ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কমিউনিটি ক্লিনিক

প্রকাশিত: ০৮:৩৯, ২৮ এপ্রিল ২০১৯

কমিউনিটি ক্লিনিক

সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার শুভবোধ থেকে প্রায় দুই দশক আগে দেশে শুরু হয় কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্যক্রম। সরকার ও জনগণের সম্মিলিত অংশীদারিত্বে এই কার্যক্রম সফলভাবে এগিয়ে চলেছে। একইসঙ্গে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল জাতি গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে জনসাধারণের স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত কমিউনিটি ক্লিনিক ধারণা এবং এর বিস্তৃতি একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এরই মধ্যে এই উদ্যোগের সুফল জনগণ পেতে শুরু করেছে। সরকার এই কমিউনিটি ক্লিনিকের উন্নয়নে বাড়তি মনোযোগ স্থাপন করেছে। তার ফলস্বরূপ গত অক্টোবরে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন পাস হয়েছে। আইনী বা সাংগঠনিক কাঠামোর দুর্বলতার জন্য শুরুর দিকে এই কার্যক্রমের যাত্রায় কিছুটা সমস্যা থাকলেও এখন আর তা নেই। সরকার স্বাস্থ্যসেবা গ্রামীণ জনপদের পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। সাধারণ চিকিৎসা, জন্মনিয়ন্ত্রণ, ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি, আমাশয়, সাধারণ জ্বরজারিসহ ছোটখাটো রোগের চিকিৎসা যেন সাধারণ মানুষ বিনামূল্যে ওষুধসহ পায়, সে ব্যবস্থা করতে চায়। নিঃসন্দেহে এ ধরনের মনোভাব অভিনন্দনযোগ্য। এটি স্বাস্থ্যসেবার আমূল পরিবর্তনে ভূমিকা রাখবে বলে মানুষ আশাবাদী। গত এক দশকে ৬২ কোটি ৫৭ লাখ সুবিধাবঞ্চিত মানুষ ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেছেন কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে। বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে ২৩০ ধরনের ওষুধ। সব মিলিয়ে সরকার ১৪ হাজার ৮৯০টি ক্লিনিক নির্মাণে পরিকল্পিতভাবে কাজ করছে। বর্তমানে প্রতিটি ক্লিনিকে একজন করে কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডার সর্বসাধারণকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ প্রদান করছেন। একই সঙ্গে সপ্তাহের তিন দিন পুষ্টি বিষয়ে এবং তিন দিন পরিবার কল্যাণ বিষয়ে সেবা তথা ধারণা দেয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল জাতি গঠনে সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে সদিচ্ছার প্রকাশ লক্ষণীয়। দেশের স্বাস্থ্যসেবার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে নজির গড়েছে ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’। কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়েও প্রশংসিত। বিশ্বের অনেক দেশ কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম রোল মডেল বিবেচনায় নিয়ে নিজ দেশে তা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে কমিউনিটি ক্লিনিকে দেশে প্রতিদিন সাত লাখ মানুষ চিকিৎসা নিচ্ছে। সম্প্রতি কমিউনিটি ক্লিনিকের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য উঠে আসে। বর্তমানে দেশে ১৩ হাজার ৭৪৩টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) নতুন ধরনের কর্মী। প্রতিটি ক্লিনিকে শুক্রবার ও সরকারী ছুটির দিন ব্যতীত সিএইচসিপিরা দিনব্যাপী সেবা দিয়ে থাকেন। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি মডেল হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার হ্রাসের ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবিলায় তৃণমূল পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। দেশের সব কমিউনিটি ক্লিনিক যেন গ্রামের দরিদ্র মানুষকে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারে, এ জন্য সরকার, উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি গ্রুপ ও সাপোর্ট গ্রুপসহ সংশ্লিষ্ট সবাই আরও উদ্যোগী হবেন, এ প্রত্যাশা দেশবাসীর।
×