ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইতোমধ্যে দু’হাজার শিল্পে নতুন সংযোগ দেয়ার অনুমতি

এলএনজি সরবরাহ বাড়ায় চট্টগ্রামে গ্যাস সঙ্কট নেই

প্রকাশিত: ১১:১৬, ৯ এপ্রিল ২০১৯

এলএনজি সরবরাহ বাড়ায় চট্টগ্রামে গ্যাস সঙ্কট নেই

রশিদ মামুন ॥ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস এলএনজি সরবরাহের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় চট্টগ্রামে গ্যাস সঙ্কটের সমাধান হয়েছে। দেশের প্রথম কোন অঞ্চল হিসেবে চাহিদার পুরো গ্যাস সরবরাহ পাচ্ছে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের ৫ লাখের বেশি গ্রাহক। গত মার্চে পেট্রোবাংলার দেয়া হিসাব অনুযায়ী গত পহেলা মার্চ দেশে এলএনজি সরবরাহ করা হয়েছে ৪০৩ মিলিয়ন ঘনফুট। পরদিন থেকেই প্রতিদিন ৫শ’ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি এলএনজি সরবরাহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ মার্চ এলএনজির সরবরাহ কিছুটা কম হলেও ৪৮৪ মিলিয়ন ঘনফুটের নিচে নামেনি। এছাড়া অন্য সব দিনই ৫শ’ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি এলএনজি সরবরাহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৩ মার্চ সর্বোচ্চ ৫৩৪ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর আগে চট্টগ্রাম এলাকায় চাহিদার অর্ধেক গ্যাস সরবরাহ পেত। এতে চট্টগ্রামের শিল্প খাতে স্থবিরতা তৈরি হয়েছিল। চট্টগ্রাম এলাকায় বড় বিদ্যুত কেন্দ্র এবং সারকারখানায়ও গ্যাস সঙ্কটের কারণে দিনের পর দিন উৎপাদন বিঘিœত হতো। গত আগস্ট থেকে এলএনজি সরবরাহ শুরু হলে চট্টগ্রামে গ্যাস ঘাটতি কমতে থাকে। মার্চে এসে তা একেবারে চলে গেছে। এখন চট্টগ্রামকে চাহিদার পুরো গ্যাস দেয়া সম্ভব বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলা। চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহকারী কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খয়েজ আহমেদ মজুমদার জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের চাহিদা প্রতিদিন ৫শ’ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। কিন্তু চট্টগ্রামের দুই সারকারখানা বন্ধ থাকায় এখন প্রতিদিন চাহিদা একশ’ মিলিয়ন ঘনফুট কমে ৪শ’ মিলিয়ন ঘনফুটে দাঁড়িয়েছে। এর পুরোটাই সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান তিনি। দাবি করেন তার এলাকায় এখন আর কোন গ্যাস সঙ্কট নেই। এর আগে চট্টগ্রামের বড় বড় বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো মাসের পর মাস বন্ধ থাকত। কেবলমাত্র গ্রীষ্মে সারকারখানা বন্ধ করে গ্যাস দিলেই বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো আংশিক চালানো সম্ভব হতো। এখন এই সঙ্কট থেকে বের হয়ে এসেছে চট্টগ্রাম। গ্যাস ঘাটতি না থাকায় গ্রীষ্মে চট্টগ্রামে বিদ্যুত পরিস্থিতিও স্বাভাবিক থাকার প্রত্যাশা করছে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড। গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি জিটিসিএল বলছে এখন চট্টগ্রামে সরবরাহের পর বাকিটা জাতীয় গ্রিডে ঢাকায় দেয়া হচ্ছে। এতে দেশের মধ্যাঞ্চলের গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ কিছুটা হলেও বেড়েছে। তবে সঙ্কটের পুরো সমাধান হয়নি। দেশে এখন দৈনিক গ্যাসের চাহিদা রয়েছে তিন হাজার ৮শ’ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে দৈনিক সরবরাহ হচ্ছে তিন হাজার ২শ’ মিলিয়ন ঘনফুট। অর্থাৎ এখনও সরবরাহে ঘাটতি রয়ে গেছে ৬শ’ মিলিয়ন ঘনফুট। তবে সরকার চেষ্টা করছে আমদানি করে এ বছরের মধ্যেই ঘাটতি কমিয়ে আনতে। নতুন চাহিদা তৈরি না হলে আগামী বছর থেকে গ্যাসের ঘাটতিতে খুব একটা পড়তে হবে না। গ্যাস বিতরণ কোম্পানির মধ্যে তিতাস সর্বোচ্চ গ্যাস ঘাটতি মোকাবেলা করছে। তিতাসের চাহিদা বেশি হওয়ায় এই ঘাটতি। তিতাসের প্রতিদিনের চাহিদার তুলনায় অন্তত ৩শ’ মিলিন ঘনফুট গ্যাস কম পাচ্ছে। অন্যদিকে জালালাবাদ, বাখরাবাদ, পশ্চিমাঞ্চল ও সুন্দরন গ্যাস বিতরণ কোম্পানিতে ৩শ’ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে বড় গ্যাস ক্ষেত্র না পাওয়ায় কয়েক বছর ধরেই দেশে চরম গ্যাস সঙ্কট চলছে। এজন্য সরকার আমদানি করে গ্যাসের চাহিদা মোকাবেলা করার চিন্তা থেকে এলএনজি আমদানি করছে। এলএনজি আমদানির ফলে প্রতিদিন চট্টগ্রাম এলাকায় যে ৩শ’ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দেয়া হচ্ছিল তা এখন আর দিতে হচ্ছে না। এই গ্যাস অন্য বিতরণ কোম্পানিতে ভাগ করে দেয়া হচ্ছে। এরপরও বিতরণ কোম্পানিগুলোর চাহিদা রয়ে গেছে। সূত্র বলছে এলএনজি আসাতে দুই হাজার শিল্প সংযোগের অনুমতি দিয়েছে সরকার। এতে নতুন করে আরও গ্যাসের চাহিদা তৈরি হয়েছে। এছাড়া নতুন কয়েকটি বিদ্যুত কেন্দ্রেও এলএনজি আসার পর চালু হয়েছে। সঙ্গত কারণেই সরবরাহ বাড়লেও তার খুব একটা প্রভাব চট্টগ্রামের বাইরে টের পাওয়া যাচ্ছে না। এজন্য আরও কিছু দিন অপেক্ষার পরামর্শ দিচ্ছে পেট্রোবাংলা।
×