ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইউরোপের বাজারে

প্রকাশিত: ০৯:১০, ৬ এপ্রিল ২০১৯

 ইউরোপের বাজারে

বাংলাদেশ চায় ইউরোপের বাজারজুড়ে তার উৎপাদিত পণ্য শোভিত হোক এবং একইসঙ্গে ক্রেতাদের মধ্যে ব্যাপক চাহিদা তৈরি হোক। এই চাওয়া অযৌক্তিক নয়। এমনকি অকল্পনীয়ও নয়। বাংলাদেশের রফতানির সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপ। মোট রফতানির ৫৮ শতাংশ যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৮ দেশে। এছাড়া বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের রফতানি করা পোশাক পণ্যের মধ্যে ইউরোপেই যায় ৬২ শতাংশ। এ পরিসংখ্যান স্পষ্ট করে যে, ইউরোপের বাজার বাংলাদেশের জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ। এক হিসাবে দেখা যায়, ইউরোপের দেশগুলোতে পোশাক পণ্য আমদানি দুই দশমিক চার শতাংশ হারে বাড়লেও সেখানে বাংলাদেশের রফতানি বেড়েছে ১২ শতাংশ হারে। এমনকি বৈশ্বিক মন্দায়ও সেখানে বাংলাদেশের রফতানি না কমে বরং আরও বেড়েছে। যা আশার আলো দেখায় এ দেশীয় রফতানিকারকদের মধ্যে। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে এককভাবে সবচেয়ে বেশি পোশাক রফতানি হয় জার্মানিতে। এরপর রয়েছে যুক্তরাজ্য, স্পেন, ফ্রান্স, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল, বেলজিয়ামসহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ইউরোপের দেশগুলোতে বাংলাদেশের মোট রফতানি ছিল দুই হাজার এক শ’ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ। এর মধ্যে এক হাজার ৯৬০ কোটি ডলারই ছিল পোশাক শিল্পপণ্যে। অর্থাৎ ওই বাজারে মোট রফতানি পণ্যের মধ্যে গার্মেন্টস পণ্যের অবদান ৯২ শতাংশ। যুক্তরাজ্য ইইউ থেকে বেরিয়ে গেলেও রফতানির ক্ষেত্রে কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়েনি। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইইউ বড় ভূমিকা রেখে আসছে। দীর্ঘদিন থেকেই স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অস্ত্র বাদে সব ধরনের রফতানি পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে আসছে। বাংলাদেশের অন্য প্রতিযোগী দেশগুলো থেকে পণ্য নেয়ার ক্ষেত্রে ইউরোপ নির্দিষ্ট হারে শুল্ক ধার্য করেছে। এই সুবিধা থাকায় বাংলাদেশ প্রতিযোগী দেশগুলোর চাইতে অনেক এগিয়ে গেছে। এক সময় ‘রুলস অব অরিজিন’-এর শর্ত পরিপালন করতে হতো বাংলাদেশকে। এক সময় এই শর্ত শিথিল হলে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা আরও বেড়ে যায়। এসব কারণেই সেখানে বাংলাদেশের পোশাক রফতনিকারকরা আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়তি সুবিধা পেয়েছেন। বর্তমানে অবশ্য বাংলাদেশের সামনে আরও প্রায় এক হাজার ৭৪০ কোটি ডলারের পোশাকের রফতানি বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে ইউরোপের বাজারেই রয়েছে আরও এক হাজার ১৩০ কোটি ডলার বাড়ানোর সুযোগ। বৈশ্বিক পোশাকের বাজারের ৪৫ শতাংশই ইউরোপের দেশগুলোতে। এর মধ্যে এগারো হাজার ছয় শ’ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে ইউরোপের বাইরে অন্য দেশগুলো হতে। এককভাবে চীন থেকে আমদানি করেছে ২৩ শতাংশ। যদিও সম্প্রতি বেশকিছু কারণে চীন থেকে পোশাক রফতানি কমতির দিকে। ফলে চীনের ছেড়ে দেয়া এ সম্ভাবনা কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের সামনে। অবশ্য এতসব সম্ভাবনার মধ্যেও বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পর। ২০২৪ সালে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাবে যখন, তখন ইউরোপের বাজারে শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা পাওয়া যাবে না। সেজন্য জিএসপি প্ল্যানের আওতায় বেশকিছু শর্ত পূরণের বাধ্যবাধকতা আসবে। ওই শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে শ্রমিক হারে শুল্ক পরিশোধ করে পণ্য প্রবেশ করতে হবে। বাড়তি এ শুল্ক পরিশোধ করতে হলে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে। এতে করে বছরে প্রায় ১৬০ কোটি ডলারের রফতানি কমে যেতে পারে ইউরোপে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে এখনই মনোযোগ প্রদান জরুরী। ইউরোপের বাজার যেন সঙ্কুচিত হয়ে না আসে বাংলাদেশের জন্য, সেজন্য এখন থেকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করাই হবে সঙ্গত।
×