ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

মাত্র ৩৫ ভাগ টিকেট থাকবে কাউন্টারে, কালোবাজারিরা আরও বেশি উৎসাহিত

স্টেশনেই যত অনিয়ম, আসছে টিকেটের মোবাইল এ্যাপস

প্রকাশিত: ০৯:০২, ২৮ এপ্রিল ২০১৯

স্টেশনেই যত অনিয়ম, আসছে টিকেটের মোবাইল এ্যাপস

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ টিকেট কালোবাজারি ঠেকাতে আজ রবিবার থেকে আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট বিক্রিতে আসছে মোবাইল এ্যাপস। এতে মোবাইল থেকে ৫০ ভাগ টিকেট বিক্রি করতে হবে। বাকি ৫০ ভাগ থেকে ভিআইপি ১০ ভাগ ও প্রতিবন্ধী ৫ ভাগ কোটা বাদ দিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকাদের মাঝে ৩৫ ভাগ টিকেট বিক্রি হবে। কিন্তু এর আগে মোবাইলে ২৫ ভাগ টিকেট বিক্রি হতো। ভিআইপি ও প্রতিবন্ধী কোটার ১৫ ভাগ টিকেট বাদ দিয়ে বাকি ৬০ ভাগ টিকেট বিক্রি হতো। এবার কালোবাজারিরা আরও বেশি উৎসাহিত হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কারণ কালোবাজারিরা বিভিন্ন অপারেটরের মোবাইল সিমের মাধ্যমে টিকেট কালোবাজারে বিক্রি করতে আরও বেশি সুযোগ পাবে। এদিকে, চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে টাকার বিনিময়ে গাড়ি পার্কিং করতে বাধ্য করা হচ্ছে। এছাড়াও গাড়ি পার্কিংয়ের স্থানে ভাড়ায়চালিত বাস, ট্রাক, মিনি ট্রাক ও পিকআপ ঠাঁই পাচ্ছে। অপরদিকে, স্টেশনের উত্তর পার্শ্বে থাকা পাবলিক টয়লেট ব্যবহারের বিপরীতে ১০ টাকা নেয়া হচ্ছে। অথচ দেশের কোথাও পাবলিক টয়লেট ব্যবহারে ৫ টাকার বেশি নিচ্ছে না। ট্রেন পরিচালন বিভাগের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে, ময়মনসিংহগামী নাসিরাবাদ এক্সপ্রেসে মাত্র দুটি কোচ যাত্রীদের জন্য সরবরাহ করছে পরিচালন বিভাগ। আর সিলেটগামী জালালাবাদ এক্সপ্রেসে মাত্র তিনটি যাত্রীবাহী কোচ লাগানো হয়। এসব কোচ আবার দখল বাণিজ্য চালায় টোকাই ও আরএনবি সদস্যরা। আর এনবির সাদেকুর নামের এক কনস্টেবল প্রতিনিয়ত স্টেশনের পণ্য পরিবহনে আসা ভ্যানগাড়ি থেকে অর্থ আদায় করছে। এ বিষয়ে সাদেকুরের বিরুদ্ধে এএসআই জনৈক শওকতকে ছবিসহ মৌখিক করার পরও কোন পদক্ষেপ নেননি তিনি। রেল স্টেশনে প্রতারক, টিকেট কালোবাজারি, অসাধু ক্যাটারিং সার্ভিস, বুকিংকৃত মালামালের নিরাপত্তার অভাব ও যাত্রীদের অনিরাপদ যাত্রা বছরের পর বছর চলে আসছে ট্রেন সার্ভিস সিস্টেমে। নতুন করে গাড়ি পার্কিং ও পাবলিক টয়লেটে হয়রানির বিষয়টি উঠে এসেছে। এসব অনিয়ম আদৌ ঘুচাতে পারেনি রেল কর্তৃপক্ষ। প্রতিবছরই পদক্ষেপ নেয়া হয় রেল সেবা সপ্তাহ পালনের। বিভিন্ন সমস্যাগুলো এক সপ্তাহের জন্য দূরীকরণের চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বছরের বাকি ৫১ সপ্তাহই আগের অনিয়মে ফিরে যায়। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে ঢাকঢোল পিটিয়ে সেবা সপ্তাহ পালনের হেতু কি? অভিযোগ রয়েছে, রেলের বাণিজ্যিক ও পরিচালন বিভাগের সমন্বয়ে টাস্কফোর্সের মনিটরিংয়ের কারণেই কয়েকদিনের জন্য সেবা সপ্তাহের নামে সমস্যা দূর হলেও বছরের বাকি ৫১ সপ্তাহ চলতে থাকে চরম অনিয়ম, দুর্নীতি ও নানা অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে। ফলে সেবা বঞ্চিত হয় গ্রাহক ও যাত্রী সাধারণ। অথচ রেলের পরিবহন ও যাত্রী সেবাই আয়ের একমাত্র উৎস। এ আয়কে কেন্দ্র করে প্রতিবছর ট্রেনের পরিচালন বিভাগসহ প্রত্যেকটি বিভাগ সচল রাখতে ৩৫ হাজারেরও বেশি খুচরা যন্ত্রাংশ ক্রয় করা হয়। আরও অভিযোগ রয়েছে, বছরের প্রায় প্রতিদিনই চরম ভোগান্তিতে থাকে যাত্রী সাধারণ। কোন ট্রেনের যাত্রাই যেন ভোগান্তির পরিবর্তে আরামদায়কে রূপ নেয় না। সাধারণ কোচ থেকে শুরু করে ভিআইপি কোচগুলোতেও যাত্রীদের সঙ্গে চলে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি), রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি), স্টেশনের কর্মচারীরাই যেখানে স্টেশন কম্পাউন্ডে নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকে সেখানে বিভিন্ন সময়ে কয়েকদিনের মনিটরিং সেল বা টাস্কফোর্স আইওয়াশ ছাড়া অন্য কিছু নয় বলে দাবি করেছেন যাত্রী সাধারণ।
×