ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জটিলতার অবসান

প্রকাশিত: ১০:৩৮, ৪ এপ্রিল ২০১৯

জটিলতার অবসান

গত সাত বছর ধরে বিষয়টির কোন সুরাহা হচ্ছিল না। নানামুখী ভাষ্য, প্রস্তাবের তোড়ে সমাধানের পথ দুরূহ হয়ে পড়ায় জটিলতা ক্রমশ বাড়ছিল। ঐকমত্য তৈরির ক্ষেত্র ছিল সঙ্কুচিত। বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সূচগ্রে মেদিনীর মতো যেন এক অঘোষিত লড়াই চলে আসছিল। সমস্যা যেন পথহারা পথিকের মতো উ™£ান্ত হয়ে দিশাহীন অবস্থায় পৌঁছে যাবার পর ধারণা করা হয়েছিল, আলো এসে ধরা দেবে না আর। কিন্তু সে অন্ধকার অবশেষে হয়েছে দূরীভূত। ব্যবসায়ী ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড মতৈক্যে পৌঁছাতে পেরেছে। এই পথ পাড়ি দিতে সাতটি বছর পার হয়ে গেছে। এজন্য উভয়েই ধন্যবাদ ও অভিনন্দন পেতে পারে। ভ্যাটের হার অতঃপর নির্ধারিত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিদ্যমান জটিলতার অবসান হয়েছে বলা যায়। ভ্যাটের হার নিয়ে কেটে গেছে অমানিশা। এখন হতে পনেরো শতাংশের পরিবর্তে ব্যবসা ও পণ্যভেদে পাঁচ, সাত ও দশ শতাংশ এই তিনটি হারে ভ্যাট আদায় হবে। সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তিকর যে, ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের ওপর কোন ধরনের ভ্যাট আরোপ হচ্ছে না। সুতরাং ভ্যাট নিয়ে আর ভোগান্তির মুখোমুখি হতে হবে না মানুষজনকে। ভ্যাট আইন স্বস্তিকর হয়ে উঠবে দেশবাসীর জন্য। আগামী ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের প্রথম দিন এক জুলাই থেকে ভ্যাট আইন কার্যকর হতে যাচ্ছে। আইনে বহুস্তরের ভ্যাট হার নির্ধারণ হচ্ছে। তিনটি হার নির্ধারণ হওয়ায় ভ্যাট আদায়ের আওতা বাড়তে যাচ্ছে। এতে রাজস্ব আদায়ে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে। ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের চাওয়া ছিল তা-ই। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পনেরো শতাংশ ভ্যাট হার থাকলেও রেয়াত সুবিধার আওতায় অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের গত সাত বছরে বহুবার আলোচনা বৈঠক হয়েছে। ব্যবসায়ীরা পনেরো শতাংশের পরিবর্তে বহুস্তরের ভ্যাটের প্রস্তাব দেন। এই প্রস্তাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তিন স্তরের ভ্যাট হার নির্ধারিত হলো। ভ্যাট আইন ২০১২ বাস্তবায়নে ব্যবসায়ীরাও আগ্রহী। মূল্য সংযোজন কর, সম্পূরক শুল্ক এবং টার্নওভার করারোপের ক্ষেত্র বিস্তৃত করতে সাত বছর আগে জাতীয় সংসদে ভ্যাট আইন-২০১২ পাস হয়। অবশ্য ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার আমলে মূল্যসংযোজন কর আইনে নানাবিধ বিচ্যুতি অনুপ্রবেশ করে, যা একটি মানসম্মত মূল্য সংযোজন কর ব্যবস্থা বাস্তবায়নে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। আওয়ামী লীগ সরকার আমলে এসব বিচ্যুতি দূর করে দেশে একটি মানসম্মত, ব্যবসা ও রাজস্ববান্ধব ভ্যাট ব্যবস্থা বিনির্মাণের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম রীতিনীতি সংবলিত মূল্য সংযোজন কর আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আইন বাস্তবায়নের ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু ওই সময় ব্যবসায়ীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে আইনটি দু’বছরের জন্য স্থগিত করে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে তিনি ব্যবসায়ীদের আস্বস্ত করেন এই বলে যে, আইনের কিছু ধারা সংযোজন-বিয়োজন করে একটি বাস্তবমুখী ভ্যাট আইন করা হবে। ব্যবসায়ীরা যাতে খুশি থাকেন সেইভাবে আইনটি বাস্তবায়ন করবে এনবিআর। এটা বাস্তব যে, পণ্য ও ব্যবসাভেদে বহুস্তর ভ্যাট একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী পদ্ধতি। তবে সর্বক্ষেত্রে সিঙ্গেল ডিজিট ভ্যাট প্রয়োজন। ভ্যাট প্রদান করেন ক্রেতা। এ কারণে ভ্যাটের বিষয়টি সরাসরি ভোক্তার ওপর বর্তায়। ব্যবসায়ীরা অবশ্য চাইছেন ভ্যাটের হার এক অংকের ঘরে রাখতে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই নয়া ভ্যাট পদ্ধতির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। তবে তারা কোন্ খাতে ভ্যাট ও কর নির্ধারণ হবে বা কমানো যায় সে নিয়ে এনবিআরকে পরামর্শ দেবে বাজেট নিয়ে আলোচনাকালে। তাদের পরামর্শ ইতিবাচক ও সুচিন্তিত হবে বলেই ধারণা করা যায়। যেহেতু তাদের সঙ্গে পরামর্শ ও আলোচনা করেই ভ্যাট আইন কার্যকর করা হচ্ছে, তাই তাদের দায়িত্বও বেশি। আগামী বাজেট থেকে ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা যেন সঠিক ও যথাযথভাবে কার্যকর হয়, সেজন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন। জনগণের স্বার্থ যেন উপেক্ষিত না হয় সে বিষয়টিকেও গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।
×