লাহ-রাসুল মানলে তারা নিজেরা হত্যা করত না। ইসলাম ধর্ম পবিত্র ও শান্তির ধর্ম। কে মুসলমান, কে মুসলমান নন তা বিচার করার দায়িত্ব কারও নেই। কোরানে এটা বলা নেই, কে মুসলমান কে মুসলমান নয় তার বিচার মানুষ করবে। এই বিচার করবেন আল্লাহ। এ ধরনের বিচার যে করতে যায় সে তো আল্লাকেই মানে না। তাই শান্তির ধর্মকে কলুষিত করা; এটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালেও বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে নির্মমভাবে মানুষ হত্যা করেছে, মা-বোনদের সম্ভ্রম কেড়ে নিয়েছে। বিএনপি-জামায়াত যদি অগ্নিসন্ত্রাস করে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা না করত, তবে ওই অধ্যক্ষের মাথায় হয়ত নুসরাতকে ওইভাবে পুড়িয়ে হত্যার চিন্তা আসত না। তাই এসব সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ ও অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশবাসীর প্রতি পুনরায় আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। মানুষকেও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। কোথাও জঙ্গী-সন্ত্রাসের সামান্যতম আলামত পেলে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে জঙ্গী-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী জনমত গড়ে তুলতে হবে। আর যেন কোন সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ না থাকে, বাংলাদেশকে উন্নত ও শান্তির দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
×