ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

শব-ই-বরাত নিয়ে জটিলতা অবসানে ১১ সদস্যের সাব-কমিটি

প্রকাশিত: ১০:০৩, ১৪ এপ্রিল ২০১৯

 শব-ই-বরাত  নিয়ে জটিলতা অবসানে ১১ সদস্যের সাব-কমিটি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশেষ বৈঠক ডেকেও পবিত্র শব-ই-বরাতের চাঁদ দেখা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার অবসান হয়নি। শাবান মাসের চাঁদ দেখা নিয়ে বিতর্কের অবসান ঘটাতে শেষ পর্যন্ত বৈঠকে ১১ সদস্যের একটি সাব কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি আগামী ১৭ এপ্রিলের মধ্যে শাবান মাসের চাঁদ দেখা এবং শব-ই-বরাতের তারিখ নির্ধারণ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে। তবে কমিটির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানোর আগ পর্যন্ত ২১ এপ্রিল রাতে শব-ই-বরাত পালনের যে ঘোষণা চাঁদ দেখা কমিটি ৬ এপ্রিল দিয়েছে তা বহাল থাকবে। এর আগে শনিবার বেলা ১১টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভা কক্ষে বিশেষ বৈঠক আহ্বান করা হয়। প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মোঃ আব্দুল্লাহ বলেন, বিষয়টা যেহেতু ধর্মীয়, যারা আমাদের দেশে সব চাইতে জ্ঞানবান আলেম, তাদের ওপর দায়িত্বটা দেয়া হয়েছে। তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন। গত ৬ এপ্রিল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার পরে শাবান মাসের চাঁদ দেখা পর্যালোচনা এবং পবিত্র শব-ই-বরাতের তারিখ নির্ধারণে বৈঠক বসে। বৈঠকে চাঁদ দেখা পর্যালোচনা শেষে ঘোষণা দেয়া হয় ওইদিন দেশের আকাশে কোথাও শাবান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে রজব মাস ৩০ দিন পূর্ণ হবে। সে অনুযায়ী ২১ এপ্রিল রাতে পালিত হবে লাইলাতুল বরাত। কিন্তু ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এই সিদ্ধান্তে আপত্তি জানায় ধর্মীয় একটি সংগঠন। তারা দাবি করে ৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় শাবান মাসের চাঁদ দেখা গেছে। এই হিসাব অনুযায়ী ২০ এপ্রিল রাতে পালিত হবে লাইলাতুল বরাত। ওই ধর্মীয় সংগঠনের পক্ষ থেকে এই দাবি তোলার পর শনিবার বিশেষ সভা ডাকে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর ধর্মপ্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করেনি। ভবিষ্যতেও করবে না। চাঁদ দেখার বিষয়টি যেহেতু ইসলামী শরীয়তের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই এ বিষয়ে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে বিশিষ্ট আলেম-ওলামাগণ সুপারিশ প্রদান করবেন। জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি আলেম-ওলামাগণের সুপারিশ অনুসারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানায়, মারকাযুদ দাওয়াহ-এর শিক্ষা সচিব মুফতী মাওলানা আবদুল মালেককে প্রধান করে উলামায়ে কেরামের সমন্বয়ে ১১ সদস্যের একটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। উক্ত কমিটি যারা চাঁদ দেখেছেন বলে দাবি করেছেন তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ ও যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে আগামী ১৭ এপ্রিল জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি বরাবর সুপারিশ প্রদান করবেন। তবে কমিটির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়ার আগ পর্যন্ত ২১ এপ্রিল শব-ই-বরাত পালনের যে ঘোষণা চাঁদ দেখা কমিটি দিয়েছে তা বহাল থাকবে। দেশে সাধারণ, আরবি মাস হিসাব গণনা করা হয় চাঁদ দেখার সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে। এ কারণে প্রতি মাসে আরবি মাসের তারিখ নির্ধারণের জন্য চাঁদ দেখার জন্য কমিটির নেতৃত্বে সভা বসে। কমিটি যে সিদ্ধান্ত নেয় সেই অনুযায়ী আরবি মাসের তারিখ গণনা করা হয়ে থাকে। কিন্তু ৬ এপ্রিল চাঁদ দেখা কমিটি শাবান মাসের চাঁদ দেখা না যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানালে বিষয়টি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। ‘মজলিসু রুইয়াতুল হিলাল’ নামের ওই সংগঠনের নেতারা গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, গত ৬ এপ্রিল শাবানের চাঁদ দেখা গেছে এবং সে বিষয়ে প্রশাসনকে অবহিত করা হলেও সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হয়নি। সংগঠনের সভাপতি আল্লামা আবুল বাশার মুহম্মদ রুহুল হাসান বলেন, এবার ২৯ রজব তারিখের বাদ মাগরিব দেশের বিভিন্ন স্থানে পবিত্র শাবান মাসের চাঁদ দেখা গেলেও তারা সেটাকে আমলে না নিয়ে মুসলমানগণের বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন। এবং ভুল সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন। যা শরীয়ত বিরোধী। তারা জানান, গত ৬ এপ্রিল খাগড়াছড়িতে চাঁদ দেখার পর অনেকে জেলা প্রশাসককে ফোনে জানিয়েছিলেন। ডিসি সাহেবকে ফোন করলে ডিসি সাহেব বলেছেন, চাঁদ দেখার ঘোষণা হয়ে গেছে। তিনি অভিযোগ করেন ওইদিন ‘চাঁদ দেখার’ বিষয়টি পর্যালোচনা না করে তড়িঘড়ি করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছিল। শব-ই-বরাতের ‘ভুল’ তারিখ ঘোষণার অভিযোগে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির পদত্যাগ দাবি করেছেন সংগঠনটির নেতারা। এদিকে ধর্মীয় ওই সংগঠনটির সংবাদ সম্মেলনের পর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ওইদিন সন্ধ্যায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে শনিবার জরুরী বৈঠক আহ্বানের কথা জানানো হয়। সেই অনুযায়ী শনিবার এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। শুধু মজলিসু রুইয়াতুল হিলাল নয় ৬ এপ্রিল চাঁদ দেখা যাবে এ বিষয়ে এ্যাসট্রোনমিকাল সোসাইটি নামে একটি বিজ্ঞান সংগঠনের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিমাসে চাঁদের গাণিতিক হিসাব আগেই প্রকাশ করে থাকে। তাদের হিসাব অনুযায়ী শাবান মাসের আগাম চাঁদ দেখার বিষয়ে আগেই প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় গত ৫ এপ্রিল ২০১৯, শুক্রবার দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে চাঁদের অমাবস্যা কলা পূর্ণ করে নতুন চাঁদের জন্ম হয়। চাঁদটি ওইদিন সন্ধ্যা ৬টা ১৬ মিনিটে সূর্যাস্তের সময় দিগন্ত রেখা বরাবর ২৭২ ডিগ্রী দিগংশে অবস্থান করে এবং প্রায় ৩ মিনিট পরে সন্ধ্যা ৬টা ১৮ মিনিটে অস্ত যায়। তাদের হিসাব অনুাযায়ী ওইদিন বাংলাদেশের আকাশে চাঁদ দেখা যায়নি। চাঁদটি পরদিন ৬ এপ্রিল, শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ১৬ মিনিটে সূর্যাস্তের সময় দিগন্ত রেখা থেকে ১১ ডিগ্রী উপরে ২৭২ ডিগ্রী দিগংশে অবস্থান করে এবং প্রায় ৫৫ মিনিট দেশের আকাশে অবস্থান শেষে সন্ধ্যা ৭টা ১১ মিনিটে ২৭৭ ডিগ্রী দিগংশে অস্ত যায়। এই সময় চাঁদের ১% অংশ আলোকিত থাকে। তাদের হিসাব অনুযায়ী এদিন দেশের আকাশ মেঘমুক্ত থাকলে চাঁদ দেখা যাবে। কিন্তু জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি পর্যালোচনা শেষে জানায় ওইদিন শেষে আকাশে কোথাও চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে ২১ এপ্রিল রাতে শব-ই-বরাত পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বির্তক সৃষ্টি হওয়ায় জটিলতা নিরসনে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
×