ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

১৫ দিন পর জমা দেয়া হবে মন্ত্রণালয়ে

নিরাপদ সড়কের ১১১ দফা সুপারিশের খসড়া চূড়ান্ত

প্রকাশিত: ১০:৫৬, ৪ এপ্রিল ২০১৯

নিরাপদ সড়কের ১১১ দফা সুপারিশের খসড়া চূড়ান্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সড়ক দুর্ঘটনা রোধ ও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টায় সাবেক নৌমন্ত্রী-শ্রমিকনেতা শাজাহান খানের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি ১১১ দফা সুপারিশসহ প্রতিবেদনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। বুধবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে খসড়া সুপারিশের ওপর আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এসব সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়। বৈঠকে ২৩ সদস্যের কমিটির বেশিরভাগই অনুপস্থিত ছিলেন। জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের ২৬তম সভায় সড়ক পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা জোরদার ও দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সুপারিশ প্রণয়নে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সাবেক মন্ত্রী ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খানকে প্রধান করে কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি ইতোমধ্যে ১১১ সুপারিশ তৈরি করে। যা বাস্তবায়ন করবে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গঠিত একাধিক টাস্কফোর্স। খসড়া প্রতিবেদনটি এখন বিআরটিএ ওয়েবসাইটে দেয়া হবে সবার মতামত নেয়ার জন্য। ১৫ দিন পর তা সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন আকারে জমা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন কমিটির প্রধান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি সংসদ সদস্য শাজাহান খান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের চলমান সমসাময়িক ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হল সড়ক দুর্ঘটনা এবং সড়কের নিরাপত্তা। এর সমাধান করা এখন ‘নৈতিক দায়িত্ব’ হয়ে পড়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ১৫ দিনের সময় দিয়ে সুপারিশগুলো জনসাধারণের মতামতের জন্য ওয়েবসাইটে দিয়ে দেব। ওই ১৫ দিনের মধ্যে আমরা আশা করি মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারব। তার মতামত নিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেব। কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, ওয়েবসাইটে প্রস্তাবিত সুপারিশের বাইরে যেসব মতামত আসবে সেগুলো যাচাই-বাছাই হবে। এরমধ্যে প্রয়োজনীয় ও গুরুত্ব বিবেচনায় মতামত প্রাধান্য দিয়ে প্রস্তাবে যুক্ত করা হবে। এরপর জমা দেয়া হবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে। সড়ক পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা আনা এবং দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে গঠিত কমিটি’র ওই খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস ও শৃঙ্খলা বৃদ্ধির জন্য রাজনৈতিক অঙ্গীকার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। গতবছর জুলাই মাসে দুই কলেজশিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর সারা দেশে শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনে পরিবহন খাতের বিভিন্ন স্তরে বিশৃঙ্খলার বিষয়গুলো নতুন করে সামনে চলে আসে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সে সময় সড়ক দুর্ঘটনাকে সরকারের ‘সবচেয়ে বড় দুর্ভাবনার বিষয়’ হিসেবে বর্ণনা করেন। সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খোদ সরকারপ্রধান মন্ত্রিসভার বৈঠকে বেশ কিছু নির্দেশনা দেন। এর ধারাবাহিকতায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি পরিবহন মালিক, শ্রমিক, পুলিশ, গবেষক ও বিআরটিএসহ বিভিন্ন পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে এই কমিটি করা হয়। তবে বুধবার খসড়া চূড়ান্ত করার দিনে ২৩ সদস্যের ওই কমিটির ১৪ জনই অনুপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে মতামত দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে পত্রিকা, টেলিভিশনসহ ৪০টি সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হলেও কেউ যাননি। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শাজাহান খান বলেন, সড়কে নিরাপত্তার বিষয়টি শুধু সড়ক পরিবহন মালিক বা সরকারের নয়, সারাদেশের মানুষের। এজন্য সবার মতামত চাওয়া হয়েছিল। আমরা বিভিন্ন পত্রিকা ও সংবাদ সংস্থার সম্পাদক, বার্তা সম্পাদককে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। তারা আসলে আমরা খুশি হতাম। যারা আসেন নাই তাদের নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। তারপরও যেহেতু আমরা ওয়েবসাইটে দিয়ে দিচ্ছি। তাদের কোন মতামত থাকলে তারা দিতে পারবেন। আমরা সেটা বিবেচনায় নিয়ে তা আলোচনা করব। এ কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্বে রয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মশিউর রহমান রাঙ্গা, যিনি জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবং বর্তমান সংসদের বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ। সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত, সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চনও সদস্য হিসেবে আছেন এই কমিটিতে। ১৩ মার্চ পর্যন্ত কমিটি পাঁচটি বৈঠকের মধ্য দিয়ে ১১১ দফা সুপারিশ ঠিক করে। যার মধ্যে বেশিরভাগই হলো আগের কমিটির সুপারিশ। পুলিশ, বিআরটিএ, পরিবহন মালিক শ্রমিক, সুশীল সমাজ, প্রকৌশল বিভাগসহ বিভিন্ন সেক্টরের প্রতিনিধিরা বৈঠকে মতামত তুলে ধরেন। সকলের মতামতের ভিত্তিতে চার প্রক্রিয়ায় ২০২৪ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে। এরমধ্যে ২০১৯ সালের মধ্যে আশু করণীয়, ২০১৯-২১ সালের মধ্যে স্বল্প মেয়াদী, ২০১৯-২০২৪ সালের মধ্যে দীর্ঘ মেয়াদী ও চলমান প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন সুপারিশ বাস্তবায়নের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকার এক বা একাধিক ট্রাস্কফোর্স গঠন করবে। যারা প্রতি চার মাসে একবার অগ্রগতি মনিটরিং করবে। প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে সড়ক নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাবও রয়েছে।
×